Advertisement
০৯ মে ২০২৪

বঁটি দিয়ে কুপিয়ে খুন শাশুড়িকে

শাশুড়ির কাছে দু’লক্ষ টাকা এবং শ্বশুরের কাছে কয়েক বিঘা জমি লিখে দেওয়ার দাবি করেছিল বৌমা। কিন্তু তাঁরা তা দেননি। অভিযোগ, তারই জেরে বৃহস্পতিবার সকালে স্বামীর সামনেই শাশুড়িকে বঁটি দিয়ে গলার নলি কেটে খুন করল বৌমা। হাবরার পায়রাগাছি গ্রামের ওই ঘটনায় অর্চনা রায় (৬৫) নামে ওই বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনায় প্রতিমা রায় ওরফে টুম্পা ও তার স্বামী দেবাশিসকে গ্রেফতার করেছে হাবরা পুলিশ। ঘটনাস্থলে যান বারাসতের এসডিপিও সুবীর চট্টোপাধ্যায়।

ধৃত প্রতিমা ও দেবাশিস। —নিজস্ব চিত্র।

ধৃত প্রতিমা ও দেবাশিস। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবরা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৩
Share: Save:

শাশুড়ির কাছে দু’লক্ষ টাকা এবং শ্বশুরের কাছে কয়েক বিঘা জমি লিখে দেওয়ার দাবি করেছিল বৌমা। কিন্তু তাঁরা তা দেননি। অভিযোগ, তারই জেরে বৃহস্পতিবার সকালে স্বামীর সামনেই শাশুড়িকে বঁটি দিয়ে গলার নলি কেটে খুন করল বৌমা। হাবরার পায়রাগাছি গ্রামের ওই ঘটনায় অর্চনা রায় (৬৫) নামে ওই বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনায় প্রতিমা রায় ওরফে টুম্পা ও তার স্বামী দেবাশিসকে গ্রেফতার করেছে হাবরা পুলিশ। ঘটনাস্থলে যান বারাসতের এসডিপিও সুবীর চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘অর্চনাদেবীকে প্রায়ই তাঁর ছেলের বউ মারধর করতেন। তাঁর ছোট ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ছেলে-বৌমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা খুনের কথা স্বীকারও করেছে।’’

ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বঁটিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ সরস্বতী খাঁ নামে এক প্রতিবেশী গাছ থেকে নারকেল পাড়িয়ে অর্চনাদেবীদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকে দেখেই প্রতিমা চিৎকার করে বলতে থাকে, “বাবা (শ্বশুর), তুমি এটা কী করলে?” পরক্ষণেই সে সরস্বতীদেবীকে উদ্দেশ করে চেঁচাতে থাকে, ‘‘কাকি, মা নিজেই গলা কেটে ফেলেছে।” ওই কথা শুনে সরস্বতীদেবী আশপাশের লোকজনকে খবর দেন। পাড়া প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। ততক্ষণে প্রতিমা ঘরের গ্রিলে তালা দিয়ে দিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে কয়েকশো মানুষ জড়ো হয়ে যান। তারা দরজা খুলতে বললেও প্রতিমা ও তার স্বামী দেবাশিস তালা খোলেনি বলে অভিযোগ। জানলা দিয়ে প্রতিবেশীরা দেখেন, ঘরের মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পড়ে রয়েছেন অর্চনাদেবী। হাবরা থানায় খবর দেওয়া হয়। আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে আসেন। উত্তেজিত জনতা ওই দম্পতিকে ঘিরে রেখেছিল। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে কোনও রকমে থানায় নিয়ে আসে।

অতীতেও মায়ের পেনশনের টাকা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় তাঁকে দা দিয়ে কোপানোর মতো ঘটনা ঘটেছে বনগাঁর রেটপাড়া এলাকায়। বাগদার ধোলানি গ্রামে তিন ছেলেকে জমি লিখে না দেওয়ায় বাবা-মাকে খেতে দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল ছেলেরা। অবসাদে তাঁরা আত্মঘাতী হয়েছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে দেবাশিসের বাবা গোবিন্দবাবুর বেশ কিছু জমিজমা রয়েছে। অর্চনাদেবীর নামেও ব্যাঙ্কে কয়েক লক্ষ টাকা রয়েছে। ছ’বছর আগে প্রতিমার সঙ্গে দেবাশিসের বিয়ে হয়। তাদের দুই মেয়ে। বৃহস্পতিবার স্ত্রীর খুনের পরে বাড়ির বারান্দার একটি খাটে বসে প্রায় আশি ছুঁই ছুঁই গোবিন্দবাবু জানান, বুধবার রাতে একটি ঘরে রোজকার মতোই শুয়েছিলেন তাঁরা। খুব সকালে শৌচাগারে যাওয়ার জন্য বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন। তখনও স্ত্রীকে মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই বৌমা বঁটি দিয়ে স্ত্রীর গলা কেটে দেয়। তারপর গ্রিলে তালা দিয়ে দেয়।” তিনি আরও জানান, প্রতিমা প্রায়ই তাঁদের মারধর করত। খেতে দিত না। ঘরের জিনিসপত্র, সোনার গয়না চুরি করে বিক্রি করে দিত। স্ত্রীর ভয়ে দেবাশিস কিছু বলতে পারত না। কিছু বললেই বধূ নির্যাতনের মামলা করার হুমকি দিত। প্রতিমা জমি লিখিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দিত। বৌমার চাপে জমি বিক্রি করে ফ্রিজ, সাইকেল কিনেছিলেন তিনি। দোতলা ঠিক করার জন্য ইট-বালিও কিনেছিলেন। অর্চনাদেবীর কাছে দু’লক্ষ টাকা চেয়েছিল। তাঁর আক্ষেপ, “ওদের তো সব দিয়ে দেব বলেছিলাম। তারপরেও কেন খুন করল!’’ পুলিশের দাবি, দেবাশিসও তাদের জানিয়েছে, তার সামনেই অর্চনাদেবীকে বঁটি দিয়ে খুন করেছে প্রতিমা। কিন্তু ভয়ে সে কিছু বলতে পারেনি। সম্পত্তির জন্য প্রায়ই শ্বশুর-শাশুড়ির উপর অত্যাচার করত তার স্ত্রী। বাবা-মার অপমানের প্রতিবাদ করলে তার কপালেও জুটত মার। গলা টিপে ধরত প্রতিমা। প্রতিমার বাপের বাড়ির লোকজনেরও এই ব্যাপারে ইন্ধন ছিল। দেবাশিস জানায়, গত শুক্রবারই দেবাশিসের নামে তিন কাঠা জমি লিখে দিয়েছিলেন বাবা। যা প্রতিমা মেনে নিতে পারেনি। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, মা খুন হওয়ার পরে আত্মীয়দের ফোন করে মিথ্যা কথা বলেছিল দেবাশিস। খুনের ঘটনায় সে-ও জড়িত।

এ দিন অর্চনাদেবীর প্রতিবেশীরাও জানান, বিয়ের এক বছর পর থেকেই সম্পত্তি নিজের নামে করানোর দাবিতে শ্বশুর-শাশুড়ির উপরে অত্যাচার শুরু করে প্রতিমা। তার কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, গোটা সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য ছিল প্রতিমার।

এ দিন স্ত্রীর খুনের পর অসহায় হয়ে পড়েছেন গোবিন্দবাবু। দেখারও কেউ নেই। আপাতত তাঁকে আত্মীয়দের কাছে রাখার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE