E-Paper

এগারো বছরের ভাইপোকে খুনে যাবজ্জীবন জেঠুর

গত বছরের জুনে খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল। সেই ঘটনা ঘিরে আচমকাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বারাসত-সহ উত্তর ২৪ পরগনা এবং অন্যান্য জেলা। যার জেরে ছেলেধরা সন্দেহে একাধিক জনকে গণপিটুনি দেওয়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:০৬
বারাসত জেলা আদালত চত্বরে ধৃত এনজার নবি। বৃহস্পতিবার।

বারাসত জেলা আদালত চত্বরে ধৃত এনজার নবি। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

বারাসতের কাজিপাড়ায় ১১ বছরের বালককে খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া তার জেঠুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল বারাসতের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত। এনজার নবি নামে ওই ব্যক্তিকে গত সোমবার দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তাকে সাজা শোনান বিচারক প্রজ্ঞা গার্গী ভট্টাচার্য (হুসেন)।

গত বছরের জুনে খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল। সেই ঘটনা ঘিরে আচমকাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বারাসত-সহ উত্তর ২৪ পরগনা এবং অন্যান্য জেলা। যার জেরে ছেলেধরা সন্দেহে একাধিক জনকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, ১১ বছরের ফারদিন নবির বাবা গোলাম নবির সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ বেধেছিল তাঁর দাদা এনজারের। পৈতৃক জমিতে তালগাছ কাটা নিয়ে দু’জনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। গোলামের বড়সড় ক্ষতি করে দেবে বলে তাঁকে হুমকি দিয়েছিল এনজার। পরবর্তী কালে ভাইপো ফারদিনকে খুন করে সেই হুমকি বাস্তবে পরিণত করে সে। ২০২৪ সালের ১৩ জুন একটি পরিত্যক্ত শৌচাগার থেকে ফারদিনের পচন ধরা দেহ উদ্ধার হয়। তার আগে চার দিন ধরে নিখোঁজ ছিল ওই বালক।

ওই সময়ের মধ্যে এনজার সমাজমাধ্যমে রটিয়ে দিয়েছিল, ফারদিনকে তুলে নিয়ে গিয়েছে ছেলেধরা। এমনকি, ওই বালকের দেহ উদ্ধারের পরে এনজার এ-ও রটিয়ে দেয় যে, তার ভাইপোর কিডনি পাচার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় এনজারকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার অপরাধ প্রমাণিত হয়। তবে, ফারদিনের নিখোঁজ হওয়া থেকে শুরু করে তার দেহ উদ্ধার, এই সময়সীমার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা তথা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এনজারের ওই কথা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। যার জেরে প্রায় ১৩টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটে বারাসত-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। তাতে চার জনের মৃত্যু হয়। গণপিটুনির শিকার হন রাস্তায় ঘোরা ভবঘুরে বা অসহায় মনোরোগীরা।

বারাসত পুলিশ জেলা জানিয়েছে, অভিযুক্ত এনজার গ্রেফতার হওয়ার দেড় বছরের মধ্যে তাকে সাজা দেওয়া সম্ভব হল। সব মিলিয়ে এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ২০ জন। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া জানান, যে ভাবে দোষী ব্যক্তি নিজেকে আড়াল করতে ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করেছিল, তাতে এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম বলেই পুলিশ মনে করেছে। আদালতেও পুলিশ তেমনটাই জানিয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘একটা সামান্য তালগাছ কাটা নিয়ে একটি বাচ্চাকে, যে তার নিজের ভাইয়ের ছেলে, তাকে এ ভাবে খুন করেছে এনজার। তার পরে যে ভাবে ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে এই রাজ্য ও ভিন্‌ রাজ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তাতে এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে আমাদের মনে হয়েছে।’’

মামলার সরকারি আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা জানান, তাঁরা এই ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম আখ্যা দিয়ে আদালতের কাছে দোষীর সর্বোচ্চ সাজার আবেদন করেছিলেন। তবে, বিচারক এনজারকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দেন। সৌম্যজিৎ বলেন, ‘‘এই রায় আইনের শাসনকে শুধু যে সুদৃঢ় করেছে তা-ই নয়, এক নিষ্ঠুর অপরাধের শিকার শিশুর জন্য ন্যায় বিচারও নিশ্চিত করেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Barasat correctional home

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy