দীর্ঘ দিন এসইউসি এবং পরে বহু বছর কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার পরে গত পুরসভায় তৃণমূল নিজেদের প্রতীকে মাত্র দু’টি আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে জয়নগর-মজিলপুরে। এসইউসিআই ও নির্দলের সঙ্গে জোট করে বোর্ড গঠন করে তারা। এ বার আসন বাড়ানোর চেষ্টায় মরিয়া ঘাসফুল শিবির।
২০১০ সালের পুর নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ইন্দিরা দাস ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রাক্তন কাউন্সিলর সুকুমার হালদারের স্ত্রী লাবণ্যপ্রভাদেবী জয়লাভ করেছিলেন। ওই নির্বাচনে কংগ্রেস পায় ৬টি আসন। এসইউসি ৩টি ও নির্দল ৩টি করে আসনে জয়ী হয়। নির্দল প্রার্থী হয়ে জয়ী হওয়া প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর সিরাজউদ্দিন শেখ ও তাঁর স্ত্রী ফরিদা বেগম শেখ তৃণমূলে যোগ দেন। পুরপ্রধান হন ফরিদা। উপ পুরপ্রধান পদটি পান এসইউসি-র প্রবীর বৈদ্য।
১৪৬ বছরের পুরনো জয়নগর- মজিলপুর পুরসভায় ১৪টি ওয়ার্ডে এ বারে তৃণমূল সব ক’টি আসনে প্রার্থী দিলেও কংগ্রেস ও এসইউসি তা পারেনি। কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে ১১টি আসনে। এসইউসি লড়ছে ১০টিতে। এসইউসি-র পক্ষ থেকে ৪, ৫ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নাগরিক কমিটি সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন করা হয়েছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তারা সিপিএম প্রার্থীকে সমর্থন করছে। জয়নগরের এসইউসি-র বিধায়ক তরুণ নস্কর বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে তৃণমূল ঘোষণা করে দিয়েছে, সব ওয়ার্ডে জিততে হবে তাদের। ফলে ওরা সন্ত্রাস করে বহিরাগত দুষ্কৃতী এনে বুথ দখল করতে চাইবে। যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হয়, সেই দাবি পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’ বিধায়কের অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূল নেতা প্রবীর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় যা উন্নয়নের কাজ করেছি, মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আমাদের ভোট দেবেন। ভোট হবে শান্তিতেই।’’
তৃণমূল নেতা উন্নয়নের কথা বললেও বহু মানুষের বক্তব্য, সে ভাবে আর উন্নয়ন হয়েছে কোথায়? নিকাশি, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা— সব নিয়েই ক্ষোভ আছে। বস্তি এলাকার উন্নয়নও তেমন চোখে পড়ে না। প্রাক্তন পুরপ্রধান কংগ্রেসের প্রশান্ত সরখেল বলেন, ‘‘এই জোটের বোর্ড জয়নগরের উন্নয়নকে পিছিয়ে দিয়েছে। রাস্তাঘাট, আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল, এমনকী মাতৃমঙ্গল শিশুমঙ্গল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিছুই উন্নয়ন করতে পারেনি।’’ পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেও প্রচারে নেমেছে কংগ্রেস। বিদায়ী পুরপ্রধান অবশ্য দাবি করেছেন, পাড়ায় পাড়ায় ক্রংক্রিটের রাস্তা, বস্তি উন্নয়ন, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জয়নগরের অলিতে গলিতে অন্য গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। টাউন তৃণমূলের সভাপতি প্রবীর চক্রবর্তীর স্ত্রী ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সুজাতা চক্রবর্তী। যিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন বহু লক্ষ টাকার। এই টাকা কোথা থেকে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে দলের অন্দরেও। এ বিষয়ে প্রবীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্ত্রীর জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট, সোনাদানা মিলিয়ে ১৯ লক্ষ টাকার হিসাব দিয়েছি। এখন বিরোধীরা তা বাড়িয়ে প্রচার করছে।’’
এ বারে পুরভোটে পিছিয়ে নেই বিজেপিও। তারা ১৪টি আসনে মধ্যে ৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। সবই নতুন মুখ। বাকি আসনগুলিতে প্রাথী না দেওয়ার কারণ হিসাবে বিজেপি নেতা দেবতোষ আচার্য জানান, ‘‘কিছু ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় প্রার্থী দেওয়া যায়নি।’’ সিপিএম মাত্র ৪টি ওয়ার্ডে লড়ছে এখানে। যদিও ওই আসনগুলিতে ভাল ফল আশা করছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy