স্বামীর সৎকার পর্ব যখন প্রায় শেষের মুখে, সে সময়েই এল স্ত্রীর মৃত্যুর খবর। একই চিতায় দাহ করা হল স্বামী-স্ত্রীর দেহ। মঙ্গলবার এমন ঘটনার সাক্ষী থাকলেন হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জের বহু মানুষ। অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিলেন নির্মল রায় (৮৭)। সেই শোকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মারা যান তাঁর স্ত্রী প্রমীলাও (৭৭)।
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের হেমনগর উপকূলবর্তী থানার যোগেশগঞ্জ বাজারের কাছে পশ্চিমপাড়ায় থাকতেন নির্মলবাবু। তাঁর আট ছেলেমেয়ে। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, সোমবার রাত ৯টা নাগাদ খাওয়া সেরে শুতে যাওয়ার সময়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রমীলাদেবী। হাতুড়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো বৃদ্ধাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। স্ত্রীকে ভ্যানে তুলতে সাহায্য করেন স্বামী। কিন্তু স্ত্রীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাঁকেও একই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। রাত ১১টা নাগাদ সেখানেই মারা যান নির্মলবাবু। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন স্ত্রী।
মঙ্গলবার সকালে নির্মলবাবুর দেহ বাড়িতে এনে সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। ওই এলাকায় শ্মশান বলে আলাদা কিছু নেই। বেলা ১১টা নাগাদ বাড়ির কাছে জমিতে সৎকারের ব্যবস্থা হয়। বেলা ২টো নাগাদ যখন দেহ প্রায় ভষ্মীভূত, সে সময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ফোনে খবর আসে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রমীলাদেবীর।
ওই দম্পত্তির বড় ছেলে, পেশায় গৃহশিক্ষক বাসুদেববাবু বলেন, “মাকে যখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছিলাম, সে সময়েও বাবা সুস্থ ছিলেন। কিন্তু মা ভর্তি হয়েছেন শুনে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে ওই রাতেই তাঁকে মায়ের পাশের বেডে ভর্তি করতে হয়। একটু পরে সেখানেই বাবার মৃত্যু হয়।” তিনি জানাচ্ছেন, বাবা-মায়ের মধ্যে এতটাই মিল ছিল যে বাবা বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত মা কখনও ভাত খেতেন না। বাবার শোকেই মারা গেলেন মা। দু’জনকে একই চিতায় দাহ করা হয়েছে। প্রতিবেশী শ্মশানযাত্রী অমলকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “নির্মলবাবুর দেহ সৎকারের শেষ পর্যায়ে জল ছিটানোর সময়ে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ আসে। ঠিক হয়, স্বামী-স্ত্রীর দেহ একই চিতায় দাহ করা হবে। সেই মতো ফের কাঠ সাজিয়ে সৎকার করা হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy