Advertisement
০১ মে ২০২৪

পাহাড় পেরিয়ে পালালেন ৫ ডাক্তার

কয়েক দিন ধরে তাঁরা অসম্মান সহ্য করেই কাজ করছিলেন। কটু কথা শুনতে হচ্ছিল। ৮ জুলাই মোর্চা সমর্থকদের হুমকি এবং তাঁদের হাতে হেনস্থার পরে আর থাকার সাহস পাননি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

বর্ষার পাহাড়। গভীর রাত। কিন্তু উপায় নেই। তাকদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাঁচ চিকিৎসক সম্প্রতি রাতে এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। ৫ ঘণ্টায় ১৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌঁছন তিস্তা বাজার। তার পরে লরিতে শিলিগুড়ি। পাঁচ জনই সমতলের বাসিন্দা।

কয়েক দিন ধরে তাঁরা অসম্মান সহ্য করেই কাজ করছিলেন। কটু কথা শুনতে হচ্ছিল। ৮ জুলাই মোর্চা সমর্থকদের হুমকি এবং তাঁদের হাতে হেনস্থার পরে আর থাকার সাহস পাননি। অভিযোগ, মোর্চা সমর্থক এক সরকারি নার্সই ওই চিকিৎসকদের হেনস্থা করতে প্রধান ভূমিকা নেন। দফতরের তদন্তে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় সোমবারই ওই নার্সকে গোসাবা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু পালিয়ে আসা চিকিৎসকদের ভয় কাটেনি। তাঁরা কর্মক্ষেত্রে ফেরত যেতে চাইছেন না। ফলে তাকদা হাসপাতালে এখন পড়ে রয়েছেন ১ জন আয়ুষ ডাক্তার।

সারা পাহাড়েই সরকারি ডাক্তাররা আতঙ্কিত। দার্জিলিঙের পূর্ণ দায়িত্ব ও কালিম্পংয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অসিত বিশ্বাস স্বাস্থ্য ভবনকে জানান, দিন দিন পরিস্থিতি কঠিন হচ্ছে। বিগত দিনেও পাহাড়ে ঝামেলা হয়েছে, বন্‌ধ হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবায় এই ভাবে তার প্রভাব পড়েনি। হামলাকারীরা সেখানে হাত দেয়নি। এ বার দিচ্ছে। অসিতবাবুর কথায়, ‘‘পরিষেবা যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়বে। বিশেষত, যে চিকিৎসকেরা সমতল থেকে এসেছেন তাঁরা আতঙ্কে আর কাজ করতে চাইছেন না।’’

চার-পাঁচ দিন আগে কার্শিয়াং হাসপাতালের মাতৃযান শিলিগুড়িতে মা ও সদ্যোজাতকে নামিয়ে ফেরার সময় মোর্চা সমর্থকেরা সেটি আটকে পাথর ছুড়ে কাচ ভেঙে দেয়। চালক জানান, তিনি আর গাড়ি চালাবেন না। জেলার অন্য মাতৃযানের চালকেরাও বেঁকে বসছেন। শিলিগুড়ি থেকে রক্ত নিয়ে আসার সময় ভেঙে দেওয়া হয় কালিম্পং হাসপাতালের ব্লাড স্টোরেজ ভ্যান। গোলমাল শুরুর পর অ্যাম্বুল্যান্সে চিকিৎসক, নার্সদের আনা নেওয়া হচ্ছিল। মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায়, অ্যাম্বুল্যান্সে হামলা হবে বলে হুমকি আসছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গাড়ির অভাবে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা দূরবর্তী অঞ্চলে যেতে পারছেন না। বহু শিশুর রুটিন টিকাকরণ হচ্ছে না। স্বাস্থ্যকর্তারাই জানান, দু’মাসে দার্জিলিং-কালিম্পংয়ে টিকাকরণের হার কমেছে। এই অঞ্চলের ১৬৮টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সাপ্তাহিক রিপোর্ট স্বাস্থ্য ভবনে আসছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE