Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৩
Teenage Marriage

বিয়ে রুখে উদ্ধার ৩৮ বালিকাকে

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের তথ্য বলছে, ‘লকডাউন’ চলাকালীন জেলায় ৩৮ জন নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০৫:৩১
Share: Save:

আমপানের তাণ্ডবের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে জেলার সর্বত্র। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে সুন্দরবন। ঠিক তখনই মথুরাপুরে এক নাবালিকাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর মরিয়া চেষ্টা করছিল তার পরিবার। নাবালিকার অপরাধ: ভিন্ ধর্মের এক তরুণকে ভালবাসে সে। তার প্রেমিক, জেলা চাইল্ডলাইন এবং পুলিশের সক্রিয়তায় বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বানচাল করে গিয়েছে। আপাতত সেই পরিবার প্রশাসনের নজরবন্দি।

ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের তথ্য বলছে, ‘লকডাউন’ চলাকালীন জেলায় ৩৮ জন নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। সেগুলি প্রশাসনিক তৎপরতায় বন্ধ করা গিয়েছে। তবে, প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কতগুলি পরিবার তাদের ঘরের বালিকার বিয়ে দিয়ে দিয়েছে, তার তথ্য অবশ্য নেই। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, লকডাউন-পর্বে বালিকা নিখোঁজ অথবা পাচারের অভিযোগ এসেছে তিনটি। তাদের বাড়ি নরেন্দ্রপুর, বারুইপুর ও কুলতলিতে।

জেলার সিনি-চাইল্ডলাইনের কো-অর্ডিনেটর দেবারতি সরকারের কথায়, ‘‘কন্যাসন্তানকে দায় বলে মনে করে বহু পরিবার। সমস্ত প্রতিকূলতা এড়িয়েও দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। সেই কারণে লকডাউন পর্যায়ে প্রশাসনের কড়া নজরদারির মধ্যে থেকেও অনেকে নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করেছেন।’’

সমাজকল্যাণ দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, মার্চ-জুন পর্যন্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৬টি থানা এলাকা থেকে নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ আসে বিভিন্ন সূত্র থেকে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যক অভিযোগ (সাতটি) এসেছিল বাসন্তী থেকে। এ ছাড়া বকুলতলা, বিষ্ণুপুর, উস্তি, ডায়মন্ড হারবার মথুরাপুর, ধোলাহাট, কুলপি, রামনগর, মন্দিরবাজার এবং মগরাহাট-সহ অনেক এলাকা থেকেও অভিযোগ আসে।

রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘লকডাউন চলাকালীন মেয়ে পাচার এবং নাবালিকা বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে বলে আগেই প্রতিটি জেলার প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিলাম। আমাদের কাছেও নাবালিকার বিয়ে দেওয়া এবং পাচারের চেষ্টার অনেক অভিযোগ আসে। সকলের চেষ্টায় অনেক বিয়ে বন্ধ করা গিয়েছে।’’

দেবারতি দেবী জানান, মথুরাপুরে যে নাবালিকাকে জোর করে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর চেষ্টা হয়েছিল, সে ভিন্‌ ধর্মের এক তরুণকে ভালবাসে। তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি বালিকার পরিবার। তিনি বলেন, ‘‘একদিন যখন তাকে মারধর করা হচ্ছিল, তখন সে তার প্রেমিকের মোবাইলে ফোন করে। পরে মোবাইলটি পাশে রেখে দেয়। তার চিৎকার এবং ওই সময় যা হয়েছিল তার কথোপকথন রেকর্ড হয়েছে মোবাইলে। সেই ‘অডিয়ো ক্লিপ’ আমাদের কাছে পৌঁছে দেয় তার প্রেমিক। অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমরা মেয়েটির বিয়ে আটকাই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দ্রুত মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিল ওই পরিবার। পাত্র বেছেছিল বালিকার বাবার বয়সি এক ব্যক্তিকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE