স্বামী যখন শোওয়ার ঘরের খাটে পরস্ত্রীকে ফেলে ধর্ষণ করছে, স্ত্রী তখন ব্যস্ত সেই ঘটনা মোবাইলে ভিডিও রেকর্ডিং করতে! যা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই দম্পতি ৩ লক্ষ টাকা চেয়েছিল ‘ধর্ষিতা’ মহিলার কাছ থেকে।
হাবরার ফুলতলার এই ঘটনা নিয়ে যখন ‘ধর্ষিতা’ মহিলা থানায় এসেছেন অভিযোগ জানাতে, তখন অভিযোগ লিখতে গিয়ে কার্যত কলম আটকে গিয়েছিল কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারটির। নিজের দীর্ঘ কর্মজীবনে এমন ঘটনার কথা শোনেননি তিনি।
ঘটনাটি অবশ্য কয়েক মাসের পুরনো। অভিযোগকারিণীর দাবি অনুযায়ী, সেটা ছিল ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর। ‘ধর্ষিতা’ মহিলার বাড়ি অশোকনগরে। সেলাইয়ের কাজ করেন তিনি। বছর একত্রিশের মহিলার স্বামী কর্মসূত্রে থাকেন মুম্বইয়ে। অভিযুক্ত সুভাষ পাল ও কাজল পালরাও সেলাইয়ের কাজ করে। সেই সূত্রেই আলাপ অশোকনগরের মহিলার সঙ্গে। ঘনিষ্ঠতাও গ়ড়ে ওঠে দুই পরিবারের। দুই পরিবারে সন্তানাদিও আছে।
অভিযোগকারিণীর দাবি, দুই বাড়িতে যাতায়াত ছিল। সুভাষ-কাজলরা খুবই আলাপী। পরিচয় হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই আলাপ গাঢ় হয়। অভিযোগকারিণীর দাবি, ঘটনার দিন তাঁকে দুপুরের দিকে নিজেদের বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছিল সুভাষ-কাজলরা। সেই মতোই মহিলা দুপুরের দিকে হাজির হন ফুলতলায়।
মহিলার অভিযোগ, খানিকক্ষণ গল্পগাছার পরে কাজল উঠে অন্য ঘরে চলে যায়। এরপরেই সুভাষ তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে। মহিলা আপত্তি করে বলেছিলেন, ‘অসভ্যতা কেন করছো? পাশের ঘরে তোমার বউ আছে।’ সুভাষ বলে, ‘ও সব ভাবতে হবে না।’ মহিলার দাবি, এরপরে বছর পঁয়ত্রিশের যুবক তাঁকে বিছানায় ফেলে নির্যাতন করে।
তাঁর দাবি, তিনি চিৎকার করে কাজলকে ডাকেন। পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে মহিলা জানিয়েছেন, খাটের উপরে তখন তাঁকে ধর্ষণ করছে সুভাষ, সে সময়ে পাশের ঘর থেকে এসে দাঁড়ায় কাজল। কাঁদতে কাঁদতে মহিলা বলেন, ‘‘আমাকে বাঁচাও। দেখো, তোমার স্বামী কী কাণ্ড করছে।’’ কিন্তু বিস্ময়ের তখনও ঢের বাকি! মহিলার দাবি, কাজলের মুখেও তখন একফালি অর্থপূর্ণ হাসি। নিজের মোবাইল বের করে ছবি তুলতে শুরু করে সে। যা দেখে মহিলা বুঝে যান, গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার তিনি।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ, মোবাইলে পুরো ঘটনা রেকর্ডিং করে রাখার পরে সুভাষ-কাজলরা শাসানি দেয়, থানায় গেলে কিংবা অন্য কারও সামনে মুখ খুললে এই ছবি চারদিকে ছড়়িয়ে দেওয়া হবে।
মহিলার দাবি, ভয় পেয়ে তিনি মুখ বুজেই ছিলেন। কিন্তু ক’দিনের মধ্যেই সুভাষ-কাজলেরা ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকা চাইতে শুরু করে। প্রথমে এক লক্ষ, পরে দু’লক্ষ এবং শেষে ব্ল্যাকমেলের অঙ্ক পৌঁছয় ৩ লক্ষে।
এই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না মহিলার। তিনি এটাও বুঝে যান, ঘটনা চাপা রেখে ওই দম্পতির দাবির সামনে মাথা নোয়ালে পেয়ে বসবে তারা। দিন দিন দাবি বাড়তে থাকবে। সব দিক ভেবে মহিলা নিজের স্বামীকে সব কথা খুলে বলেন। ঠিক করেন, পুলিশের দ্বারস্থ হবেন। মহিলা জানিয়েছেন, স্বামী দিন কয়েক আগে মুম্বই থেকে ফেরেন। এরপরে রবিবার রাতে তাঁরা অভিযোগ করেন হাবরা থানায়। রাতেই গ্রেফতার করা হয় পাল দম্পতিকে। সোমবার অভিযোগকারিণীর মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। এ দিন ধৃতদের বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিন জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কেন এমন কাণ্ড? তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, ঘটনার কথা স্বীকার করেছে ওই দম্পতি। এ-ও জানিয়েছে, টাকার লোভেই এমন কাজ করেছে তারা। বাড়িতে সেলাইয়ের কারখানার করার ইচ্ছে ছিল। এর আগে অন্য কাউকে পাল দম্পতি ফাঁসিয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যে ফোনে ধর্ষণের ছবি তোলা হয়েছিল, সেটি আটক করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজটিও মিলেছে।
কী বলছেন অভিযোগকারিণী মহিলা? তাঁর কথায়, ‘‘একে তো ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা। আমি চিৎকার করছিলাম। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম, সুভাষের বউ ঘরে দাঁড়িয়ে থেকে এ সবের ছবি তুলছে, তখন এমনই হতভম্ব হয়ে যাই, কান্না থেমে গিয়েছিল আমার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy