Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Schools

Teachers: পাড়ায় গিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকেরা

স্কুলের পঠনপাঠনের সুনাম ধরে রাখতে এবং পড়ুয়াদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে সক্রিয় হয়েছেন শিক্ষকেরা।

নিয়ম-করে: চলছে পড়াশোনা।

নিয়ম-করে: চলছে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র।

নবেন্দু ঘোষ 
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:১৫
Share: Save:

স্কুলের অনলাইন ক্লাসে অনেক পড়ুয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই স্কুলের আশপাশের ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চারটি জায়গায় সপ্তাহে একদিন করে শিক্ষকেরা গিয়ে কারও বাড়ির উঠোন, কারও আমবাগানে ক্লাস নিচ্ছেন দূরত্ব বিধি মেনে। পড়ুয়াদের স্বার্থে এমন উদ্যোগ নিয়েছে হিঙ্গলগঞ্জ সার্কেলের সেরেরাটি এফপি স্কুল।

স্কুলের মোট পড়ুয়া সংখ্যা ১৬৩। বেশিরভাগ পড়ুয়া বিভিন্ন কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না দেখে করোনাকালের শুরু থেকেই বিভিন্ন ভাবে এই স্কুলের শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে গিয়ে পড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই ধারা বজায় রেখে এ বছর জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে রুটিন তৈরি করে শিক্ষকেরা অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি অফলাইনেও ক্লাস নিতে শুরু করেছেন। এই কাজে যুক্ত রয়েছেন স্কুলের ৬ জন স্থায়ী শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন।

মূল উদ্যোক্তা জয়ন্ত সেন। তিনি জানালেন, ২০১৩ সালের আগে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল মাত্র ৯২ জন। সেখান থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রত্যেক বছর বাড়তে বাড়তে ১৬৩ হয়েছে। তার মূল কারণ, এই স্কুলে ২০১৩ সালের পর থেকে পড়ুয়াদের পঠন-পাঠনের অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্কুলের উদ্যোগে কম্পিউটার শিক্ষা থেকে শুরু করে নাচ-গান, ব্রতচারী শিক্ষা, আবৃত্তি, নাটক শেখানোর মতো বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষার উপরে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। পরিকাঠামোরও অনেক উন্নতি হয়েছে। ফলে পড়ুয়ারা আশপাশের ৪ কিলোমিটার দূর থেকে একাধিক সরকারি স্কুল ও সিবিএসসি বোর্ডের বেসরকারি স্কুলকে টপকে এই প্রাথমিক স্কুলে পড়তে আসে।

স্কুলের পঠনপাঠনের সুনাম ধরে রাখতে এবং পড়ুয়াদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে সক্রিয় হয়েছেন শিক্ষকেরা। স্কুল থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে উত্তর মামুদপুরের বিশ নম্বর গ্রামে এক ছাত্রীর বাড়ির উঠোনে প্রত্যেক সপ্তাহে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত স্থানীয় দশজন পড়ুয়াকে পড়াতে যান স্কুলের চার শিক্ষক। যেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়ানো হয়। নয়ন দাস নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমার স্মার্ট ফোন থাকলেও ব্যবসার প্রয়োজনে আমার কাছে থাকে ফোন। বাড়িতে ফোন না থাকায় মেয়ে অনলাইন ক্লাস করতে পারছিল না। শিক্ষকেরা বাড়ির পাশে এসে যে ভাবে ক্লাস নিচ্ছেন, তাতে খুব ভাল হল।’’

পূর্ব মামুদপুর গ্রামের খাঁড়াপাড়ায় শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত একটি ফাঁকা জায়গায় ৬ জন পড়ুয়াকে ক্লাস নিতে যান শিক্ষকেরা। স্থানীয় বাসিন্দা, স্কুলের পড়ুয়া দেবরাজ মণ্ডল, কোয়েল খাঁড়া জানায়, স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইন ক্লাস করতে পারে না। তাই যেদিন পাড়ায় শিক্ষকেরা পড়াতে আসেন, সেদিন পড়তে যায়।

যে চার শিক্ষক এ ভাবে অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি অফলাইন ক্লাস নিয়ম করে নিয়ে চলেছেন, তাঁরা হলেন জয়ন্ত সেন, বিকাশ গায়েন, শঙ্কর মণ্ডল, পূর্ণেন্দু মণ্ডল। জয়ন্ত সেন, বিকাশ গায়েন এক বছরের মধ্যেই অবসর নেবেন। বাকি দু’জন শিক্ষক নতুন কাজে যোগ দিয়েছেন।

জয়ন্ত বলেন ‘‘পড়ুয়ারা এক অভাবনীয় সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। এমন সময়ে আমরা তাদের পাশে না থাকলে গোটা প্রজন্ম আমাদের কখনও ক্ষমা করতে পারবে না।’’ জয়ন্ত আরও বলেন, ‘‘যতদিন না স্কুল খুলছে, ততদিন পর্যন্ত আমরা এ ভাবেই অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে পড়াতে থাকব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Schools
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE