Advertisement
E-Paper

খুন করে দেহ পুঁতে উপরে লাগানো হয়েছিল কলাগাছ

ছ’-সাত ফুট লম্বা কয়েকটা কলাগাছ গোড়া থেকে কেটে পুলিশ মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু করার সময়ে চারিদিকে ভিড় জমে গিয়েছিল। তখনও অবশ্য গ্রামবাসীরা বুঝতে পারেননি, ওই কলা গাছের ঝাড়ের নীচেই পোঁতা আছে বধূর দেহ। প্রায় আধ ঘণ্টা খোঁড়াখুঁড়ি চলার পরে পচা গন্ধ বেরোতে শুরু করে।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৭
মাটি খুঁড়ে চলছে দেহ উদ্ধারের কাজ।—নিজস্ব চিত্র।

মাটি খুঁড়ে চলছে দেহ উদ্ধারের কাজ।—নিজস্ব চিত্র।

ছ’-সাত ফুট লম্বা কয়েকটা কলাগাছ গোড়া থেকে কেটে পুলিশ মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু করার সময়ে চারিদিকে ভিড় জমে গিয়েছিল। তখনও অবশ্য গ্রামবাসীরা বুঝতে পারেননি, ওই কলা গাছের ঝাড়ের নীচেই পোঁতা আছে বধূর দেহ। প্রায় আধ ঘণ্টা খোঁড়াখুঁড়ি চলার পরে পচা গন্ধ বেরোতে শুরু করে। আরও কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়ির পাশের বাগানে মাটি খুঁড়ে বেরোল পাঞ্চালী গায়েন (৩০) নামে বধূর দেহটি। পরনের কালো ব্লাউজ, নাকে সোনালি নথ। দু’হাতে তখনও জ্বলজ্বল করছে শাঁখা-পলা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঢোলাহাটের রায়পুর ৩-এর ঘেরির বাসিন্দা পাঞ্চালীর সঙ্গে বছর বারো আগে বিয়ে হয়েছিল স্থানীয় মেহেরপুর বৈরাগীরচক গ্রামের দিন মজুর বাবলু গায়েনের বিয়ে হয়। সুপর্ণা ও শুভঙ্কর গায়েন নামে তাঁদের দুই সন্তান। সুপর্ণা পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। শুভঙ্কর পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। অভাবের সংসারে কয়েক বছর ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ চলছিল। বাড়িতে অশান্তি হলেই পাঞ্চালীদেবী চলে যেতেন বাপের বাড়িতে। বাবা-মা অবশ্য মারা গিয়েছেন বহু কাল আগে। গোঁসা করে দাদাদের কাছেই উঠতেন। কিছু দিন থাকার পরে দাদারাই বকাবকি করে বোনকে ফেরত পাঠাতেন শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু মাস চারেক আগে ওই বধূ বেমালুম উধাও হয়ে যান। প্রতিবেশীরা বা বাপের বাড়ির লোকজন বাবলুর কাছে একাধিক বার জানতে চেয়েছেন, কোথায় আছেন স্ত্রী। ‘জানি না’ বলে পাশ কাটিয়ে যেতেন ওই যুবক। কিন্তু বাপের বাড়ির লোকজনের সন্দেহ ক্রমশ গাঢ় হচ্ছিল। সোমবার সকালে তাঁরা ঢোলাহাটের পুলিশের কাছে বাবলুর ও তাঁর ভাই শ্যামলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। দু’জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, জেরায় খুনের কথা কবুল করে অভিযুক্তেরা। পুলিশ জানতে পারে, দেহ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। সেই মতো ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দেহ তোলার জন্য কাকদ্বীপ মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন জানায় পুলিশ। মহকুমাশাসকের নির্দেশে পাথরপ্রতিমা বিডিও কিশোর বিশ্বাসের উপস্থিতিতে এ দিন ‌সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মাটি খুঁড়ে দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে।

এ দিন দুপুরে বাবলুদের মাটির দেওয়াল, টালির চালের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। পাশেই শ্যামলের বাড়িতে বসেছিলেন অসুস্থ বৃদ্ধা মা বিজলা গায়েন। তিনি কোনও মতে জানালেন, কয়েক মাস ধরে বউমাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। মাঝে মধ্যেই রেগেমেগে বাড়ি থেকে চলে যেতেন বৌমা। আবার কিছু দিন পরে ফিরেও আসতেন। বৃদ্ধা ভেবেছিলেন, হয় তো এবারেও তেমন ঘটবে। জানা গেল, পাঞ্চালীর ছেলেমেয়েরা মামার বাড়িতে আছে। কিন্তু এ দিন সেই বাড়িতেও তালা ঝুলতে দেখা গেল। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে বাড়ির অদূরে বাগানে নিয়ে গিয়ে পাঞ্চালীর মাথায় কোদাল দিয়ে ঘা মেরে খুন করা হয়। সেখানেই প্রায় সাড়ে তিন ফুট গভীর ও চার ফুট চওড়া গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দেওয়া হয়। প্রমাণ লোপাটের জন্য মাটির উপরে কয়েকটি কলা গাছও বসানো হয়েছিল। এমনকী, দেহ মাটি চাপা দেওয়ার পরেও যদি পচা গন্ধ ছড়ায়, সে জন্য একটি মরা কুকুর এনে ফেলে রাখা হয়েছিল সেখানে।

তবে কী কারণে খুন করা হল মহিলাকে, তা এখনও জানা যায়নি। একটি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাবলু ও শ্যামলকে মঙ্গলবার কাকদ্বীপ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের ৭ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

panchali gayen murder dholahat dilip naskar southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy