গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চোরকাঁটায় ক্ষত বাড়ছে পানিহাটির। এ বার স্থানীয় বিধায়কের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত শীতকালীন উৎসব ও বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে দেখা গেল না পুরপ্রধান তথা উৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদককে। যদিও শনিবার থেকে শুরু হওয়া পানিহাটি উৎসবে স্বাগত ভাষণ তাঁরই দেওয়ার কথা ছিল। এমনকি একাধিক পুরপ্রতিনিধিকেও অনুপস্থিত থাকতে দেখা গেল উৎসবের মঞ্চে। অনুপস্থিতির এই তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা মেলা যে ওয়ার্ডে আয়োজিত হচ্ছে, সেখানকার পুরপ্রতিনিধি মলয় রায়ও।
বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করছে বিরোধী দল। এই উৎসব ও মেলাকে পানিহাটির ক্ষমতাসীন পরিবারের ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান বলেও দাবি করছেন বিরোধীরা। যদিও বিধায়ক নির্মল ঘোষের দাবি, ‘‘আমরা সকলে সঙ্ঘবদ্ধ।’’ কিন্তু এ দিনের ছবি সে কথা বলছে না। ওই উৎসব কমিটির প্রাক্তন সাংগঠনিক সম্পাদক তথা পুরপ্রতিনিধি ও দলীয় মুখপাত্র সম্রাট চক্রবর্তী, চেয়ারম্যান পারিষদ সদস্য তাপস দে-সহ একাধিক পুরপ্রতিনিধি অনুপস্থিত। এমনকি দিনকয়েক আগে অনুপম দত্ত খুনের সাজা ঘোষণার পরে তাঁর স্ত্রী তথা পুরপ্রতিনিধি মীনাক্ষী দত্ত বিধায়ককে কোনও ধন্যবাদ জানাননি। এ দিন তাঁর অনুপস্থিতিও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
পদাধিকার বলে ১১তম পানিহাটি উৎসবের সাধারণ সম্পাদক পুরপ্রধান সোমনাথ দে। স্বাগত ভাষণের জন্য আমন্ত্রণ পত্রে তাঁর নাম ছাপা হয়েছিল। পরম্পরা ভেঙে উদ্বোধনের স্বাগত ভাষণ দিতে এলেন না তিনিও। কেন? সোমনাথ বলেন, ‘‘নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হয়ে থাকতে আমি রাজি নই। এর থেকে বেশি প্রকাশ্যে বলব না।’’ সূত্রের খবর, বাম আমলেও পানিহাটি মেলা হত। ২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদলের পরেও সেই মেলার আয়োজন হয়েছে বামেদের তরফেই। কিন্তু ২০১৪-তে পানিহাটি পুরসভা তৃণমূলের দখলে যায়। ২০১৩ সালে কোনও মেলা না হওয়ায় পরের বছর শাসকদল সেই মেলা নিজেদের দখলে নিয়ে একই বছরে দু’বার উৎসব ও মেলার আয়োজন করে। সেই থেকে প্রতি বছর ডিসেম্বরে সোদপুর অমরাবতী মাঠে পানিহাটি উৎসব ও বইমেলার আয়োজন হচ্ছে। যার নেতৃত্বে স্থানীয় বিধায়ক ও পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানে শাসকদলেরই একাংশের অনুপস্থিতি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে প্রকট করছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
কিন্তু পুরপ্রধান কেন তাঁর সাধারণ সম্পাদক পদকে ‘নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন’ বলে অভিহিত করছেন, তা নিয়ে প্রবল কানাঘুষোও রয়েছে। সূত্রের খবর, উৎসব কমিটি গঠনের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সোমনাথকে সাধারণ সম্পাদকের পদে বসানো হয়। স্থানীয় বিজেপি নেতা কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই উৎসব পানিহাটির কোন ক্ষমতাসীন বাড়ির নিয়ন্ত্রণে তা তো সবাই জানেন। সেখানে বাকিদের শুধু নামে রাখা হয়। তাই নিজের সম্মান ও অনভিপ্রেত ঘটনা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার শুভবুদ্ধি হয়েছে পুরপ্রধানের।’’
সিপিএম নেতা শুভব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পানিহাটির উৎসবে এলাকার প্রধান নাগরিক অনুপস্থিত কেন, তা স্থানীয়েরা জানতে চান। এর পিছনে জমি হাঙরেরা নেই তো?’’ যদিও নির্মলের দাবি, ‘‘পুরপ্রধান বাইরে রয়েছেন। তিনি অন্য দিন আসবেন। বিরোধীরা অহেতুক কথা বলছেন।’’
অন্য দিকে, সংস্কারের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকা সোদপুর উড়ালপুল মেলার উদ্বোধনের দিন কাজ শেষ না করেই খুলে দেওয়া হল কেন, তার প্রতিবাদে বিজেপি অবরোধ করে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)