Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ধর্ষণ-খুনে ধৃতদের ঘিরে বিক্ষোভ কোর্টে

ধর্ষণের পরে ছাদ থেকে ফেলে যুবতী খুনের অভিযোগে ধৃত বাচ্চু ঘোষ এবং ওই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ায় অভিযুক্ত সিপিএম নেতা রথীন পালকে শনিবার আদালতে তুলতে গিয়ে বেগ পেল পুলিশ। বিজেপি এবং সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সমর্থকেরা এ দিন শ্রীরামপুর আদালতে উত্তরপাড়ার ওই ঘটনায় ধৃতদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান।

শ্রীরামপুর আদালতে বিক্ষোভ। শনিবার প্রকাশ পালের তোলা ছবি।

শ্রীরামপুর আদালতে বিক্ষোভ। শনিবার প্রকাশ পালের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৪ ০১:৪৮
Share: Save:

ধর্ষণের পরে ছাদ থেকে ফেলে যুবতী খুনের অভিযোগে ধৃত বাচ্চু ঘোষ এবং ওই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ায় অভিযুক্ত সিপিএম নেতা রথীন পালকে শনিবার আদালতে তুলতে গিয়ে বেগ পেল পুলিশ। বিজেপি এবং সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সমর্থকেরা এ দিন শ্রীরামপুর আদালতে উত্তরপাড়ার ওই ঘটনায় ধৃতদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। ধৃতদের তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান। পুলিশ কোনও রকমে ধৃতদের আদালত-কক্ষে ঢুকিয়ে দেয়। তাঁদের ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

উত্তরপাড়ার প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্যারীমোহন কলেজের শিক্ষক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের আড়ালের চেষ্টা করেছেন বলে শুক্রবারই অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তারা শ্রুতিনাথবাবুকে কলেজ থেকে সরিয়ে দেওয়ারও দাবি তোলে। শনিবার তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে কলেজের অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। শ্রুতিনাথবাবুর দাবি, অভিযুক্তদের আড়ালের চেষ্টার প্রশ্ন নেই। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর বক্তব্য, বাচ্চু এবং দলেরই প্রাক্তন কাউন্সিলর রথীনবাবুকে ফাঁসানো হচ্ছে।

নিহত যুবতী উত্তরপাড়ার রাধাগোবিন্দ কলোনিতে থাকতেন। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের একটি নামী সংস্থায় চাকরি করতেন। গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় বছর ছাব্বিশের ওই মেয়েটি মায়ের সঙ্গে তাঁদের আবাসনের নীচে একটি সাইবার কাফেতে যান। কিছু ক্ষণ পরে তাঁর মা জল খেতে অন্যত্র যান। ফিরে মেয়েকে দেখতে পাননি। প্রায় দু’ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পরে তিনি দেখেন, আবাসনের পিছনে তাঁর মেয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। স্থানীয় নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হলে সেখানেই মারা যান ওই যুবতী। পুলিশ ওই আবাসনের ছাদ থেকে যুবতীর ওড়না এবং ব্যাগ উদ্ধার করে।

পুলিশ সূত্রের খবর, যুবতীর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রথম থেকেই তদন্তকারীদের সন্দেহ হয়, তাঁকে ধর্ষণ করে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রথমে ওই যুবতীর পরিবার থানায় কোনও অভিযোগ করেনি। পরে যুবতীর মা পুলিশের কাছে করা অভিযোগে দাবি করেন, এলাকারই বাসিন্দা বাচ্চু প্রায়ই তাঁর মেয়েকে বিরক্ত করত। কিন্তু সে যে শেষ পর্যন্ত ওই কাণ্ড ঘটিয়ে বসবে তা তাঁরা অনুমান করতে পারেননি। বাচ্চু এবং রথীনবাবু পুলিশের কাছে পুরো বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য তাঁদের হুমকি দেন এবং সেই ভয়েই তাঁরা প্রথমে থানায় অভিযোগ জানাতে পারেননি বলেও দাবি করেন ওই মহিলা। ওই ঘটনায় পুলিশ উত্তরপাড়ার নার্সিংহোমটির সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে। কারণ, নার্সিংহোমের তরফে একটি খুনের ঘটনাকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল বলে দাবি পুলিশের।

যুবতীর মায়ের অভিযোগ পাওয়ার পরেই বাচ্চুকে অসম থেকে গ্রেফতার করে শুক্রবার উত্তরপাড়ায় আনে পুলিশ। ধরা হয় রথীনবাবুকেও।

শনিবার কলেজে গিয়েছিলেন শ্রুতিনাথবাবু। দুপুরে সেখানে হাজির হন টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দেওয়ার পরে শঙ্কুদেবের দাবি, “শ্রুতিনাথবাবু ধর্ষণের ঘটনার অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে তাদের আড়ালের চেষ্টা করেছেন। এতে কলেজের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

অভিযোগ উড়িয়ে শ্রুতিনাথবাবুর পাল্টা দাবি, “রথীনবাবু ধরা পড়ায় আমি উত্তরপাড়া থানায় তাঁর সঙ্গে শুধু দেখা করতে গিয়েছিলাম। এ নিয়ে আমার হস্তক্ষেপ করা বা কাউকে আড়াল করারও কোনও প্রশ্ন ওঠে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rape uttarpara bjp southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE