Advertisement
E-Paper

‘শেষ কথা’ হয়ে উঠছিলেন! জয়নগরের তৃণমূল নেতার খুন হওয়ার নেপথ্যে কি তাঁর রকেটের গতিতে উত্থান?

পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত শাহরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং অন্যান্য সূত্র ধরে জানা গিয়েছে যে, এলাকায় ক্রমশ প্রভাব বাড়ছিল সইফুদ্দিনের। আর সেই কারণেই তিনি নাকি এলাকারই অনেকের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৫৯
Why Jaynagar TMC leader had to die, what investigation says

জয়নগরের নিহত তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ ।

এলাকার ‘শেষ কথা’ হয়ে উঠেছিলেন জয়নগরের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর! আর সেই জন্যই খুন হতে হয় তাঁকে। তদন্ত চলাকালীন নাকি এমন তথ্যই জানতে পেরেছে পুলিশ। সোমবার সকালে সইফুদ্দিন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মসজিদ যাবেন বলে। নমাজ পড়তে যাওয়ার পথেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই অশান্ত হয়ে ওঠে জয়নগরের দলুয়াখাকি গ্রাম। তৃণমূল নেতা খুনের পরে সাহাবুদ্দিন নামে এক অভিযুক্তকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে। অন্য দিকে, সইফুদ্দিন খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন শাহরুল শেখ নামের এক যুবক। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও বেশ কয়েকটি নাম হাতে এসেছে পুলিশের। খুনের ঘটনার পর থেকে তাঁরা সবাই পলাতক। তাঁদের মোবাইল ফোনও বন্ধ।

সইফুদ্দিনকে যে পরিকল্পনামাফিক ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে খুন করা হয়েছে, তা আগেই আন্দাজ করেছিলেন তদন্তকারীদের একাংশ। কিন্তু কেন তৃণমূল নেতাকে খুন করা হয়েছে, তা নিয়ে ধন্দে ছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু এখন তাঁর খুনের কারণ খানিকটা হলেও তদন্তকারীদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে বলেই সূত্রের খবর।

পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত শাহরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং অন্যান্য সূত্র ধরে জানা গিয়েছে যে, এলাকায় ক্রমশ প্রভাব বাড়ছিল সইফুদ্দিনের। তাঁর উত্থান, শাসকদলের নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা— সব কিছু নিয়ে এলাকার ‘শেষ কথা’ হয়ে উঠছিলেন তিনি। আর সেই কারণেই তিনি নাকি এলাকারই অনেকের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন বলে তদন্ত চলাকালীন জানতে পেরেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। পুলিশ এ-ও জানতে পেরেছে, সইফুদ্দিন যখন খুন হন, তখন এলাকায় একটি জায়গা নিয়ে ঝামেলা চলছিল। তৃণমূল নেতা খুনের সঙ্গে সেই ঝামেলার কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

তদন্ত চলাকালীন নিহত তৃণমূল নেতার খুনের কারণ হিসাবে উঠে এসেছে বদলার তত্ত্বও। সূত্রের খবর, ধৃত শাহরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, বদলা নিতেও খুন করা হয়েছে জয়নগরের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করকে! তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, খুন হওয়া সইফুদ্দিনের সঙ্গে আগেই কয়েক জন অভিযুক্তের চেনাজানা ছিল। তদন্তকারীদের ওই অংশের দাবি, ধৃত শাহরুল পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাঁদের বেশ কয়েক বার মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এবং সেটা হয়েছে সইফুদ্দিনের অঙ্গুলিহেলনে। পুলিশ সূত্রেও খবর, অভিযুক্তদের বিভিন্ন সময়ে ফৌজদারি মামলায় ফাঁসিয়েছিলেন সইফুদ্দিন। আর তার বদলা নিতেই সইফুদ্দিনকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ।

তবে এলাকায় সইফুদ্দিনের ‘প্রভাবশালী’ হওয়ার তত্ত্বও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। জয়নগরের মহিষমারিতে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সইফুদ্দিনের। কর্মজীবনের শুরুতে বারুইপুর আদালতে মুহুরির কাজ করতেন। বিয়ে হয় সরিফা বিবি লস্করের সঙ্গে। স্থানীয়েরা বলেন, তার পরেই নাকি তরতর করে ‘উন্নতি’ হয়েছে সইফুদ্দিনের। বিয়ের পর বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন সইফুদ্দিন। মুহুরির কাজ করার সুবাদে পুলিশের সঙ্গে বেশ ভাল চেনাজানা ছিল তাঁর। তবে সইফুদ্দিনের রাজনীতিতে এসে পড়াটা আচমকাই বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় নেতৃত্ব। বস্তুত, ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হতেই তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন সইফুদ্দিন। ছেড়ে দেন মুহুরির কাজ। তার পর জয়নগর থানায় ডাকমাস্টারের কাজ শুরু করেন তিনি। প্রতিবেশীরা বলছেন, তখন থেকেই এলাকায় প্রভাব বাড়তে থাকে সইফুদ্দিনের। ক্রমশ শাসকদলের আরও ঘনিষ্ঠ হন। ২০১৮ সালে বামনগাছি অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি করা হয় সইফুদ্দিনকে। পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পান স্ত্রী। জেতার পরেই স্ত্রী হন পঞ্চায়েত প্রধান। তার পর থেকে পুরো পরিবারের চালচলনই নাকি বদলে যায়। সইফুদ্দিনের এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘এলাকায় ওর কথাতেই সব চলত।’’

২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে স্ত্রীর পাশাপাশি নিজেও ভোটে দাঁড়ান সইফুদ্দিন। এ বার সস্ত্রীক ভোটে জেতেন। এ বারও বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন স্ত্রী সেরিফা। নিহত সইফুদ্দিনের ঘনিষ্ঠদের দাবি, ‘‘রোজ লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হত ওঁর হাত ধরে। জীবনযাত্রাতেও বদল আসে। এখন আর শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন না সইফুদ্দিন। চোখধাঁধানো বাড়িও তৈরি করেছেন।’’ যদিও সইফুদ্দিনের ব্যবসা ঠিক কিসের, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ সূত্রে খবর, রকেটের গতিতে সইফুদ্দিনের উত্থান চোখ টাটিয়েছিল অনেকের। এলাকা জুড়ে তাঁর ‘প্রভাব’ বৃদ্ধি মেনে নিতে পারেননি অনেকে। আর সেই কারণেও তিনি খুন হতে পারেন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

Joynagar Murder Tmc Leader Murder Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy