Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
sukur ali mondal

বৃদ্ধাকে খুন করে চেন হাতিয়ে ফের খুন দোকান মালিককে

হাবড়া থানার তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, কলকাতার চিৎপুর এলাকায় সুকুর পালিয়ে গিয়েছিল।

ধৃত সুকুর — ছবি: সুজিত দুয়ারি

ধৃত সুকুর — ছবি: সুজিত দুয়ারি

নিজস্ব সংবাদদাতা 
হাবড়া শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:২৩
Share: Save:

কয়েক দিনের ব্যবধানে হাবড়ায় খুন হয়েছিলেন এবং বৃদ্ধা এবং এক সোনার দোকানের মালিক। সে সময়ে পুলিশের অনুমান ছিল, দু’টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু বছরখানেকের মাথায় তদন্তকারীরা এক যুবককে গ্রেফতার করে দাবি করলেন, দুই খুনেই জড়িত ধৃত সুকুর আলি মণ্ডল।

দত্তপুকুরের বিড়া মেঠোপাড়া এলাকার ওই যুবক হেরোইন, গাঁজা-মদের নেশায় আসক্ত বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, প্রাথমিুক জেরায় জোড়া খুনের কথা স্বীকার করেছে সে। নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়েই সে এই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

২৫ অক্টোবর দুপুরে হাবড়া থানার বিড়া অম্বেদনগর এলাকার বাসিন্দা পুষ্পরানি ঘোষ (৬৬) নিজের বাড়িতে খুন হয়েছিলেন। পুলিশ তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে। বাড়িতে একাই থাকতেন বৃদ্ধা। গলায় ৩৬ গ্রামের একটি সোনার চেন ছিল। সেটি খোওয়া গিয়েছিল। পুলিশ অনুমান করে, ওই সোনার চেনের লোভে তাঁকে কেউ খুন করে থাকতে পারে।

ঘটনার কয়েক দিন পরে বিড়া লক্ষ্মীপুর এলাকায় ১৯ নভেম্বর নিজের সোনার দোকানের মধ্যেই খুন হন রমেশ কর্মকার (৪৪)।

একই এলাকায় পর পর দু’টি খুনের ঘটনার মধ্যে কোনও যোগসূত্র সে সময়ে খুঁজে পাননি তদন্তকারীরা। কিন্তু সুকুর হাতে আসার পরে পুলিশের কাছে ঘটনা ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছে।

বেপরোয়া

বৃষ্টিতে মাথা বাঁচাতে পুষ্পরানির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল সুকুর। গলায় সোনার চেন দেখে বাড়িতে ঢুকে দায়ের কোপে খুন করে তাঁকে। সেই চেন বিক্রি করতে গিয়েছিল স্থানীয় সোনার দোকানের মালিক রমেশকে। রমেশের সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে লোহার রডের ঘা মারে সুকুর। অচৈতন্য হয়ে পড়লে চার্জারের তার পেঁচিয়ে খুন করে পালায় চিৎপুরে নেশার ঠেকে নিজের কীর্তির কথা নেশার ঘোরে বলে ফেলে সুকুর। ধরা পড়েছে সেই সূত্রেই।

তদন্তকারীদের দাবি, তাঁরা জানতে পেরেছেন, নেশার টাকা জোগাড় করতে ছোটখাটো চুরি করত সুকুর। ২৫ অক্টোবর দুপুরে সে অম্বেদনগর এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল। চুরি-ছিনতাই ছিল উদ্দেশ্য। সে সময়ে বৃষ্টি হচ্ছিল। পুষ্পর বাড়ির বাইরে আশ্রয় নেয় সুকুর। নজরে পড়ে, বৃদ্ধা বাড়িতে একা। তাঁর গলায় চকচক মোটা সোনার চেন। সুকুর বৃদ্ধার ঘরে ঢুকে সেখান থেকেই দা তুলে নিয়ে পুষ্পকে কোপায় বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় বৃদ্ধার দেহ থেকে চেন খুলে নিয়ে পালায়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনার পরে সুকুর কয়েক দিন এলাকা ছাড়া ছিল। ১৯ নভেম্বর চেন বিক্রি করবে বলে রমেশের দোকানে যায় সে। দেখেশুনে রমেশের সন্দেহ হয়। তিনি সুকুরের কাছে জানতে চান, চেনটি সে কোথায় পেয়েছে। সুকুরকে দোকানে বসিয়ে রমেশ আশপাশের লোকজনকে ডাকাডাকির চেষ্টা করেন। দোকানে তখন অন্য কেউ ছিল না। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে সুকুর তাঁকে সোনা গলানো পাইপ দিয়ে মাথায় ঘা মারে। রমেশ অচেতন হয়ে পড়েন। অভিযোগ, সে সময়ে সুকর দোকান থেকে মোবাইলের চার্জারের তার গলায় পেঁচিয়ে খুন করে রমেশকে।

হাবড়া থানার তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, কলকাতার চিৎপুর এলাকায় সুকুর পালিয়ে গিয়েছিল। সেখানে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে নেশা করত। নেশার ঠেকে এক যুবকের কাছে নিজের কেরামতির কথা জানায়। কিছু দিন পরে অন্য ঘটনায় চিৎপুর থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ওই যুবক। তার কাছ থেকে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সুকুর নামে এক যুবক হাবড়ায় দু’টি খুন করেছে। বিষয়টি চিৎপুর থানার পক্ষ থেকে হাবড়া থানার পুলিশকে জানানো হয়। হাবড়া থানার পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে কয়েক দিন আগে দত্তপুকুর থেকে মাদক পাচারের সময়ে সুকুরকে গ্রেফতার করে। বুধবার আদালতের নির্দেশে পুলিশ খুনের মামলায় তাকে গ্রেফতার করে। সুকুর আপাতত পুলিশি হেফাজতে। দা, পাইপ, মোবাইল চার্জার উদ্ধার হয়েছে। চেনের খোঁজ চলছে।

তথ্য: হাবড়া থানা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sukur Ali Mondal Murder Crime Habra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE