‘চাপে’র মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন কলেজের কার্যনির্বাহী সমিতির সভাপতি। অধ্যক্ষের কাছে লিখিত পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। অধ্যক্ষ তা পাঠিয়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে।
২০০৮ সালে বাসন্তীর সুকান্ত কলেজের জন্মলগ্ন থেকে কার্যনির্বাহী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন আরএসপি-র রাজ্য কমিটির সদস্য লোকমান মোল্লা। এর আগে পর্যন্ত বাসন্তী ব্লকে কোনও কলেজ ছিল না। ‘সুন্দরবন কৃষ্টি মেলা ও লোক সংস্কৃতি উৎসব’-এর মঞ্চ থেকে লক্ষাধিক সুন্দরবনবাসীর স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে কলেজের জন্য আবেদন করেছিলেন স্থানীয় শিক্ষানুরাগী লোকমান মোল্লা।
৩১ মে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
কারও নামে সরাসরি অভিযোগ তোলেননি তিনি। কিন্তু লোকমান মোল্লা বলেন, ‘‘২০০৮-২০১৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও দায়িত্বভার গ্রহণ করে এসেছি। তবু নানা নিম্নমানের সমালোচনায় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছি। কিন্তু আর পারছি না। নানা ভাবে আমার উপরে চাপ আসছে। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করলাম।’’
লোকমান নিজে সরাসরি কিছু না বললেও শাসক দলের একাংশের তিনি বিরাগভাজন, তা এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়। কলেজের ভবন তৈরির টাকা তছরুপের ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশই তাতে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন বলে কানাঘুষো। লোকমান অবশ্য দাবি করেন, একটা টাকাও এ দিক ও দিক হয়নি। একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সব টাকা সেখানেই রাখা আছে।’’ বস্তুত, তছরুপের অভিযোগে কলেজ কর্তৃপক্ষ তদন্তও করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, অডিট রিপোর্টে কোনও গরমিল নেই।
কিন্তু তারপরেও কেন পদ ছাড়তে চাইছেন বছর বাহান্নর লোকমান মোল্লা? ছাত্রসংসদ কি কোনও চাপ দিচ্ছে? অস্থায়ী ছাত্র সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনজুর ইলাহী গাজি বলেন, ‘‘আমরা কাউকে পদত্যাগ করতে বলিনি। আমরা চাই কলেজের সার্বিক উন্নয়ন। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য পাঁচিল, কলেজের পাকা মেঝের দাবি আছে। বৃষ্টির সময়ে ক্লাস রুমে জল ঢুকে পড়ে সমস্যা হয়। এ সব সমাধানের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সভাপতি কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজের মতো করে একতরফা ভাবে ইস্তফা দিয়েছেন বলে জেনেছি।’’
মনজুরের বাবা মন্টু গাজি তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর উপরে কোনও চাপ তৈরি করা হয়নি। তা ছাড়া, এমন তো নয়, তৃণমূল এই প্রথম ক্ষমতায় এল। সমস্যা হলে তা তো ২০১১ সালের পর থেকেই হতে পারত।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, কলেজে উপযুক্ত উন্নয়ন হয়নি। তা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের মুখে নিয়মিত অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে লোকমান সাহেবকে। সে জন্যই হয় তো পদত্যাগ করেছেন।
কিন্তু ঘটনা হল, কলেজের উন্নয়ন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ কম করেননি লোকমান। কখনও তাঁর উদ্যোগে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ ৫০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে। কখনও প্রাক্তন সাংসদ সনৎ মণ্ডল তাঁর তহবিল থেকে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। প্রাক্তন বিধায়ক সুভাষ নস্করও তাঁর এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা দেন কলেজের উন্নতিতে। প্রশাসনের দোরে ঘুরে ঘুরে উচ্চশিক্ষা দফতরের বিশেষ অনুদান হিসাবে ৪২ লক্ষ টাকা জোগাড়ের ক্ষেত্রেও লোকমান মোল্লার কথা মনে রেখেছেন স্থানীয় মানুষ। ২০১১-১২ সালে কার্যনির্বাহী সমিতি বহু কাঠখড় পুড়িয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অর্থানুকূল্যে কলেজের ভবন সম্প্রসারণের জন্য ২ কোটি ৭৬ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা অনুমোদন আদায় করে। ওই টাকার হিসেব নিয়েই লোকমানের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠতে শুরু করে। যার পিছনে রাজনৈতিক কারণই ছিল মুখ্য, মনে করেন জেলা আরএসপি নেতৃত্ব।
এ ব্যাপারে কী বলছেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপকুমার দে? তিনি বলেন, ‘‘সভাপতি তাঁর সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। আমি তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ সভাপতি হঠাৎ পদত্যাগ করায় কলেজে প্রশাসনিক সংকট ঘণীভূত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আইসি (কলেজিয়েট) দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘ঠিক কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy