Advertisement
E-Paper

এলাকায় ফিরে বাপি বলেছিল, রাস্তায় পড়ে গিয়ে কপালে কেটেছে

মাঝে মধ্যেই মদ খেয়ে এলাকায় হুজ্জুত। এর বাড়ির বউ, তার বাড়ির মেয়েকে টোন-টিটকিরি। কারণে-অকারণে ঝামেলায় জড়ানো সজ্জন প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের ছেলে বিশ্বজিত্‌ মণ্ডল ওরফে বাপির এই সব ‘গুণকীর্তন’ শোনা গেল গ্রামে গিয়ে।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৭
বাপি মণ্ডল

বাপি মণ্ডল

মাঝে মধ্যেই মদ খেয়ে এলাকায় হুজ্জুত। এর বাড়ির বউ, তার বাড়ির মেয়েকে টোন-টিটকিরি। কারণে-অকারণে ঝামেলায় জড়ানো সজ্জন প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের ছেলে বিশ্বজিত্‌ মণ্ডল ওরফে বাপির এই সব ‘গুণকীর্তন’ শোনা গেল গ্রামে গিয়ে।

হিঙ্গলগঞ্জের কণেকনগরের মাঝেরপাড়ায় নিহত শিক্ষিকা ফুলরেণু সরকারের বাড়ির কাছেই বাপিদের বাড়ি। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, তালা ঝোলানো বাইরে থেকে। তবে ওই শিক্ষিকাকে খুনের পর থেকে এলাকায় যে আতঙ্কের পরিবেশ ছিল, তা এ দিন কিছুটা হলেও কম। পাড়ার মোড়ে মোড়ে জটলা। আলোচনার বিষয়টা একটাই। কিন্তু নাম বলতে চাইলেন না অনেকেই। তাঁদের ভয়, ফুলরেণুকে খুনের ঘটনায় বাপি ধরা পড়েছে ঠিকই। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, আরও চার জন তো এখনও বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাপি গ্রেফতার হওয়ায় কিছুটা নিশ্চিন্ত সান্ডেলেরবিল শ্রীরামকৃষ্ণ সেবা মিশন কর্তৃপক্ষ। খুনের ঘটনার পর থেকে আশ্রমে লোকজন যাতায়াত কমছিল বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেই আশ্রম কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস। স্থানীয় বাসিন্দা করুণা মণ্ডল, ভবতোষ মণ্ডলদের বক্তব্য, “পুলিশ বলেছিল, খুনিরা গ্রামেই ঘোরাফেরা করছে। ফলে একটা চাপা আতঙ্ক ছিল। গ্রামের স্বাভাবিক পরিবেশটাই বদলে যায়। অনেকে রাতের দিকে একলা রাস্তায় বেরোতেও ভয় পাচ্ছিল।” গ্রামের কয়েক জন মহিলা জানালেন, রাতের দিকে এক সঙ্গে থাকতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন তাঁরা।

এলাকায় গিয়ে জানা গেল, বছর চল্লিশের বাপি চাষবাসের কাজ করত। মাছও ধরত। বাড়িতে বউ, দুই মেয়ে। কিন্তু তার স্বভাচরিত্র কোনও দিনই ভাল ছিল না বলে জানালেন পাড়া-প্রতিবেশীরা। নানা সময়ে মহিলাদের উত্যক্ত করার ঘটনায় তার নাম জড়িয়েছিল। এলাকায় ছোটখাট মারামারিতেও বার বার উঠে এসেছে রগচটা স্বভাবের যুবকের নাম।

আনন্দবাজারে প্রকাশিত পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভের ছবি।
তদন্তকারীদের দাবি, টি-শার্ট পরা এই যুবক বাপি।

কথা হচ্ছিল বাপির ভায়রাভাইয়ের সঙ্গে। কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন বাপির শ্যালিকা। তাঁর স্বামীর কথায়, “মহিলা-সংক্রান্ত ব্যাপারে বরাবরই বাপির নাম খারাপ। আমার স্ত্রীর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা তৈরির চেষ্টা করেছিল। তা নিয়ে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হয়। পরে আমার স্ত্রীর ঝুলন্ত দেহ মেলে। আমার সন্দেহ ছিল, স্ত্রীর মৃত্যুর পিছনে বাপির হাত ছিল।” ওই ব্যক্তির দাবি, বাপির বিরুদ্ধে সে সময়ে থানায় অভিযোগ জানাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাপি ও তার পরিবারের লোকজন চাপ সৃষ্টি করা থানায় যাওয়ার সাহস করেননি। বাপিরা নাকি বলেছিল, থানায় অভিযোগ করলে স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় উল্টে তাঁকেই ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে।

বাপিরা দুই ভাই এক বোন। কয়েক বছর আগে তার বোন দুর্ঘটনায় মারা যান। সে দিন বাপিই মোটর বাইকে চাপিয়ে বোনকে নিয়ে যাচ্ছিল দুর্গাপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। পরে বাপি জানায়, পথে বোন পড়ে গিয়ে চোট পায়। প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে গিয়ে বাপি বুঝতে পারে, বোন পড়ে গিয়েছে বাইক থেকে। বাঁচানো যায়নি মহিলাকে। সেই মৃত্যু নিয়ে রহস্য আছে বলে গ্রামের অনেকের দাবি।

কী ভাবে ধরা পড়ল বাপি?

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, খুনের দিন একটি টর্চ দিয়ে বাপির মাথায় ঘা মেরেছিলেন ফুলরেণু। খুনের পর এলাকা ছাড়া ছিল সে। বারাসতের এক চিকিত্‌সকের কাছে যায়। সেই চিকিত্‌সকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। বাপি দিন কতক পরে বাড়ি ফিরে আসে। তার মাথায় কাটা দাগ ছিল বলেও জানান গ্রামের মানুষ। বাপি বলেছিল, রাস্তায় পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছে।

nirmal basu basirhat bapi mondal phulurenu sarkar murder case southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy