Advertisement
E-Paper

বনগাঁর বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে অবাধে ঢুকছে বাংলাদেশি দুষ্কৃতী

মোবাইল চুরির মতো ঘটনার প্রতিবাদ করায় সশস্ত্র বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা সীমান্ত পেরিয়ে এসে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করছিল এক আরপিএফ জওয়ানকে। গভীর রাতে সীমান্ত পেরিয়ে এসে পড়শি দেশ থেকে দুষ্কৃতীরা অবাধে লুঠপাট চালিয়ে ফিরে যায় মাঝে মধ্যেই। একের পর এক এই সব ঘটনার পরেও সীমান্তে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা নেই। সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলির মানুষ তাই নিজেরদের নিরাপত্তার দায়িত্ব ভাগ্যের হাতেই ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:১৩

মোবাইল চুরির মতো ঘটনার প্রতিবাদ করায় সশস্ত্র বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা সীমান্ত পেরিয়ে এসে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করছিল এক আরপিএফ জওয়ানকে। গভীর রাতে সীমান্ত পেরিয়ে এসে পড়শি দেশ থেকে দুষ্কৃতীরা অবাধে লুঠপাট চালিয়ে ফিরে যায় মাঝে মধ্যেই। একের পর এক এই সব ঘটনার পরেও সীমান্তে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা নেই। সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলির মানুষ তাই নিজেরদের নিরাপত্তার দায়িত্ব ভাগ্যের হাতেই ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন!

শুধু বনগাঁ ব্লকের ছয়ঘড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকা দিয়েই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের কাছে বনগাঁ, গাইঘাটা, বাগদা থানার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবাধে যাতায়াত বেড়েই চলেছে। ৮ ডিসেম্বর বনগাঁ শহর সংলগ্ন উত্তর ছয়ঘরিয়া মোড়ের কাছে যশোহর রোডে তৃণমূল নেতা হুজুর আলি শেখের উপরে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলি গিয়ে লাগে ভ্যানে বসে থাকা অদিতি অধিকারী নামে এক স্কুল শিক্ষিকার। পুলিশের দাবি, দুষ্কৃতীরা এসেছিল বাংলাদেশ থেকে। ‘অপারেশন’ শেষ করে তারা ফের সে দেশেই পালিয়ে গিয়েছে। স্থানীয় মানুষ জানাচ্ছেন, বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের এমন দৌরাত্ম্য কোনও নতুন ঘটনা নয়।

বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের সঙ্গে এখানকার স্থানীয় দুষ্কৃতীদের একাংশের আঁতাত থাকায় তাদের আরও বাড়বাড়ন্ত হয়। তারাই বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের নিরাপদে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেয় বা আশ্রয় দেয়। দু’দেশের দুষ্কৃতীরা মিলিত ভাবেও নানা অপারাধমূলক কাজ সংগঠিত করে। আবার এ দেশে দুষ্কর্ম করে এখানকার দুষ্কৃতীরা বাংলাদেশে পালিয়ে যায় কার্যত বিনা বাধায়। কখনও বিএসএফ জওয়ানেরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে উল্টে তারা জওয়ানদের উপরেও হামলা চালায়। জওয়ানেরাও দুষ্কৃতী হামলায় জখম হয়েছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে। অতীতে বাংলাদেশে বহু খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে পুলিশ বনগাঁ মহকুমা থেকেই গ্রেফতার করেছে। বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীদের এখানে ঢুকে অপরাধমূলক কাজ করাটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। অতীতে গোপালনগরের চালকি এলাকায় একটি ব্যাঙ্কে ডাকাতির ঘটনায় বা কয়েকটি খুনের ঘটনায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এমনও দেখা গিয়েছে, পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে আইনি পথে এ দেশে ঢুকেও বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা এখানে দুষ্কর্ম করেছে। কিন্তু বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা এখনকার মতো লাগামছাড়া কখনও হয়ে উঠেনি। সন্ধ্যার পরে শ’য়ে শ’য়ে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা ঢুকে পড়ছে। বাসিন্দারাদের কথায়, “মাঝে মধ্যে মনে হয়, আমরা এ দেশের নাগরিক তো?” গাইঘাটার সীমান্ত এলাকায় মাঝেমধ্যেই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির দেহ পাওয়া যায়। কারা তাদের মেরে ফেলে রাখে, তা পরে জানাও যায় না। পেট্রাপোল বন্দরের ট্রাক টামির্নাসে ঢুকে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা পণ্যভর্তি ট্রাক থেকে মালপত্র লুঠপাট করে গিয়েছে, এমন উদাহরণও রয়েছে।

সীমান্তের বাসিন্দারা যে ওই সব ঘটনার প্রতিবাদ করেন না এমনটা নয়। কিন্তু তাতে বিশেষ কাজ হয় না বলাইবাহুল্য। উল্টে, প্রতিবাদ আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন, তাঁদের উপরে শুরু হয় নানা হুমকি। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, সমস্যা রয়েছে ভিতরেও। যে এলাকায় আন্দোলন হচ্ছে, সেখানকার বহু মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে পাচারের কাজে বা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ। ফলে সষের্র মধ্যেই থেকে যাচ্ছে ভূত। অনেকের কথায়, “সকলেই পরিবার নিয়ে থাকি। প্রতিবাদ করতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ চলে যেতে পারে। সে জন্য অনেকে ভয়ে মুখ খোলেন না। এলাকার মানুষের বিশ্বাস, বিএসএফের গুলি চালনার নির্দেশ যেমন নেই, তেমনি একাংশের জওয়ানদের সঙ্গে তাদের ভাল সম্পর্কও রয়েছে। প্রবীণ মানুষদের বলতে শোনা গেল, “আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে শুধুমাত্র গুলি চালানোর নির্দেশ নেই, এই অজুহাতে বিএসএফ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে।”

গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ বলেন, “কেন্দ্রের উচিত, বিএসএফকে কঠোর করা। তা হলেই একমাত্র সমস্যা সমাধান সম্ভব।” এলাকার মানুষ অবশ্য দাবি করেছেন, পুলিশকেও আরও বেশি তৎপর হতে হবে।

বাগদার কুলিয়া সীমান্ত দিয়েও অবাধে দুষ্কৃতীরা ঢুকছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। গত ২৯ অক্টোবর গভীর রাতে কোদালিয়া নদী পেরিয়ে এক দল সশস্ত্র বাংলাদেশি দুষ্কৃতী কুলিয়ায় একটি বাড়িতে ঢুকে বাড়ির সদস্যদের মারধর করে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে সোনার গয়না, নগদ টাকা লুঠ করে পালায়। বাসিন্দারাদের অভিযোগ, এই সব এলাকায় বিএসএফের টহল থাকে না। পুলিশ তো অনেক দূরের বিষয়। ওই এলাকা দিয়ে গরু পাচারের মানুষ প্রতিবাদ করায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা এসে বাসিন্দাদের মারধর করেছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। সীমান্ত থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বিএসএফ পাহারা দেয়। সাধারণ মানুষকে যাতায়াতের পথে তল্লাশি করে। কিন্তু সীমান্তে তাদের টহল দিতে দেখা যায় না। কী করছে পুলিশ?

জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সন্ধ্যার পরে তো বটেই দিনের বেলাতেও বর্ডার রোডে পুলিশকে যেতে হলে বিএসএফের অনুমতির প্রয়োজন হয়। ফলে পুলিশের পক্ষে ওই সব এলাকায় টহল বা তল্লাশি চালানো সম্ভব হয় না। সম্প্রতি সিআইডির উচ্চপদস্থ এক আধিকারিক বনগাঁর সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে আসেন। তাঁকেও প্রথমে আটকে দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁর সঙ্গে বিএসএফের এক জওয়ানকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল সীমান্ত এলাকায় ঘোরাঘুরির জন্য। জেলা পুলিশের কর্তাদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এক পুলিশ কর্তা বলেন, “সম্প্রতি আমি বনগাঁ সীমান্তে গিয়েছিলাম, পাঁচ বার আমার গাড়ি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রে যদি ওই অবস্থা হয় তা হলে সাধারণ পুলিশের কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়।”

বিএসএফের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত তাদের টহল থাকে। অদিতি অধিকারীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বিএসএফকে চিঠি দেওয়া হয়েছে যৌথ তল্লাশি অভিযান চালানোর জন্য। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের সঙ্গে যৌথ ভাবে তল্লাশি ও নাকাবন্দি চালানোর জন্য ওদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। উত্তর এলে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।”

bangaon bangladeshi criminal infiltrators southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy