Advertisement
E-Paper

তৃণমূলকেই দেব, বলেও মাথা ফাটলো ভোটারের

কড়া চোখে নির্দেশ এল, ‘‘ভোট দিতে হবে না, বাড়ি চলে যান।’’ ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ফুঁসে উঠলেন জামাল গাজি। বললেন, ‘‘নিজের ভোট দেব না মানে, আমিও তো তৃণমূল করি।’’ বুথের মধ্যে অচেনা চেহারার কয়েকটা লোক মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। তার পরেই শুরু হল মার। মাথা ফেটেছে মধ্যমগ্রামের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জামালের। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমি তো তৃণমূলকেই ভোটটা দিতাম। তা-ও ওরা বিশ্বাস করতে পারল না।’’

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৭

কড়া চোখে নির্দেশ এল, ‘‘ভোট দিতে হবে না, বাড়ি চলে যান।’’ ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ফুঁসে উঠলেন জামাল গাজি। বললেন, ‘‘নিজের ভোট দেব না মানে, আমিও তো তৃণমূল করি।’’ বুথের মধ্যে অচেনা চেহারার কয়েকটা লোক মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। তার পরেই শুরু হল মার। মাথা ফেটেছে মধ্যমগ্রামের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জামালের। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমি তো তৃণমূলকেই ভোটটা দিতাম। তা-ও ওরা বিশ্বাস করতে পারল না।’’

শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ উদয়ন সঙ্ঘ ক্লাবের বুথের সামনে কথা হচ্ছিল জামালের সঙ্গে। মাথা দিয়ে তখনও রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আশপাশে আরও কয়েক জন ভোটার। তাঁদের কারও কপাল ফেটে গিয়েছে, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। সকলেই জানালেন, ভোট দিতে গিয়ে মারধর খেতে হয়েছে বহিরাগত যুবকদের হাতে। ওই বুথে ঢুকে দেখা গেল, তখনও জনা আটেক যুবক বুথের মধ্যে হম্বিতম্বি করছে। আপনারা কারা, এ প্রশ্ন করায় উত্তর মিলল, ‘‘আমরা এলাকারই ছেলে। ভোটের কাজে সাহায্য করছি।’’ পুলিশকে তার কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। পুলিশ আবার দেখিয়ে দিল প্রিসাইডিং অফিসার রণজিৎ মণ্ডলকে। তাঁর সাফ জবাব, ‘‘এখানে প্রচুর ভোটার। লম্বা লাইন। ওরা ভোটের কাজে সাহায্য করছেন।’’

ভোটের দিন এমন নানা ঘটনার সাক্ষী থাকা গেল মধ্যমগ্রাম, নিউ ব্যারাকপুর, বারাসতের বুথে ঘুরে।

মধ্যমগ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী সনৎ বিশ্বাসকে পেয়ারাবাগান এলাকায় বুথের সামনে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এলাকার লোকজন পাল্টা প্রতিরোধে নেমে বুথের সামনে তৃণমূলের ক্যাম্প ভেঙে দেন। বারাসতের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলে বুথের সামনে বিক্ষোভ বসে পড়েন বিজেপি প্রার্থী রঞ্জনা বিশ্বাস ও সিপিএম প্রার্থী বন্দনা সানা। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ গিয়ে দেখা গেল, ভোট বন্ধ সেখানে। শাসক দল ও বিরোধীদের লোক জমায়েত হয়েছে। দু’পক্ষের ধাক্কাধাক্কি চলছে। অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী পৌঁছল সেখানে। কিন্তু অন্যত্র ইভিএম ভাঙার খবর আসায় বেরিয়ে গেলেন অফিসারেরা।

বারাসতে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৩ নম্বর বুথে বেলা দেড়টা নাগাদ হুড়মুড় করে কিছু লোক ঢুকে পড়ে। ভয়ে পালাতে থাকেন ভোটারেরা। পুলিশের সামনেই ছাপ্পা ভোট দিতে শুরু করে তারা। তৃতীয় পোলিং অফিসার ঠাকুর দাস সরকার গলা উঁচু করে কিছু বলতে গিয়েছিলেন। ‘সপাটে চড় পড়ে গালে’, বললেন ঠাকুরবাবু। ওই হামলাকারীরা আছড়ে মেরে ভাঙে ইভিএম।

২ নম্বর ওয়ার্ডে আবার তৃণমূল প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। তবে প্রার্থী রিনা অধিকারী নিজেই বুথে ঢুকে গোলমাল পাকাচ্ছিলেন বলে পাল্টা অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধীরা। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বামেদের এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ দিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে প্রচুর নম্বর প্লেটহীন অটো ঘুরতে দেখা গেল। টোটোর সংখ্যাও রাস্তায় ছিল প্রচুর। সব ক’টিতেই জাঁকিয়ে বসে অপরিচিত যুবকেরা, এমনটাই দাবি বিরোধী দলগুলির। তাঁরা কোথা থেকে এসেছেন, নম্বর প্লেটহীন অটো চালকদের দিকে এই প্রশ্ন ছুড়ে দিতেই তাঁরা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে উল্টো দিকে রওনা দিয়েছেন।

সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রচুর বুথে ছাপ্পা পড়েছে। বেশ কিছ বুথে তৃণমূলের বহিরাগতরা দাদাগিরি দেখিয়েছে। মারধর করা হয়েছে বারাসতের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থীর এজেন্টকে। প্রহৃত হয়েছেন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থীও। এমন কালি ব্যবহার করা হয়েছে কিছু বুথে, যা সহজেই আঙুল থেকে ঘষে তুলে ফেলা যায় বলে অভিযোগ। শাসক দল সে অভিযোগ মানেনি বলাইবাহুল্য। তাদের বক্তব্য, ভোট হয়েছে শান্তিতেই। যা শুনে বিরোধীদের বক্তব্য, যে সব ওয়ার্ডে সামান্যতম শক্তি আছে বিরোধীদের, সেখানে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছে শাসক দল। যা আগাগোড়া দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছে পুলিশ।

আর যেখানে গোলমাল ঠেকাতে সক্রিয়তা দেখিয়েছে, সেখানে প্রহৃত হতে হয়েছে পুলিশকে। যেমন নিউ ব্যারাকপুর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে তৃণূমল-সিপিএমের মধ্যে হাতাহাতি বেধেছিল। তৃণমূলের দল ভারী দেখে তাদের সরানোর চেষ্টা করেছিল পুলিশ। চার-পাঁচ জন পুলিশ কর্মীর গায়ে কিল-চড় পড়ে। পরে অতিরিক্ত বাহিনী গিয়ে সেখান থেকে দু’জন তৃণমূল কর্মীকে আটক করেছে। এ ছাড়া নিউ ব্যারাকপুরের ৪, ৬, ৭, ৮ এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ছাপ্পা ভোট এবং এজেন্টদের মারধরের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।

Arunaksha Chakraborty Barasat trinamool BJP congress municipal election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy