Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জেটিঘাট সংস্কার না হওয়ায় সমস্যা সুন্দরবনের পর্যটকদের

শীত পড়ার পর থেকেই সুন্দরবনে দেশি বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। শীতের শেষবেলাতেও ভিড় কম নয়। পর্যটন মানচিত্রে সুন্দরবনকে আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। অথচ পর্যটকদের সুবিধার জন্য ন্যূনতম পরিষেবা দেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও হোলদোল নেই বলে অভিযোগ।

বাঁ দিকে, গদখালি জেটিঘাটের হাল। ডান দিকে, রেলিংহীন সোনাখালি জেটিঘাট। নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, গদখালি জেটিঘাটের হাল। ডান দিকে, রেলিংহীন সোনাখালি জেটিঘাট। নিজস্ব চিত্র।

সামসুল হুদা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪০
Share: Save:

শীত পড়ার পর থেকেই সুন্দরবনে দেশি বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। শীতের শেষবেলাতেও ভিড় কম নয়। পর্যটন মানচিত্রে সুন্দরবনকে আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। অথচ পর্যটকদের সুবিধার জন্য ন্যূনতম পরিষেবা দেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও হোলদোল নেই বলে অভিযোগ।

সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান ব্যবস্থা বলতে জলপথ। ক্যানিং মহকুমার ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী ব্লকের বিভিন্ন নদীর জেটিঘাটগুলির অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে ওই সব এলাকার মানুষকে নিত্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর কেটে গেলেও জেটিঘাটগুলির কোনও সংস্কার হয় না। কোনও রকমে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষার সময়ে খুবই সঙ্কটজনক অবস্থা হয়। দীর্ঘদিন এই জেটিগুলির সংস্কার না হওয়ার ফলে কংক্রিটের স্ল্যাবগুলি ভেঙে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, “সুন্দরবনের মানুষের জন্য বেশ কয়েকটি নতুন জেটিঘাট আমার দফতরের তরফ থেকে করা হয়েছে। আরও কিছু নতুন জেটিঘাট তৈরি করা হবে। আমার দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের বলব দ্রুত খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে।” গোসাবা ব্লকের গদখালি জেটিঘাট, গোসাবা ফেরিঘাট, বিরাজমনি জেটিঘাট, পাখিরালা জেটিঘাট, ছোটমোল্লাখালি জেটিঘাট, সাতজেলিয়া জেটিঘাট, বাসন্তী খেয়াঘাট, ঝড়খালি জেটিঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। এর মধ্যে বিরাজমনি জেটিঘাটটি নতুন তৈরি হলেও বিদ্যানদীতে পালি জমায় নদীর একদিকের পার ভাঙতে শুরু করেছে। অধিকাংশ জেটিঘাটগুলিতে কংক্রিটের স্ল্যাব ভেঙে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। কোনও ঘাটে আবার দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল।

ঘাটগুলির অবস্থা এতটাই খারাপ যে কোনও লঞ্চ বা ভুটভুটি ঘাটে এসে দাঁড়ানোর সময় সামান্য ধাক্কা লাগলে গোটা জেটিঘাট কেঁপে ওঠে। গোসাবার পাখিরালা জোটিঘাটটি একদিকে বসে গিয়ে মাঝখান থেকে ভেঙে গিয়েছে। পাখিরালার অন্যপারে সজনেখালি রেঞ্জ অফিস অবস্থিত। গোসাবা থেকে সড়কপথে অনেকেই পাখিরালা হয়ে সুন্দরবনে ঘুরতে যান।

শুধু তাই নয় পাখিরালাতে অনেক হোটেল, লজ থাকায় সুন্দরবনে ঘুরতে আসা অনেকেই সেখানে রাত কাটান। এমন একটা গুরুত্বপৃর্ণ পর্যটন কেন্দ্রে ভাঙা জেটির কারণে পর্যটকদের যে কোনও মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ, জেটিঘাটের অবস্থা তো খারাপই তার সঙ্গে পর্যটকদের জন্য ন্যূনতম পরিষেবাগুলির দিকে নজর নেই প্রশাসনের। এমনকী, এই জেটিঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত আলো নেই। শৌচালয় নেই।

কলকাতার পার্কসার্কাস থেকে ঘুরতে এসেছিলেন ইয়াসমিন বানু এবং রফি আহমেদ। তাঁদের কথায়, “সুন্দরবনকে নিয়ে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা নিচ্ছে বলে শুনেছি। কিন্তু সুন্দরবনে ঘুরতে এসে অন্য অভিজ্ঞতা হল। এখানে অধিকাংশ জেটিঘাটের খুবই খারাপ অবস্থা। যে কোনও মুহূর্তেই বড় বিপদ হতে পারে। পাখিরালাঘাটে তো আমরা কয়েক জন পড়েই গেলাম। তা ছাড়া, জেটিঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত আলো, নেই পানীয় জল, শৌচালয়ের অভাব রয়েছে। পর্যটকদের জন্য অন্তত এই পরিষেবাগুলির বিষয়ে প্রশাসনের ভাবা উচিত।”

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে মহকুমার বিভিন্ন নদীতে প্রায় ৫০টি জেটি তৈরি করেছিল সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ। কিন্তু এখন এই সমস্ত জেটিঘাটগুলির করুণ দশা। এ বিষয়ে মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, “কয়েকটি জেটিঘাট যে খারাপ তা আমরা জানি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া পর্যটকদের সুবিধার জন্য কয়েকটি ঘাটে আলো, পানীয় জল, শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যান্য ঘাটগুলিতেও এই ব্যবস্থা করা হবে।”

প্রশাসনিক চাপানউতোর হয়তো এ ভাবেই চলতেই থাকবে। মাস পেরিয়ে হয় তো বছর পার হবে। কিন্তু মাথার উপর আদৌ পাকা ছাদ জুটবে কিনা, তা জানে না আইসিডিএসে পড়তে আসা পড়ুয়ারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

caning sundarban samsul huda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE