এক পাশে কেডি বিশ্বাস, অন্য পাশে সুব্রত ঠাকুরকে নিয়ে বসলেন সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
হাবরার চোংদা মোড়ে সংবর্ধনা মঞ্চে সবেমাত্র বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। ভিড়ের মধ্যে আটকে পড়েছিল একটি বাস। জানলা দিয়ে গলা বাড়িয়ে এক ব্যক্তি চিৎকার করে উঠলেন, “ভাগ মুকুল ভাগ...।” সে দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন সিদ্ধার্থনাথ। হাতের ইশারা করে মুখে বললেন, “ভাগ!” সমবেত জনতার মধ্যে থেকে চটাপট করে হাততালি পড়ল।
তৃণমূল নেতৃত্বকে এ রাজ্য থেকে ‘ভাগানোর’ স্লোগান দিয়ে ইতিমধ্যেই এ বাংলায় বেশ জনপ্রিয় সিদ্ধার্থনাথ। এতটাই, যে হাবরায় মাইক হাতে ঘোষক জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হালদার বললেন, “ভাগ মদন, ভাগ মুকুল, ভাগ মমতা বলে যিনি আমাদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন, তিনি এ বার ভাষণ দেবেন।”
যা শুনে সিদ্ধার্থনাথের মুখেও চওড়া হাসি। হাবরা থেকে বনগাঁ যাওয়ার পথেও নানা জায়গায় লোকজন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে সিদ্ধার্থনাথের গাড়ি লক্ষ্য করে বলেছেন, “ভাগ মুকুল ভাগ...।” যা শুনে পরে বিজেপি নেতা বলেন, “আমি একটা স্লোগান দিয়েছিলাম, যা বাংলার মানুষের মধ্যে এত জনপ্রিয় হয়েছে দেখে ভাল লাগছে।” পরিবর্তনেরও পরিবর্তনের সময় হয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপির বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য।
হাবরায় যেখানে সংবর্ধনা দেওয়া হল সিদ্ধার্থনাথকে, সেই এলাকাটি অবশ্য বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নয়। চোংদা মোড়ে মঞ্চ থেকে আরও আধ কিলোমিটার দূর থেকে শুরু হয় বনগা।ঁ সেই এলাকার লোকসভা ভোট উপলক্ষে বিজেপি নেতার সফর হলেও হারবায় দলের কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাসও ছিল দেখার মতো। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিলেন বিজেপির হাবরা পুর কমিটি। যাঁর নেতা শিবরতন কোঠারি। বিজেপি এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে একবারই একটি পুরসভা দখলে এনেছিল, সেটা ছিল হাবরা। সে সময়ে পুরপ্রধান হয়েছিলেন শিবরতনবাবুই।
সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “রাজ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে। তৃণমূল এখানে পরিবর্তনের নামে রসিকতা করেছে।” রাজ্যবাসীর উদ্দেশে সিদ্ধার্থনাথ বলে চলেন, “আপনারা পরিবর্তন করেছিলেন উন্নয়ন ও শিল্প হবে বলে। কিন্তু এ জন্য পরিবর্তন করেননি যে কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এ জন্য পরিবর্তন করেননি যে চারিদিক দুর্নীতিতে ছেয়ে যাবে। এ জন্য পরিবর্তন করেননি যে নতুন নতুন কল-কারখানা তৈরি না হয়ে বোমা বানানোর ফ্যাক্টরি বাড়তে থাকবে।” এই প্রসঙ্গেই বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগঢ়, গোয়ার সঙ্গে এ রাজ্যের তুলনা টানেন বিজেপি নেতা। জানান, ওই সব রাজ্যে কোন কৌশলে টিঁকে আছেন তাঁরা। উন্নয়ন ও সুশাসনের বার্তা এবং নেতৃত্বের নম্র ব্যবহারই যে তার একমাত্র চাবিকাঠি, সে কথা জানান সিদ্ধার্থনাথ। উন্নয়নের স্বার্থে তাঁরা সমাজের সব লোককে নিয়ে চলেন বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। এ রাজ্যে তৃণমূলের বছর চারেকের শাসনকালেই সব থেকে বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতা। খাগড়াগড়-কাণ্ডেও বিশ্বের কাছে এ রাজ্যের মুখ পুড়েছে বলে সমালোচনা করেছেন তিনি।
হাবরার অনুষ্ঠান সেরে এ দিন বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ বনগাঁয় পৌঁছন সিদ্ধার্থনাথ। সেখানে বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ে একটি লজে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা এলাকার নেতৃত্ব ও রাজ্য নেতৃত্বকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। বেলা আড়াইটে পর্যন্ত রুদ্ধদ্বার কর্মিসভা হয়। বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, সাত জন রাজ্য নেতাকে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভোটের প্রচার কৌশলের রূপরেখাও ঠিক করে দিয়েছেন সিদ্ধার্থনাথ। কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে সেখানে তিনি বলেন, “বসিরহাট দক্ষিণে উপনির্বাচনে আমরা মমতাকে নাড়িয়ে দিয়েছি। ভাগ টিএমসি ভাগ শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০১৫ সালে সরকারকে ধাক্কা দিতে হবে। ২০১৬ সালে সরকারকে ভেঙে দিতে হবে।” বনগাঁর ভোটে সুব্রত ঠাকুরকে জেতানোর আহ্বান জানিয়ে গিয়েছেন তিনি।
কর্মীদের তিনি বলে গিয়েছে, ভোটের প্রচারে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে, বনগাঁয় কোনও বিকাশ হয়নি। এখানে কোনও শিল্প হয়নি। কিন্তু শিল্প আসা উচিত ছিল। সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “যে রাস্তা দিয়ে এলাম, কলকাতা থেকে তা প্রায় আশি কিলোমিটার। কিন্তু রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। তার উপরে যানজট।” সীমান্ত বাণিজ্যের উন্নতির আশ্বাস, খাগড়াগড় প্রসঙ্গ, সারদা কাণ্ড নিয়েও প্রচার চালাতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “মোদীজী-অমিত শাহ সকলেই বনগাঁ নিয়ে ভাবছেন।”
কর্মিসভার শেষে স্থানীয় এক নেতা মধু মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে রুটি-সব্জি এবং সামান্য খাবার দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সেরেই সিদ্ধার্থনাথ চলে আসেন বিজেপির তফসিলি মোর্চার বৈঠকে। সেখানে সামান্য সময় কাটিয়ে রওনা দেন কলকাতার দিকে।
বনগাঁর ভোটে সামগ্রিক দায়িত্ব তিনি দিয়ে গিয়েছেন উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতা বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরীকে। যাঁর ডাকনাম ‘বালু’। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও তাঁর ডাকনাম ‘বালু’ বলেই অনেক বেশি পরিচিত। বনগাঁয় শাসক দলের ভোটের দায়িত্বে আছেন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। কিন্তু জ্যোতিপ্রিয়বাবুই যে এই ভোটে বড় রকম দায়িত্ব নিতে চলেছেন, তা বিলক্ষণ জানে সব রাজনৈতিক দলই। স্থানীয় মানুষ এখনই বলতে শুরু করেছেন, এ বার ভোটে দুই বালুর লড়াই দেখবে বনগা।
জ্যোতিপ্রিয়বাবু অবশ্য লড়াই বিজেপির সঙ্গে হবে বলেই মানতে নারাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy