কৌপীন-সম্বল, জটাধারী সাধু-সন্ন্যাসীদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন এখন আর কোনও চমক বহন করে না। সেই মুঠোফোনধারী সন্ন্যাসীরাও এ বার পুলকিত হতে পারেন এটা জেনে যে, শক্তিশালী ব্রডব্যান্ড আর থ্রি-জি মোবাইল পরিষেবা মিলবে গঙ্গাসাগরেও।
অত্যাধুনিক সেই যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাগরদ্বীপ অচিরেই শহরের সঙ্গে সমানে টক্কর নিতে পারবে বলে বিএসএনএল-কর্তৃপক্ষের দাবি। কারণ, এ বছরই প্রথম অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল বা ওএফসি-র মাধ্যমে কাকদ্বীপের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হল গঙ্গাসাগরের। ফলে শহরের মতোই দ্রুত গতির উন্নত মানের টেলি-পরিষেবা পাবেন তীর্থযাত্রীরা। বিএসএনএলের দাবি, আগামী দিনে গঙ্গাসাগরকে তারা স্মার্ট-আইল্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলবে।
বিএসএনএল সূত্রের খবর, গঙ্গাসাগরকে ঘিরে নতুন ন’টি টু-জি এবং আটটি থ্রি-জি টাওয়ার বসানো হয়েছে। ফলে টু-জি-র পাশাপাশি এ বার মোবাইলে থ্রি-জি পরিষেবাও মিলবে। আগে যে-পরিকাঠামোয় ইন্টারনেট বা মোবাইল পরিষেবা দেওয়া হতো, তাতে সীমাবদ্ধতা ছিল অনেকটাই। বাইরের জগতের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগও করা যেত না। কিন্তু এখন ওএফসি চলে আসায় কার্যত নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলেই বিএসএনএল এবং রাজ্য প্রশাসনের দাবি।
বিএসএনএলের (ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেল) চিফ জেনারেল ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ ঝা জানান, তাঁরা রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের ওএফসি ভাড়া নিয়ে থ্রি-জি মানের টেলি পরিষেবা পৌঁছে দিতে চলেছেন গঙ্গাসাগরে। যা এই প্রথম। ওই পরিকাঠামোর মোট ক্ষমতা আন্দামানের চেয়েও বেশি। ব্রডব্যান্ড পরিষেবার ন্যূনতম গতি হবে ১০ এমবিপিএস।
মেলার ৬০টি জায়গায় মিলবে ওয়াইফাই পরিষেবা।
গঙ্গাসাগরে টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন মহল। রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে সাগরযাত্রীদের তীর্থকর রদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাঘাট ও জেটির উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। চালু হয়েছে মৃত তীর্থযাত্রীদের জন্য বিমার ব্যবস্থাও। কিন্তু টেলি বা ব্রডব্যান্ড পরিষেবা নিয়ে হাজারো অভিযোগে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছিল জেলা প্রশাসনকে। সেই অভিযোগ এসে পৌঁছেছিল নবান্নেও। এ বছর নবান্নে গঙ্গাসাগর নিয়ে বিভিন্ন সরকারি দফতর ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে এই সমস্যার কথা ওঠে। ঠিক হয়, যেমন করে হোক, এ বছর সেই মেলার মাঠে টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হবে। ওএফসি লাইন নিয়ে যাওয়া হবে গঙ্গাসাগরে।
গঙ্গাসাগরের টেলি পরিকাঠামো ব্যবস্থা যে-ভাবে সাজানো হচ্ছে, তাতে তীর্থযাত্রীরা শহরের মতোই পরিষেবা পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএসএনএলের ওই সার্কেলের অন্যতম জেনারেল ম্যানেজার তমাল মৈত্র। তিনি বলেন, ‘‘ব্রডব্যান্ড পরিষেবা শক্তিশালী হয়ে যাওয়ার ফলে সিসিটিভি-র ফুটেজও অনেক স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’
গঙ্গাসাগরে থ্রি-জি, ব্রডব্যান্ডের ওএফসি-সরণি খুলল কোন জাদুতে?
বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা জানান, সময় খুব বেশি ছিল না। বিএসএনএল-কর্তৃপক্ষ এত অল্প সময়ের মধ্যে গঙ্গাসাগরে ওএফসি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সেই দায়িত্ব নেয়। গঙ্গাসাগরে বিদ্যুৎ সরবরাহের নদীর উপর দিয়ে বণ্টন সংস্থার বড় বড় টাওয়ার গিয়েছে। ঠিক হয়, ওই সব টাওয়ার দিয়েই ওএফসি লাইন নিয়ে যাওয়া হবে। সেই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থাকে। কাকদ্বীপ থেকে কচুবেড়িয়া পর্যন্ত নদীর উপর দিয়ে টাওয়ার ধরে ধরে সাড়ে ১১ কিলোমিটার ওএফসি লাইন নিয়ে গিয়েছে তারা। ফলে এক ধাক্কায় সাগরের টেলি-পরিকাঠামোর খোলনলচেই বদলে গিয়েছে। ঠিক হয়েছে, সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার ওএফসি ব্যবহারের জন্য আপাতত মাসে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দেবে বিএসএনএল। এই পরিষেবা ধাপে ধাপে ছড়িয়ে দেওয়া হবে সাগরের পার্শ্ববর্তী ন’টি পঞ্চায়েতেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy