Advertisement
E-Paper

থেকেও নেই পুকুর, প্লাবিত গ্রামে জলের তীব্র সঙ্কট

হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকার বহু পুকুর আজও নোনা জলে ভরে রয়েছে।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২১ ০৬:৩৩
সমস্যা: এই পুকুরও ডুবে গিয়েছে নোনা জলে। মামুদপুর এলাকায়।

সমস্যা: এই পুকুরও ডুবে গিয়েছে নোনা জলে। মামুদপুর এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।

অনেক পথ হেঁটে স্নান করতে যেতে হচ্ছে অন্য পাড়ায়। বাসন মাজা এবং কাপড় কাচার জল আনতে এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় ছুটতে হচ্ছে। গবাদি পশুর জন্য পানীয় জল সংগ্রহে কালঘাম ছুটছে ইয়াসের ধাক্কায় প্লাবিত হিঙ্গলগঞ্জের অনেক গ্রামের বাসিন্দাদের। ইয়াসের জেরে নোনা জল ঢুকে পচে গিয়েছে পুকুরের মিষ্টি জল। ফলে নিত্যকাজে প্রয়োজনীয় জলের আকাল তৈরি হয়েছে বহু এলাকায়।

হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েতের উত্তর মামুদপুর, মামুদপুর-শেখপাড়া এবং রূপমারি পঞ্চায়েতের কুমিরমারি ও টিনপাড়া-সহ বিভিন্ন এলাকার বহু পুকুর আজও নোনা জলে ভরে রয়েছে। জল পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পুকুর সংস্কারের সামর্থ্য নেই দরিদ্র গ্রামবাসীর। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর পানীয় জল সরবরাহ করছে ওই সব এলাকায়। কিন্তু স্নান ও রান্না-সহ নিত্য কাজে প্রয়োজনীয় জল মিলছে না বলে অভিযোগ।

ইয়াসের ধাক্কায় ঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে যেতে হয়েছিল উত্তর মামুদপুরের বাসিন্দা সুপর্ণা মাইতিকে। সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও উঠোনে জল জমে রয়েছে। আমাদের ১ বিঘা ৫ কাঠার একটি পুকুর আছে। আশপাশের সকলেই তা ব্যবহার করেন। এখন পুকুরের জল পচে কালো হয়ে গিয়েছে। দুর্গন্ধে বাড়িতে থাকা দায়। পুকুরের জল গায়ে লাগলে চুলকানি হচ্ছে। দূষিত জল পাম্প করে বের করতে অনেক টাকা লাগবে। অত টাকা পাব কোথায়?’’

সুপর্ণাদের বাড়িতে পাঁচটি গরু রয়েছে। তারা পুকুরের জল পান করত। সুপর্ণা বলেন, “প্রতিদিন রান্না, বাসন মাজা ও গরুর খাওয়ার জল আনতে দূরের পুকুরে যেতে হয়।’’ হায়দর আলি শেখ নামে আর এক গ্রামবাসী বলেন, “আমাদের কল নেই। বাড়ির পুকুরের জলে আগে সব প্রয়োজন মিটে যেত। এখন দূরের পুকুর থেকে জল বয়ে আনতে হয়। জানি না কতদিন কষ্ট ভোগ করতে হবে।”

ইব্রাহিম সর্দার ও হালিমা বিবিদের মতো উত্তর মামুদপুরের সব বাসিন্দাই স্নান ও গৃহস্থালির কাজের জন্য পুকুরের উপরে নির্ভরশীল। তাঁরা জানান, গ্রামের একাংশে নোনা জল ঢোকেনি। সকলেই ওই জায়গার পুকুরগুলিতে যাচ্ছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভিড় হচ্ছে প্রতিটি পুকুরে।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের সারাফত হোসেন বলেন, “বরাবরই পানীয় জল আনতে অনেক দূরে যেতে হয় এলাকার মানুষকে। এখন নিত্য কাজের জলের জন্যও দূরে যেতে হচ্ছে। এলাকায় প্রায় ৮০টি পুকুর নোনা জলে ডুবে রয়েছে। সেখানে সরকারি কল নেই। মূলত পুকুরের উপরেই সকলে নির্ভরশীল। খুবই সমস্যায় রয়েছেন বাসিন্দারা।”

একই ছবি দেখা গিয়েছে মামুদপুর শেখপাড়াতেও। স্থানীয় বাসিন্দা শওকত শেখ বলেন, “দিনমজুরের কাজ করি। কাজ এখন নেই। পুকুর সংস্কারের টাকা পাব কোথায়? রান্না, স্নান ও ছাগল-গরুর জন্য পানীয় জল আনতে দূরে যেতে হচ্ছে।”

তৃণমূল পরিচালিত হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান তন্দ্রা মণ্ডল বলেন, ‘‘নোনা জল ঢুকে পুকুরে মাছ পচেছিল। ব্লিচিং পাওডার ছাড়ানো হয়েছে। ওই এলাকায় মূলত দরিদ্র মানুষের বাস। পুকুরের জল পচে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। কী ভাবে সাহায্য করা যায় তার ভাবনা চিন্তা চলছে।” বিডিও (হিঙ্গলগঞ্জ) শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ি বলেন, “বিষয়টি জানি। কী করা যায় তা দেখা হচ্ছে।” একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে মৈত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হিঙ্গলগঞ্জের প্লাবিত এলাকার পুকুরের দূষিত জল পরিষ্কারের পদক্ষেপ করছি। আশা করি সমস্যার সমাধান হবে।”

flood Cyclone Yaas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy