Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

দরপত্রে সাড়া নেই, বন্ধ পড়ে বৃদ্ধাশ্রম

পূজালি পুরসভা তৈরি করেছিল এই বৃদ্ধাশ্রম। পঞ্চাশ জন আবাসিক থাকতে পারার মতো আয়তনের এটি। পুর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা ছিল, বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা করবে কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দরপত্রের মাধ্যমে পনেরো বছরের চুক্তিতে সংস্থা নির্বাচন করা হবে।

প্রতীক্ষা: গজিয়ে উঠেছে আগাছা। ছবি: অরুণ লোধ।

প্রতীক্ষা: গজিয়ে উঠেছে আগাছা। ছবি: অরুণ লোধ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০২:২৩
Share: Save:

বিদ্যুৎ, জল সবই এসে গিয়েছে। দুই, তিন এবং চার শয্যার ঘরের ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু সেগুলি ব্যবহার করার কেউ নেই। মার্বেলে মোড়ানো মেঝে, ঝাঁ চকচকে দোতলা আকাশি-নীল বাড়িটি এ ভাবেই আবাসিক শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে প্রায় দু’বছর ধরে। পড়ে থেকে থেকে দেওয়ালের রঙে কালো ছোপ পড়তে শুরু করেছে। মখমলের মতো সবুজ ঘাসেও জংলা গাছ গজিয়ে উঠছে।

পূজালি পুরসভা তৈরি করেছিল এই বৃদ্ধাশ্রম। পঞ্চাশ জন আবাসিক থাকতে পারার মতো আয়তনের এটি। পুর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা ছিল, বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা করবে কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দরপত্রের মাধ্যমে পনেরো বছরের চুক্তিতে সংস্থা নির্বাচন করা হবে। পরিবর্তে নির্বাচিত সংস্থাটি কয়েক দফায় পুরসভাকে খরচের দেড় কোটি টাকা দিয়ে দেবে। সমস্যা হয়েছে সেখানেই। পূজালি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন, ‘‘চার বার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কেউ তাতে সামিলই হতে উৎসাহ দেখাননি। পূজালি পুরসভার পক্ষে বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা করাও অসম্ভব। অত লোকবল নেই পুরসভার।’’ তবে কী ভেবে বৃদ্ধাশ্রম তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? ফজলুলবাবুর দাবি, ‘‘ছোট পুরসভা। তাই আয়ের বিভিন্ন পথ তৈরি করতে গিয়ে এটিতে হাত দেওয়া হয়েছিল।’’

গঙ্গার কাছাকাছি এই বৃদ্ধাশ্রমটি তৈরি করার সময়ে এমন পরিস্থিতির কথা কল্পনাও করতে পারেননি পূজালি পুর কর্তৃপক্ষ। এমনটাই দাবি তাঁদের। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প এবং পূজালি পুরসভার নিজস্ব তহবিলের অর্থে এই বৃদ্ধাশ্রমটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে এই বৃদ্ধাশ্রম। পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছর জুন-জুলাই থেকে এ বছর মে পর্যন্ত পুর বোর্ড ছিল না। প্রশাসনের অধীন ছিল পুর এলাকা। ফলে কোনও কাজ করা যায়নি। ওই সময়ের আগেই চার বার দরপত্রের আহ্বান করা হয়েছিল।

বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনায় সঙ্গে যুক্ত দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তাদের দাবি, কোনও জায়গায় বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করার ক্ষেত্রে সবার আগে মাথায় রাখতে হয় স্বাস্থ্য পরিষেবা কত দূরে গিয়ে মিলবে? তাঁদের কথায়, শুধু গঙ্গাতীরকেই ঠিকানা করতে প্রাধান্য দেবেন না কোনও বয়স্ক মানুষ বা তাঁর পরিজনেরা। সে ক্ষেত্রে তিনি অসুস্থ হলে নিকটবর্তী কোন হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হবে সেটা বিচার্য বিষয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে অসুস্থতা হামেশাই লেগে থাকবে ধরে নেওয়া যায়। উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার দিক থেকে পূজালি অনেকটাই পিছিয়ে।

কোটি টাকা সরকারি অর্থে তৈরি এই বৃদ্ধাশ্রমের ভবিষ্যত কী? উত্তর জানা নেই, পুর কর্তৃপক্ষের। পূজালি পুরসভার বর্তমান চেয়ারপার্সন রীতা পাল বলেন, ‘‘সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই নতুন করে পঞ্চমবার দরপত্র ডাকা হবে। তাতে চুক্তির মেয়াদ পনেরো বছরের বেশি করার কথা চলছে। দেখা যাক এ বার কি হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pujali Municipality Old Age Home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE