এই হাল হয়েছে নদীর।—নিজস্ব চিত্র।
হাতের কাছেই ইছামতী। কয়েক বছর আগেও যেখানে তর্পণের দিন ভিড় উপচে পড়ত। কিন্তু ইদানীং কচুরিপানায় ভরা ইছামতীর সেই কৌলিন্য গিয়েছে। এলাকার লোকজনই আর হতশ্রী নদীতে তর্পণ করতে চান না। বাড়ির পাশের পুকুরও ইছামতীর থেকে ঢের ভাল, বললেন বহু বনগাঁবাসী। বনগাঁ থানার ঘাটে অতীতে বহু মানুষকে দেখা যেত তর্পণ করতে। এ বার সেখানে গিয়ে দেখা গেল কচুরিপানা আর নোংরা আবর্জনায় ভরে রয়েছে নদী। ইছামতী তো বটেই, যমুনা নদীও মুখ ঢেকেছে কচুরিপানায়।
অন্যান্য বছর দেখা যায়, আকাশবাণীতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় মহালয়ার সুর ছড়িয়ে পড়ার পরে ধীরে ধীরে তর্পণের জন্য বহু মানুষ ভিড় জমান ইছামতীর পাড়ে। নতুন পৈতে পড়ে কোমর সমান জলে দাঁড়িয়ে সূর্যের দিকে মুখ করে তাঁরা পিতৃপুরুষকে শ্রদ্ধা জানান।
এ বার বাধ সেধেছে কচুরিপানা। কয়েক জন বাসিন্দা জানালেন, তাঁরা ভোরে বেরিয়ে পড়বেন। ইছামতীর কোথায়ও যদি কচুরিপানার ফাঁকে একতিল জায়গা মেলে, সেখানে তর্পণ সারবেন। কিন্তু না হলে পুকুরে বা নিদেন পক্ষে বাড়িতেই কাজ সেরে নেবেন।
অন্য বছর পুজোর আগে ইছামতী থেকে কচুরিপানা তোলা হত। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে তা করা হত। কিন্তু বহু দিন হল নদী থেকে কচুরিপানা তোলা বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনের তরফে সামনে মহালয়ার তর্পণ জেনেও এ ব্যাপারে কোনও রকম উদ্যোগ চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিনের জমা কচুরিপানা থেকে জলে দূষণও ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। উপদ্রব বেড়েছে মশার।
বনগাঁ শহরের খয়রামারি এলাকার বাসিন্দা সুশান্ত নাথের বাবা মারা গিয়েছেন বছর আটেক আগে। তারপর থেকে তিনি পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে মহালয়ার ভোরে ইছামতীতেই তর্পণ সারেন। সুশান্তবাবু বললেন, “কচুরিপানা জমে থাকায় এমনিতেই জলে নামা মুশকিল। তার উপরে জল থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তর্পণ করতে দীর্ঘ ক্ষণ জলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তাই এ বার পুরোহিত বলেছেন, পুকুরে তর্পণ করাবেন। সেটাই করব।” বনগাঁ শহরের চাঁপাবেড়িয়া এলাকার বাসিন্দা অশোক চক্রবর্তী বললেন, “ইছামতীর যা অবস্থা, তাতে নদীতে নেমে তর্পণ করতেই ভয় পাচ্ছি।” করব।” নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তর্পণ করতে হলে কোমর সমান জলে দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কিন্তু জল ইতিমধ্যেই যথেষ্ট দূষিত হয়ে গিয়েছে। খানিক ক্ষণের জন্য নামলেও অনেকের গা-হাত-পা ফুলে যাচ্ছে। ফলে তর্পণের জায়গা খুঁজে বের করতে যথেষ্ঠ কাঠ-খড় পোড়াতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ইছামতীতে তর্পণ করাচ্ছেন পুরোহিত পরিতোষ মুখোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, ইছামতীতে তর্পণ করানোর জন্য এ বার কেউ যোগাযোগই করেননি। নদী কচুরিপানায় ভরা। কেউ তর্পণ করতে এলে বনগাঁ থানা-সংলগ্ন পুকুরে তর্পণ করাবেন বলে জানালেন তিনি।
তবে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদীর জলে দুর্গন্ধ কিছুটা কমেছে। তাই কেউ কেউ নদীতেই নেমে পড়বেন বলে জানালেন। বিমল চক্রবর্তী নামে অন্য এক পুরোহিত বলেন, “অনেকেই বাড়িতে তর্পণ করবেন বলে আগাম জানিয়ে রেখেছেন।” গোবিন্দ ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তি অবশ্য বললেন, “কচুরিপানা সরিয়ে একটু জল বের করে সেখানেই তর্পণ করব।”
নদী থেকে কচুরিপানা তোলার বিষয়ে বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোত্স্না আঢ্য বলেন, “ইছামতী থেকে কচুরিপানা তোলার জন্য মহকুমাশাসক থেকে শুরু করে জেলাশাসক সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বার বার বলা হয়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কচুরিপানা তোলা বন্ধ, এই অজুহাত দিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ বারে তর্পণে সমস্যা হলেও পুজোর পরে কী ভাবে নদী থেকে কচুরিপানা তোলা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কচুরিপানা তোলা বন্ধ হয়ে যাওয়াতেই যত সমস্যা বেড়েছে। অন্য উপায় দ্রুত খুঁজে বের করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy