আলু রাখার সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে দু’সপ্তাহ আগে। তার পরেও প্রায় তিনশো টন আলু রয়ে গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন হিমঘরে। পাঁচশো আর হাজার টাকার নোট বাতিলের ঝঞ্ঝাটে সেই আলু বার করতে আর হিমঘরমুখো হচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। বেগতিক দেখে মজুত আলু এখন নিলামে বিক্রি করতে চাইছেন হিমঘর-মালিকেরা। আলুর নিলাম নিয়ে বর্ধমান ও হুগলিতে মাইকে প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে।
পুরনো আলু হিমঘরে পড়ে তো আছেই। তার উপরে বাঁকুড়া-বীরভূমে খেত থেকে নতুন আলু ওঠা শুরু হয়ে গিয়েছে। খোলা বাজারে সেই আলুর জোগান এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত নয় ঠিকই। তবে কলকাতা-সহ রাজ্যের পাইকারি বাজারগুলিতে চলে এসেছে পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের আলু। সব মিলিয়ে জোগানে কোনও টান নেই। তাই হিমঘরে রাখা পুরনো আলু ব্যবসায়ীরা আর তুলবেন না বলেই মনে করছেন হিমঘর-মালিকদের একাংশ। ওয়েস্ট বেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পতিতপাবন দে বলেন, ‘‘বারবার বলা সত্ত্বেও অনেক ব্যবসায়ী মজুত আলু বার করে নিয়ে যাননি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দু’-এক দিনের মধ্যে তাঁদের কাছে নোটিস পাঠাব। সাড়া না-পেলে আলু নিলাম করে দেব। এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’’
উপায় নেই বলেই হুগলি ও বর্ধমানের বেশ কিছু হিমঘর-মালিক ইতিমধ্যে নিজেদের খরচে মজুত আলু বার করে দিয়েছেন। ডাঁই করে তা রাখা আছে হিমঘরের বাইরের চাতালে। এক হিমঘর-মালিক বলেন, ‘‘ঠান্ডার মরসুম বলে ১২ থেকে ১৫ দিন আলুর বিশেষ ক্ষতি হবে না। এর মধ্যেই সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নোটিস দেব। এলে ভাল। নইলে নিলামে বেচে দেব।’’ ধনেখালির বাসিন্দা গোবিন্দ ঘোষের হিমঘর আছে ভাণ্ডারহাটিতে। ‘‘এখনও সাড়ে তিন লাখ টন আলু আমার হিমঘরের চাতালে রয়ে গিয়েছে। দাম কমিয়েও খদ্দের পাচ্ছি না,’’ বললেন গোবিন্দবাবু।
আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য নেতা লালু মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি বুঝে হিমঘরে আলু রাখার সময় বাড়ানোর জন্য তাঁরা আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সরকার মানেনি। ‘‘এখন মানুষের কাছে টাকা নেই। তাই হিমঘর থেকে আলু তোলেননি অনেকেই,’’ বললেন লালুবাবু।
হিমঘর-মালিকেরা জানাচ্ছেন, বীজ ও সার কেনা থেকে হিমঘরে রাখা পর্যন্ত আলু চাষের সব ক’টি পর্যায়ের কাজই চলে ধারে এবং নগদে। এমনকী হিমঘরে রাখার সময়েও তাঁরা কোনও টাকাপয়সা নেন না। যখন হিমঘর থেকে আলু বেরোয়, তখন ব্যবসায়ীরা ভাড়া মিটিয়ে দেন।
কেন?
এক হিমঘর-মালিক বলেন, ‘‘খেত থেকে আলু ওঠার পরে তার মালিকানা বদল হয় অনেক বার। বাজারদর দেখে হিমঘরে রাখার পরেও আলুর বস্তা কেনাবেচা হয়। তাই যে-ব্যবসায়ী আলু বার করে করেন, তাঁর থেকেই ভাড়া নেওয়া হয়।’’ এ বার নগদ-লক্ষ্মী মুখ ফেরানোয় টন টন আলু পড়ে আছে হিমঘরে বা তার চাতালে। তাতে খুব মার খেয়েছে হিমঘরের ব্যবসাও।
ভাটার টান রফতানিতেও। তাই ভিন্ রাজ্যে পাঠিয়ে যে আলুর সদ্গতি করা যাবে, তারও উপায় নেই। আলু ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর যত ফলন হয়, মোটামুটি তার ৪০ শতাংশ পাঠানো হয় অন্য রাজ্যে। সাধারণ ভাবে অসম, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, ত্রিপুরার মতো রাজ্য থেকে বরাত চলে আসে পুজোর আগেই। রফতানি শুরু হয় নভেম্বরের গোড়া থেকে। কিন্তু এ বার নোট নাকচের ধাক্কায় বরাত কমে যাওয়ায় ডিসেম্বরের প্রথমেও হিমঘরগুলিতে ছ’লক্ষ টন আলু মজুত ছিল। বাঁকুড়ার ব্যবসায়ী বিপ্রদাস সাহু বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে এক হাজার কুইন্টাল আলু পাঠানোর বরাত পেয়েছিলাম। ১০ নভেম্বর রাতে ফোন করে সেই বরাত বাতিল করে দেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।’’ আর আরামবাগের কৃষ্ণেন্দু বাগের খেদ, ‘‘বরাত তো কমেই গিয়েছিল। যেটুকুও বা ছিল, নগদের আকালে তার অর্ধেকও পাঠাতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy