Advertisement
E-Paper

নিজেরাই বাঁধ সারাই শুরু করলেন গ্রামের বাসিন্দারা

পরনের কাপড় ভিজে একসা। শুক্রবার সকালে বৃষ্টির মধ্যেই হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীর উপরের বাঁধ সারাইয়ের কাজ করছিলেন নামখানার দ্বারিকনগর গ্রামের লক্ষ্মী মাইতি। তিন বছরের ছোট ছেলেকে রেখে এসেছেন শাশুড়ির কাছে।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০২:১৯
চলছে মেরামতির কাজ। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

চলছে মেরামতির কাজ। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

পরনের কাপড় ভিজে একসা। শুক্রবার সকালে বৃষ্টির মধ্যেই হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীর উপরের বাঁধ সারাইয়ের কাজ করছিলেন নামখানার দ্বারিকনগর গ্রামের লক্ষ্মী মাইতি। তিন বছরের ছোট ছেলেকে রেখে এসেছেন শাশুড়ির কাছে।

রবিবারের ভরা কোটালের পরে পেরিয়ে গিয়েছে ছ’দিন। এখনও বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা করা হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। ত্রাণও আসেনি যথেষ্ট। অগত্যা নিজেদের ভাগ্য নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে বাঁধ মেরামতিতে নেমে পড়েছেন নামখানার দ্বারিকনগর গ্রামের বাসিন্দারা।

কাজ করছিলেন গ্রামের শ’তিনেক মানুষ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন জনা ষাটেক মহিলাও। নিজেদের বাগানের তাল, খেজুর গাছের গুঁড়ি কেটে এনেছেন বাঁধ সারাই করার জন্য। কথা বলতে যেতেই এগিয়ে এলেন আরও জনা পনেরো মহিলা। ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন সকলে। চেঁচিয়ে উঠলেন, “সরকার কি ঘুমিয়ে পড়েছে? আজ, সাত দিন হতে চলল ভেসে রয়েছি আমরা। এখনও এলাকায় সামান্য খাবার-ত্রিপল পৌঁছয়নি। সারা বছর ধরে নদীবাঁধের অবস্থা সঙ্গীন। কেউ সারানোর উদ্যোগ নেয়নি। আমাদের একটাই অনুরোধ, সামনের ভরা কোটালের আগে দয়া করে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করুন।”

গত রবিবারের প্লাবনে নামখানা ও সাগর ব্লকের নদীবাঁধ ভেঙে বিভিন্ন গ্রামে জল ঢুকে ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছে অনেকেরই। উঁচু রাস্তার উপর তাঁবু খাটিয়ে দিন কাটাচ্ছে মানুষ। খাবার বা পানীয় জল অমিল। অভিযোগ, সরকারি ভাবে প্রায় কোনও জায়গাতেই এখনও ত্রাণ পাঠানো হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় এলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এই অবস্থায় অনেকেই বাড়ির শিশুদের আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। খেতে দিতে না পেরে জলের দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন বাড়ির গবাদি পশু। চার দিকে পচা মাছের গন্ধ। ইতিমধ্যেই জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। প্রয়োজনের তুলনায় খুব কমই মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা। যদিও সাগরের বিডিও পার্থ মুখোপাধ্যায় ও নামখানার বিডিও তাপস মণ্ডলের দাবি, “যেখানে যতটা সম্ভব ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।” পার্থবাবুর দাবি, মেডিক্যাল টিমও পাঠানো হয়েছে এলাকায়।

শুক্রবার সকালে নামখানার দ্বারিকনগর ও দেবনগরে যান প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। হাঁটু-সমান কাদা ভেঙে প্রায় দু’কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে দ্বারিকনগর গ্রামের নদীবাঁধের অবস্থা দেখেন তিনি। তার পরে চলে যান দেবনগর গ্রামে। রাত ৮টা অবধি ওই গ্রামের তাঁবুতে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। সঙ্গে ছিলেন সিপিএম নেতা রাহুল ঘোষও।

এ দিন সরকারি সাহায্য অমিল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দেবনগর গ্রামের নিরাশ্রয় পরিবারগুলির একাংশ। তাদের বক্তব্য, এখনও সরকারি ত্রাণ মেলেনি। কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কয়েক মুঠো মুড়ি বা এক বেলা ভাতের ব্যবস্থা করছে। নামখানার যুবক সমীর প্রধান বলেন, “খিদের জ্বালায় বাজারে ভিক্ষে পর্যন্ত করেছি। যে যেমন পেরেছেন সাহায্য করেছেন। অবাক লাগে, সরকার এখনও কোনও পদক্ষেপ করল না দেখে।” নোনাজল ঢুকে অকেজো হয়ে পড়েছে পানীয় জলের নলকূপও। ফলে জলের সন্ধানে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে যেতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে নামখানা ইউনিয়ন হাইস্কুলের পক্ষ থেকে প্লাস্টিকের ড্রামে করে জল পাঠানো হচ্ছে দ্বারিকনগর গ্রামে।

কান্তিবাবু জানিয়েছেন, অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা। বিধ্বস্ত নদী বাঁধের ছবি সিডি করে জেলাশাসকের হাতে দেওয়া হয়েছে।

একই অবস্থা নামখানার মৌসুনি দ্বীপেরও। এ দিন সেখানে যান জেলা কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলও। ছিলেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অর্ণব রায়, নামখানা ব্লক কংগ্রেস সভাপতি কুমারেশ পণ্ডা। কুমারেশবাবু বলেন, “আমরা ত্রিপল, চিঁড়ে, গুড় ও চাল এলাকায় নিরাশ্রয় মানুষদের বণ্টন করেছি। প্রতিটা তাঁবুতে সরকারি সাহায্য পাচ্ছেন না বলে ক্ষোভ দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষ।” গোবিন্দ গিরি বলেন, “আমাদের এই দ্বীপটি বাঁচানোর জন্য রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়নি। আমাদের কথা কেউ ভাবেনি। এ বার অন্তত বাঁধটা সারাই করে আমাদের বাঁচাক সরকার।”

তবে এ সব অভিযোগ মানতে চাননি সাগরের তৃণমূল বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা। তাঁর বক্তব্য, প্রতিটি জায়গায় খাবার, ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। মেডিক্যাল টিমও পাঠানো হয়েছে। এলাকা দূষণমুক্ত করতে ব্লিচিং পাউডার, চুন পাঠানো হয়েছে। তাঁর দাবি, “জেলাশাসক জানিয়েছেন, আজ, শনিবার থেকে সমস্ত বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে।”

dam repair villegers namkhana southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy