Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নাবালিকা বিয়ে রুখল হবু শ্বশুরবাড়ি

প্রতিবেশী বা কিশোরীর বন্ধুর মারফত খবর পেয়ে প্রশাসন নাবালিকার বিয়ে রুখেছে বহুবার। কখনও নাবালিকা নিজেই পুলিশের কাছে এসে নিজের বিয়ে আটকেছে। কিন্তু এ বারের ঘটনা অন্যরকম। দুই নাবালিকার হবু শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই বিয়ে রুখে সচেতনতার নজির গড়েছেন। দু’টি ঘটনাই চলতি মাসে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা ব্লকের।

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৬:৪৮
Share: Save:

প্রতিবেশী বা কিশোরীর বন্ধুর মারফত খবর পেয়ে প্রশাসন নাবালিকার বিয়ে রুখেছে বহুবার। কখনও নাবালিকা নিজেই পুলিশের কাছে এসে নিজের বিয়ে আটকেছে। কিন্তু এ বারের ঘটনা অন্যরকম। দুই নাবালিকার হবু শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই বিয়ে রুখে সচেতনতার নজির গড়েছেন। দু’টি ঘটনাই চলতি মাসে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা ব্লকের।

বছর সতেরোর মেয়েটি একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে পৌঁছে যায় তার প্রেমিকের বাড়িতে। কিন্তু আঠারো বছর না হওয়ায় হবু বৌমাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই কিশোরী বাড়ি ফিরতে না চাওয়ায় তাঁরা বাধ্য হয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশ ওই কিশোরীকে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দিয়েছে।

আর একটি ঘটনায় বিয়ে করে ছেলে তাঁর নাবালিকা স্ত্রীকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে এনে রেখেছিলেন। মেয়ের আঠারো বছর পূর্ণ হয়নি জানতে পেরে তাঁরা মেয়েটিকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। কারণ তাঁরা জানতেন আঠারো বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ।

নাবালিকা বিয়ে নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের সচেতনতার প্রচারে যে ফল মিলেছে তার প্রমাণ, এলাকায় কিশোরী মেয়ের বিয়ে হচ্ছে জানতে পেরে রাত আড়াইটের সময়ও এলাকার মানুষ চাইল্ড লাইন সংস্থার টোল ফ্রি নম্বরে (১০৯৮) ফোন করে খবর পৌঁছে দিচ্ছেন। পুলিশ জানিয়েছে, গত ছ’মাসে গাইঘাটায় ১৫টি নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। মানুষ সচেতন হয়েছেন বলেই বহু নাবালিকার বিয়ে আটকানো সম্ভব হয়েছে।

পুলিশ ও চাইল্ড লাইন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, গাইঘাটা ব্লকে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রচার অভিযান চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন রকমের কর্মসূচিও পালন করা হচ্ছে। মেয়েদের আঠারো বছর ও ছেলেদের ২১ বছর না হলে যে বিয়ে দেওয়া যাবে না তা বিভিন্ন অলোচনা সভা ও কর্মশালা করে গ্রামবাসীদের বোঝানোর কাজ চলছে। অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিলে কী ক্ষতি হতে পারে বিভিন্ন নাটকের মাধ্যমে সে বিষয়েও গ্রামবাসীদের সচেতন করা হচ্ছে। চাইল্ড লাইন সংস্থার বনগাঁ মহকুমার কো-অর্ডিনেটর স্বপ্না মণ্ডল বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে আমরা পুরোপুরি ভাবে গাইঘাটা থানার সহযোগিতা পেয়ে থাকি। গভীর রাতেও কোনও খবর পেয়ে পুলিশকে জানালে তাঁরা দ্রুত পদক্ষেপ করেন। এ সব কারণে মানুষের মধ্যেও সচেতনতা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে।’’ চাইল্ড লাইন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে এবং নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করতে গাইঘাটা থানার ওসি অনুপম চক্রবর্তী একজন অফিসারকে নিয়োগ করেছেন।

গাইঘাটা থানা সূত্রে খবর, নাবালিকা বিয়ে রুখতে পুলিশের পক্ষ থেকে আইসিডিএস এবং আশা কর্মীদের নিয়ে কর্মশালা করা হচ্ছে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে বা প্রলোভন দিয়ে বিয়ে করে পরবর্তী সময়ে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয় নাবালিকাদের। সে বিষয়েও মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘আশা কর্মী, আইসিডিএস কর্মীরা গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করেন। ফলে তাঁদের সঙ্গে গ্রামের লোকেদের সম্পর্ক ভাল। তাঁরাও গ্রামবাসীদের বোঝানোর কাজ করছেন।’’ তবে এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় তাঁদের হুমকির মুখেও পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। কিছুদিন আগে স্থানীয় এক আশাকর্মী পুলিশকে এক নাবালিকা বিয়ের খবর দিয়েছিলেন। পুলিশ গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেয়। সেই খবর জানতে পেরে মেয়ের বাড়ির লোকেরা ওই আশাকর্মীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। পুলিশ অবশ্য কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

child marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE