Advertisement
E-Paper

জল বাড়ছে ইছামতীতে, ভোগান্তি নদীপাড়ের মানুষের

বনগাঁ শহরের কয়েকটি ওয়ার্ড এলাকাতেও জল জমেছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে স্কুলে বা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২০ ০৪:১৪
জলমগ্ন: বনগাঁর হাটখোলার অবস্থা। সোমবার ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক

জলমগ্ন: বনগাঁর হাটখোলার অবস্থা। সোমবার ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক

কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ইছামতী নদীর জল বেড়ে গিয়েছে। জল উপচে বনগাঁ শহর এবং আশপাশের নদীপাড় সংলগ্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে। নদীর কাছে থাকা বাড়িঘর, পার্ক, হাট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কোথাও ঘরের মধ্যে কোমর সমান জল, আবার কোথাও উঠোনে নদীর জল পৌঁছে গিয়েছে। জল পেরিয়ে মানুষকে যাতায়াত করতে হয়েছে।

বনগাঁ শহরের কয়েকটি ওয়ার্ড এলাকাতেও জল জমেছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে স্কুলে বা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ভারী বৃষ্টিতে বনগাঁ শহরে জল জমে যাওয়াটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। শহরের নিকাশি ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম ইছামতী নদী। নাব্যতা হারিয়ে নদী এখন মৃতপ্রায়। জল ধারণের ক্ষমতা নেই। সে কারণে নিকাশির এমন অবস্থা বলেই মনে করছেন বাসিন্দারা। ফের তাঁরা সরব হয়েছেন নদী সংস্কারের দাবিতে।

বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই পুরসভার বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে। অনেক পরিবারকে ত্রাণ শিবির, আত্মীয়ের বাড়ি বা অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে। আমরা তাঁদের ত্রাণের ব্যবস্থা করছি। পাম্পের মাধ্যমে জল বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ পুরপ্রশাসক জলমগ্ন এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বনগাঁ শহরের নিকাশির প্রধান মাধ্যম ইছামতী। নদী সংস্কার না হলে জল থেকে আমাদের রেহাই মিলবে না। একই সঙ্গে রেললাইন এবং যশোর রোডের পাশে থাকা নয়ানজুলি সংস্কার প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা ওই বিষয়ে দাবি জানিয়েছি। কেন্দ্রের কাছে আগেই নদী সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।’’

নদীর কাছে কুঠিবাড়ি এলাকায় বাড়ি চঞ্চলা দাসের। নদীর জল উল্টে তাঁর ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। পরিবার নিয়ে চঞ্চলা এখন স্কুলে গিয়ে উঠেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ঘরের মধ্যে এখন কোমর সমান জল। কবে জল নামবে জানি না। নদীর কারণে প্রায় প্রতি বছর আমাদের দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়।’’ নদীর পাশে থাকা পুরসভার একটি পার্ক ডুবে গিয়েছে জলে। বনগাঁ মতিগঞ্জ এলাকায় থাকা হাটের মধ্যে নদীর জল ঢুকে পড়েছে। বাড়ির উঠোনে জল জমে গিয়েছে। জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

অতীতে শহরের জমা জল ইছমতী নদীতে গিয়ে পড়ত। নদী হয়ে সেই জল বেরিয়ে যেত। জল জমলেও তা কয়েক দিনের বেশি থাকত না। কিন্তু নদীর এখন জল নাব্যতা এতটাই কম, জমা জল বহন করার ক্ষমতা নেই। উল্টে নদীর জল প্লাবিত হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। নাব্যতা না থাকার পাশাপাশি নদীর বুকে কচুরিপানা, কচুবাগান, আগাছায় ভরে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই জমা জল বের হওয়ার উপায় নেই। সাম্প্রতিক সময়ে শহরে প্রচুর নিকাশি নালা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পলি তুলে নদী সংস্কার করা না হলে জল যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় নেই। ২০০০ সালে বনগাঁ শহর ও মহকুমা জুড়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। কয়েক লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিলেন। তারপর থেকেই ইছামতী নদী সংস্কারের দাবি জোরালো হতে থাকে। সেই দাবি এখনও হয়েছে। অভিযোগ নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার আজও হয়নি। ২০০০ সালের বন্যার পরে শহরে নদীর একপাশে কংক্রিটের গার্ডওয়াল দেওয়া হয়। ওই গার্ডওয়ালের ফলে শহরের একাংশের মানুষ জলে ডোবা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তবে দীর্ঘ দিন দেখভালের অভাবে গার্ডওয়ালের দেওয়ালে ছিদ্র তৈরি হয়েছে। তা দিয়ে নদীর জল ঢুকছে।

বাম ও তৃণমূলের আমলে বিক্ষিপ্ত ভাবে রাজ্য ও কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কয়েকবার নদী থেকে পলি তুলে নদী সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু সুফল মেলেনি। পলি তোলা এলাকায় কিছু দিন পরেই ফের পলি জমতে থাকে। বনগাঁ শহরে এখনও নদী থেকে পলি তোলা হয়নি। শহরবাসীর দাবি, শহর এলাকায় নদীর গভীরতা বাড়াতে পলি তুলে সংস্কার করতে হবে। গত বছর নদী থেকে কচুরিপানা তোলার কাজ শুরু হলেও সেই কাজ নানা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায়। টাকা ফিরে চলে যায়। দিন কয়েক আগে বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ সেচমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে আবেদন করেছেন কচুরিপানা তোলা ও নদী সংস্কারের কাজ শুরু করতে। গোপাল বলেন, ‘‘সেচমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত কাজ শুরু হবে।’’

Flood Monsoon Rain Ichamati River
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy