বহু মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িয়ে এই বাওর।
কঙ্কনা বাওর সংরক্ষণ করা দরকার
গোবরডাঙা নিয়ে প্রতিবেদনগুলি বেশ ভাল লেগেছে। তবে আরও কয়েকটি বিষয়ে ভবিষ্যতে লেখালেখি হলে ভাল হয়।
১. গোবরডাঙার ক্রীড়া পরিকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল। পূর্ণাঙ্গ ফুটবল মাঠ বা ক্রিকেট মাঠ নেই। ইন্ডোর গেমস্-এরও কোনও ব্যবস্থা নেই। আধুনিক ব্যায়ামাগার বা জিমনেসিয়াম নেই। এ ছাড়া মেয়েদের ক্রীড়া কর্মকাণ্ড একেবারেই অনুপস্থিত। শুধু পরিকাঠামো হলেই হবে না, চাই নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও।
২. শিক্ষা ক্ষেত্রে গোবরডাঙার গৌরবের কথা অনেকে বলে থাকেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখানে প্রয়োজন একটি পলিটেকনিক বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের। আজকাল মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান প্রশিক্ষণ স্কুল বা ডিপ্লোমা ভিত্তিক কোর্স অনেক জায়গায় চালু আছে। শহরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে এ সব নিয়ে ভাবনাচিন্তা জরুরি।
৩. প্রকাশিত প্রতিবেদনে যমুনা নদী নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থাকলেও কঙ্কনা বাওড় (প্রায় ৪৫০ বিঘে) নিয়ে কোনও উল্লেখ ছিল না। বৃষ্টির জল ধরা, মৎস্য চাষ ও রানি মাছ সংরক্ষণ, এলাকার জলনিকাশি ব্যবস্থার পাশাপাশি সংলগ্ন ১০-১২টি গ্রামের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের জীবিকা ও কৃষিকাজ এর উপর নির্ভরশীল। এটির সংরক্ষণে নানা পদক্ষেপ করা জরুরি। এখান থেকে গত তিন-চার বছর ধরে প্রতি দিন প্রায় ১০০ লরি বালি তুলে নেওয়া হচ্ছে। এর বাস্তুতান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা নিয়ে মানুষের মনে তৈরি হচ্ছে নানা ক্ষোভ ও আতঙ্ক। এলাকায় গত ২০-৩০ বছরে প্রায় ৫০টি পুকুর, ছোট জলাশয় ভরাট হয়ে গিয়েছে। খানা-ডোবা-নালা-পগার এ সবের কোনও অস্তিত্ব নেই।
৪. এখানকার রাস্তা এত সরু যে স্টেশন এলাকা, খাঁটুরা ও গোবরডাঙা বাজার এলাকায় যান চলাচল ও মানুষের যাতায়াত অত্যন্ত সঙ্কটজনক। রাস্তায় দোকানের সামগ্রী সাজানো থাকে। পুর কর্তৃপক্ষ যান নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করেছেন। এটা ভাল। মোড়ের রাস্তা এত সংকীর্ণ যে পথ দুর্ঘটনা নিত্য ঘটনা। সাইকেল, ভ্যানরিকশা, ইঞ্জিন ভ্যান, বাইক এত বেড়েছে যে রাস্তা চওড়া করার পরিকল্পনা সব থেকে জরুরি। আমার শহর হোক পরিচ্ছন্ন-সাজানো-দৃষ্টিনন্দন শহর।
দীপক দাঁ, খাঁটুরা।
নিকাশির সুরাহা হল না
প্রাচীন এই জনপদ গড়ে ওঠার পিছনে যমুনা নদীর অবদান ও আজ তার করুণ অবস্থা সঠিক ভাবেই ‘আমার শহর’-এ লেখা হয়েছে। গ্রামীণ হাসপাতাল এবং টাউন হলকে নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের প্রতিবেদনও নাগরিক যন্ত্রণার যথাযথ প্রতিফলন। আনন্দবাজারকে ধন্যবাদ জানিয়ে দু’একটি বিষয় সংযোজন করতে চাই।
১৪৫ বছরের প্রাচীন এই শহরে জলনিকাশি ব্যবস্থায় কোনও পরিকল্পনার ছাপ নেই। পুর কর্তৃপক্ষ অনেক অর্থ ব্যয় করে জরুরি ভিত্তিতে যে কাজটুকু করেছেন, ক্রমবর্ধমান এবং অপরিকল্পিত জনবসতির চাপে তা একেবারে ভেঙে পড়েছে।
বাস টার্মিনাসের বয়স প্রায় এক যুগ পেরোলেও রেল পরিষেবা ছাড়া জেলা সদর বা কলকাতা যাওয়ার কোনও বিকল্প পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে উঠল না আজও। সেই টার্মিনাসে বছরে এক বার ‘বইমেলা’ নামে একটি সাড়ে ৩২ ভাজা মেলার আয়োজন করা হয়।
এখানকার নাটকের দলগুলি প্রেক্ষাগৃহের অভাব সত্ত্বেও নিজেদের চেষ্টায় ও সরকারি সাহায্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সংস্কৃতির অন্যান্য শাখাগুলি যমুনার মতোই নাব্যতা হারাতে বসেছে। তবে এই আঁধারে গোবরডাঙা লোক উৎসব-এর কথা বলতেই হবে। গোবরডাঙার একমাত্র সিনেমা হল ‘স্মৃতি’র কথাও মনে পড়ে। জরাজীর্ণ হলটি সুন্দর ভাবে পুনর্নির্মিত হয়েও কোনও রহস্যময় কারণে ঝাঁপবন্ধ হয়ে পড়ে আছে।
পুরসভার উদ্যোগে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কয়েকটি ছোট পার্ক হয়েছে। কিন্তু স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বৈকালিক বা সান্ধ্যকালীন আড্ডার কত যে রূপ, তা কিন্তু আমার শহরেরই ছটা।
তাপস হালদার, সাহাপুর
ট্রেন দরকার
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত আমার শহর গোবরডাঙা পড়ে খুবই ভাল লাগল। যে ভাবে শহরের অন্যতম সমস্যাগুলির পাশাপাশি ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে, তা প্রশংসনীয়। তবে আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হলে তা সার্বিকতা পাবে বলে মনে হয়। রেল এই শহরের প্রধান পরিবহণ মাধ্যম হলেও শহরের পূর্ব প্রান্তে একটিমাত্র টিকিট কাউন্টার। ফলে টিকিট কাটতে পশ্চিম প্রান্তের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে রেললাইন টপকে আসতে হয়। দীর্ঘ প্ল্যাটফর্মে ওভারব্রিজ একটি। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে পশ্চিম পাড়ে একটি টিকিট কাউন্টার ও আরও একটি ওভার ব্রিজের দাবি জানিয়ে আসছি। তা ছাড়া দীর্ঘ আন্দোলনের পর ‘গোবরডাঙা লোকাল’ চালু হলেও সকালের অফিসটাইমে তার একটিও নেই। সে দিকে নজর দেওয়া উচিত।
এই শহরে একটি কলেজ এবং বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। গত কয়েক বছরে একাধিক সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হয়েছে। শহরে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলও বড় প্রয়োজন।
পার্থসারথি দে, গৈপুর
সূর্য ঘড়ির সংরক্ষণ জরুরি
আমার শহরের প্রতিবেদনগুলিতে খুব ভাল ভাবেই গোবরডাঙার ঐতিহ্য এবং ইতিহাস জায়গা পেয়েছে। লেখা হয়েছে নাগরিকদের সমস্যার কথাও। সব মিলিয়ে প্রতিবেদনে এই শহরের যে নির্যাস উঠে এসেছে তা পাঠক হিসেবে আমাকে চাবুক মেরেছে। এ জন্য প্রতিবেদককে ধন্যবাদ। যা প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে নয় বরং যা থাকতে পারত সে বিষয়ে দু’একটি কথা বলতে চাই।
গোবরডাঙায় একটি শতাব্দী প্রাচীন সূর্যঘড়ি আছে। দেশের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি জায়গাতে এমন ঘড়ি দেখা যায়। সেই বিজ্ঞানচর্চার রেশ চলেছে এই শহরে আজও। শুধু ব্যক্তি স্তরে নয়, প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেও। সেই সব প্রতিষ্ঠানের নিরলস চর্চা আমাদের উদ্জীবিত করে। কিন্তু, সেই সূর্যঘড়ি এই মুহূর্তে যথেষ্ট অবহেলিত।
যমুনার গতি রুদ্ধ হয়েছে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতায়। কিন্তু, সংস্কৃতি চর্চায় তা থাবা বসাতে পারেনি। এই শহরে বেশ কয়েকটি দল কয়েক দশক ধরে নাট্যচর্চায় নিজেদের জড়িত রেখেছে। নাট্য প্রযোজনার পাশাপাশি কর্মশালা বা আলোচনাসভার মাধ্যমে সামগ্রিক থিয়েটার চর্চা করে চলেছে তারা। সাহিত্য পত্রিকা এবং গান-নাচের বেশ কয়েকটি সংস্থা আছে। সংস্কৃতির প্রসারে এই শহরের গুরুত্ব অপরিসীম।
দীপান্বিতা বণিকদাস, নক্সা, গোবরডাঙা
সবুজায়ন চাই
আমার শহরের কয়েকটি প্রতিবেদন পড়ে গোবরডাঙা সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। তবে আমার মতে, শেষ কয়েক বছরে এই শহরের বেশ কিছু উন্নতি হয়েছে। বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেকটি রাস্তা, অলিগলিতে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোড়ে মোড়ে রয়েছে উজ্জ্বল আলোর বাতিস্তম্ভ। শেষ কবে গুলি-বোমার আওয়াজ শুনেছে এ শহর, তা মনে করতে পারছি না। কঙ্কনা বিনোদন পার্ক এলাকাবাসীর কাছে ভীষণ পছন্দের। বাওড়-পাড়ের এই পার্কে চড়ুইভাতি থেকে সামাজিক অনুষ্ঠান, সব কিছুই করা যায়।
তবে আমাদের আরও কিছু চাহিদা রয়েছে। গোবরডাঙায় সবুজায়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি জমিদারবাড়িকে কেন্দ্র করে গোটা শহরটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা যায় কি না, ভাবা দরকার। রাস্তাঘাটগুলি যদি আর একটি চওড়া করা যায়, তবে ভাল হয়। যমুনার ধার দিয়ে বাজারের পিছন দিক থেকে একটি বাইপাস রাস্তা তৈরি করা যেতে পারে। শহরের একমাত্র হাসপাতালে ৩০টি শয্যার ব্যবস্থা করা জরুরি।
মনোতোষ বিশ্বাস, গড়পাড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy