Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পাওনাদারের চাপ ছিল, জানাচ্ছে পরিবার

বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় মাঝে মধ্যে বলে ফেলতেন হতাশার কথা। বলতেন, ‘‘এতগুলো টাকা কোথা থেকে শোধ করব কে জানে!’’ বাড়িতে ইদানীং চুপচাপ থাকতেন।

দীপকবাবুর পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

দীপকবাবুর পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৫
Share: Save:

বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় মাঝে মধ্যে বলে ফেলতেন হতাশার কথা। বলতেন, ‘‘এতগুলো টাকা কোথা থেকে শোধ করব কে জানে!’’ বাড়িতে ইদানীং চুপচাপ থাকতেন। কখনও সখনও স্ত্রীকে বলে ফেলতেন, ‘‘এই চাপ আর সহ্য করা যাচ্ছে না।’’ মেয়ের কথায়, ‘‘বাবা আগে কত হাসিখুশি ছিল। আমাদের সঙ্গে কত গল্প করত। কিছু দিন ধরে সে সব বন্ধ হয়ে যায়। টাকা শোধ করবে কী ভাবে, তা নিয়ে থেকে থেকেই হা-হুতাশ করতে শুনেছি।’’

যাঁকে নিয়ে এত কথা, সেই দীপক সরকার এক সময়ে বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার হয়ে অনেকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু একে একে সব ক’টি সংস্থার অফিসেই তালা পড়ায় পাওনা টাকা শোধ করতে পারছিলেন না।

মঙ্গলবার বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে দীপকবাবুর। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পাওনাদারদের চাপ আর নিতে পারছিলেন না বছর চল্লিশের ওই যুবক। বাড়িতে এসে টাকা চেয়ে হুজ্জুত চলছিল বলে পরিবার সূত্রের খবর। পুলিশের অনুমান, সে কারণেই বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন দীপক।

তাঁর বাড়ি কাকদ্বীপের শ্রীনগর পঞ্চায়েতের মাধবনগর গ্রামের বরপাড়ায়। স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার। মেয়ে অর্পিতা পড়ে নবম শ্রেণিতে। ছেলে অরিন্দম সবে নার্সারি। পরিবারটির জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছে অল বেঙ্গল ডিপোজিটর্স অ্যান্ড এজেন্টস ফোরাম। ফোরামের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পাওনাদারদের টাকা মেটানোর না পেরে কেবল দীপকই নন, প্রতিদিন অসংখ্য এজেন্টের উপরে আমানতকারীদের অত্যাচার চলছে। কখনও বাড়ি বয়ে এসে গালিগালাজ করা হচ্ছে।

কারও সাইকেল কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় সে সব অভিযোগও নিতে চায় না পুলিশ।’’ সে কথা অবশ্য মানতে চাননি জেলা পুলিশের কর্তারা।

এ দিকে, স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী প্রণতি। এক সময়ে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ছিল পরিবারে। রোজভ্যালি ছাড়াও টাওয়ার এবং অ্যালকেমিস্টের এজেন্ট হয়েছিলেন দীপক। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়, গত কয়েক বছর ধরে। সবগুলি সংস্থা বন্ধ হয়ে যায়। দীপক নিজেরও কিছু টাকা লগ্নি সংস্থায় রেখেছিলেন। সে সব কবে ফেরত পাবেন, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় ভুগতেন বলে জানিয়েছেন স্ত্রী। ইদানীং কাকদ্বীপের একটি পান বাজারে কাজ জুটিয়ে কোনও মতে সংসার চালাচ্ছিলেন দীপক।

কিন্তু আমানতকারীরা মাঝেমধ্যেই বাড়িতে এসে টাকা ফেরত চেয়ে নানা কটূ কথা শোনাত বলে জানাচ্ছে পরিবার। গালাগাল, হুমকিও দেওয়া হতো। দীপকবাবুদের চার ভাইয়ের পরিবার আলাদা হলেও একই বাড়িতে বাস। আমানতকারীদের উৎপাত নিয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে অশান্তি বাধত তাঁর, এমনটাই জানাচ্ছে পড়শিরা।

প্রণতিদেবী বলেন, ‘‘দেনা নিয়ে এত চাপ ছিল মানুষটার, যে দুর্ঘটনা ঘটে গেল।’’ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার কলকাতায় চিটফান্ড ফোরামের একটি সভা থেকে ফেরার পর আরও চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন দীপত। পান বাজারে যাবেন বলে মঙ্গলবার সকালে বেরিয়েছিলেন। বিকেলের দিকে এক পড়শির পানের বরজ থেকে তাঁর দেহ মেলে। মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছিল। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মঙ্গলবার রাতে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Creditors Family
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE