Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
শাসন

গ্রামে ঢুকে সিআইডি অফিসারের ভেক ধরে জালিয়াতি

ঝকমকে চেহারা। কথাবার্তায় চৌকস। পকেটে পরিচয়পত্র। কোমরে গোঁজা আগ্নেয়াস্ত্র উঁকি মারছে জামার তলা থেকে। মাঝেমধ্যেই ধমক, “বেশি কথা হবে না, আমরা পুলিশের বাবা।” সবিনয়ে ‘বাবা’দের পরিচয় জানতে চেয়ে উত্তর মিলত, “আমরা সিআইডি অফিসার।”

সিআইডি অফিসার সেজে জালিয়াতির ঘটনায় ধৃতেরা।  ছবি: শান্তনু হালদার।

সিআইডি অফিসার সেজে জালিয়াতির ঘটনায় ধৃতেরা। ছবি: শান্তনু হালদার।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৬
Share: Save:

ঝকমকে চেহারা। কথাবার্তায় চৌকস। পকেটে পরিচয়পত্র। কোমরে গোঁজা আগ্নেয়াস্ত্র উঁকি মারছে জামার তলা থেকে। মাঝেমধ্যেই ধমক, “বেশি কথা হবে না, আমরা পুলিশের বাবা।” সবিনয়ে ‘বাবা’দের পরিচয় জানতে চেয়ে উত্তর মিলত, “আমরা সিআইডি অফিসার।” কিন্তু পুলিশের প্রশ্নের মুখে খসল খোলস। উত্তর ২৪ পরগনার শাসনে বৃহস্পতিবার সিআইডি-র ভেক ধরে প্রতারণা করার অভিযোগে ধরা হল পাঁচ যুবককে। উদ্ধার হল একটি ওয়ানশটার, গাড়ি। পুলিশের দাবি, এই দলের নেতা এক বছর কুড়ির স্কুল-ছাত্র।

নকল এই অফিসারদের হাতে কত জন প্রতারিত হয়েছেন, তা জানার চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী।

শাসনে এমনিতেই বেআইনি ভেড়ি ব্যবসার রমরমা। কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলে অসাধু কারবার। কাজেই সিআইডি অফিসারদের নাম শুনলে এলাকার অনেকেরই কাঁপুনি ধরে। তার পরে সেই অফিসারেরা যদি ব্যবসার কাগজ দেখতে চান, তা হলে চিত্তির।

স্থানীয় সূত্রের খবর, মাস দু’য়েক ধরে শাসনে দেখা যাচ্ছিল বছর কুড়ি-পঁচিশের এই জনা আটেকের দলটিকে। মাঝেমধ্যেই গাড়ি নিয়ে হাজির হত তারা। ব্যবসার নথিতে গোলমাল পেলে লোকজনকে ধমকাতো। তবে নগদ কয়েক হাজার টাকা ‘নজরানা’ দিলেই নিষ্কৃতিও দিত। একের পরে এক এমন ঘটনায় অনেকেরই সন্দেহ হয়।

খবর যায় পুলিশের কাছে। বৃহস্পতিবার সকালে খবর মেলে, শাসনের ফলতি এলাকায় ‘পুলিশ’ লেখা খয়েরি রঙের গাড়িতে চড়ে এসেছেন আট জন সিআইডি অফিসার। খানিকটা কিন্তু-কিন্তু করেও ঘটনা সরেজমিনে দেখতে বেরিয়ে পড়েন শাসন থানার পুলিশকর্মীরা। গিয়ে দেখেন, সকলের জামার পকেট থেকে উঁকি দিচ্ছে সিআইডির পরিচয়পত্র। “কোথা থেকে আসা হচ্ছে?” পুলিশের আমতা আমতা প্রশ্নে প্রথমে হম্বিতম্বি জুড়লেও পরে ওই যুবকদের কথাবার্তায় নানা অসঙ্গতি পান পুলিশকর্মীরা। ইতিমধ্যে তিন জন পালিয়ে যায়। বাকিদের ধরে ফেলে পুলিশ।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওদের কাণ্ড দেখে বলিউডের ‘স্পেশ্যাাল ২৬’ ছবিটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেখানেও তো সিবিআই অফিসারের ছদ্মবেশে এমন অপারেশন চালাত নায়ক অক্ষয়কুমার আর তার সাগরেদরা।” পুলিশের দাবি, শাসনের ঘটনায় ‘অক্ষয়কুমার’টি হল নৃপেন রায়। বয়স মেরেকেটে কুড়ি। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রটি ক্যারাটেতে ব্ল্যাকবেল্ট। পিস্তলও চালাতে জানে। তারই নেতৃত্বে আটঘাট বেঁধে দিনের পর দিন প্রতারণা করা হচ্ছিল।

নৃপেন এবং রাজা বাগ নামে আর এক যুবকের কাছ থেকে একটি মানবাধিকার সংগঠনের পরিচয়পত্র পেয়েছে পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রশ্নের মুখেও নিজেদের মানবাধিকার কর্মী বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে পুলিশকে ভড়কে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ওই যুবকেরা।” পুলিশ জানায়, ধৃত অন্য তিন জন হল সৌরভ মান্না, দেবাশিস রায়, কিশোর সাহা। পাঁচ জনেরই বাড়ি বারাসত-দত্তপুকুর এলাকায়। পুলিশ জেনেছে, সিআইডি-র অফিসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে বারাসতের একটি বাড়িতে শাসনের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে তুলে এনে টাকা-পয়সার রফাও করা হয়েছিল।

শাসনের ভেড়ি-এলাকায় এমনিতেই অস্ত্রশস্ত্রের রমরমা। দিনেদুপুরে বোমা-গুলি চলার বদনাম আছে। সেই এলাকায় দল বেঁধে গাড়ি নিয়ে ঢুকে, কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র গুঁজে এমন প্রতারণা করা সহজ কাজ নয় বলে মানছেন পুলিশ কর্তারা। তবে সব শুনে জেলার পোড় খাওয়া এক সিপিএম নেতার আক্ষেপ, “এক সময়ে মজিদ মাস্টারের (সিপিএম নেতা মজিদ আলি) অনুমতি ছাড়া শাসনে মাছিটুকু গলতে পারত না। আর এখন কী দিনকাল পড়ল!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE