Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Lockdown

কেউ ফিরে তাকায় না, অভিযোগ আদিবাসী পাড়ার মানুষদের, গেঁড়ি-গুগলি, শাক-ভাত খেয়েই কাটছে দিন

গ্রামে ঘুরেই দেখা গেল গেঁড়ি, গুগলি, শামুক জোগাড়ে ব্যস্ত অনিতা সর্দার ও হেমতা সর্দাররা।

অসহায়: শিশুকে শুধু ভাত খাওয়াচ্ছেন মা। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: শিশুকে শুধু ভাত খাওয়াচ্ছেন মা। নিজস্ব চিত্র

নবেন্দু ঘোষ 
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ০৭:২৯
Share: Save:

কেউ শুধু ভাত খাচ্ছেন নুন দিয়ে মেখে। কারও ভরসা শাক বা গেঁড়ি-গুগলি সেদ্ধ। নতুন করে কড়াকড়িতে কাজ হারিয়ে দিশাহারা হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিশপুর আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দারা। দু’বেলা খাবার জোগাড় করতেই সমস্যায় পড়ছেন দিন আনি দিন খাওয়া মানুষগুলো।

গ্রামের বাসিন্দা রুমকি সর্দার বলেন, “স্বামীর কাজ নেই। বাড়িতে দু’টো বাচ্চা। বাচ্চাদের জন্য খাবার যে কিনব, সেই সামর্থ্য নেই। বাধ্য হয়ে শুধু ভাতই খাওয়াই নুন দিয়ে মেখে। কষ্ট হয়। কিন্তু কিছু করার নেই।”

গ্রামে ঘুরেই দেখা গেল গেঁড়ি, গুগলি, শামুক জোগাড়ে ব্যস্ত অনিতা সর্দার ও হেমতা সর্দাররা। অনিতা বলেন, “যখন খাওয়া জোটে না তখন বাধ্য হয়ে শামুক আর শাক সেদ্ধ খাই। কাজ করে উপার্জন করার সুযোগও এখন কিছু পাচ্ছি না।”

এই পাড়ায় প্রায় ১৫টি পরিবারের বাস। তাঁদের অনেকেই বাইরের রাজ্যে কাজ করতেন। তবে গতবার লকডাউনে কাজ ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন। সেই থেকে করোনার জন্য বাইরে যেতে পারেননি। গ্রামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাজনা বাজিয়ে রোজগার করতেন। কেউ দিনমজুরের কাজ করতেন। তবে সেসবও প্রায় নেই। এই পাড়ার বাসিন্দা রঞ্জিত সর্দার বলেন, “গ্রামে কাজ নেই এখন। সংসার চলছে না। তার উপর নতুন করে সব বন্ধ হয়ে গেল। গ্রামে এখন ভিক্ষা করতে গেলেও কেউ ভিক্ষা দেবে না। ঋণ করে দু’বেলা দু’মুঠো ডাল ভাত খাওয়ার চেষ্টা করছি। জানি না, এভাবে কতদিন চলবে। সরকার আমাদের কথা ভেবে এই সময় কিছুই করল না।” কল্পনা সর্দার নামে এক বৃদ্ধা বলেন, “আমাদের দিকে কারও নজর নেই। কেউ আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায় না। আমরা দিন-আনি দিন-খাই। কোনও জমি জায়গাও নেই। কারও কিছু যায় আসে না আমাদের কষ্টে। শুধু ভোটের সময় আমাদের কথা সবার মনে হয়।”

পাড়ার বাসিন্দারা জানান, সরকারি সাহায্য বলতে তাঁরা শুধু রেশনের চাল ও আটা পান। তাঁদের দাবি, যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে তাঁদের জন্য অন্তত রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হোক। পাড়ার বাসিন্দাদের বেহাল অবস্থার কথা জানতে পেরে রবিবার দুপুরে হিঙ্গলগঞ্জের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী এই পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছে দেয়। হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বত প্রকাশ লাহিড়ি বলেন, “আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি যতটা পারব সাহায্য করব।” তবে এখন কীভাবে ব্লক অফিসে গিয়ে বিডিওর কাছে আবেদন করবেন, সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না গ্রামের মানুষগুলো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE