গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও চাকরি মেলেনি বাম আমলে। পরে নাকি প্যানেলই বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল! আইন-আদালতের দরজায় কড়া নেড়েও সুরাহা হয়নি। স্রেফ অপেক্ষাতেই এতগুলি বছর কাটিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। এখন সকলেই ৬০ অতিক্রম করেছেন। এত বছর পর যখন অবশেষে নিয়োগপত্র হাতে পেলেন, অবসরের বয়সই পেরিয়ে গিয়েছে তাঁদের!
এক-দু’জন নন, সম্প্রতি ৬৬ জনকে নিয়োগপত্র দিয়েছে হুগলির প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। দেখা গিয়েছে, তাঁদের সকলেরই বয়স ৬০ পেরিয়ে গিয়েছে। চার জন প্রয়াতও হয়েছেন। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিতর্কের আবহে এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে জেলা জুড়ে। এই বয়সে নিয়োগপত্র পেয়ে স্বাভাবিক ভাবে হতচকিত সেই সব প্রবীণ নাগরিকেরা। খোঁজ নিতে কেউ ছুটে গিয়েছেন নিয়োগপত্রে উল্লিখিত স্কুলে। কেউ আবার সার্কল অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করেছেন। এই ঘটনায় তদন্তের দাবি জানিয়েছে বাম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ। বিজেপির কটাক্ষ, অকর্মণ্যদের দিয়ে কাজ করালে এমনই হয়। এ নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের তরফে এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানানো না হলেও সূত্রের খবর, ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর কলকাতা হাই কোর্ট চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই মতোই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে ৬৬ জনকে। তাঁদের চাকরিতে নিয়োগ কার্যকর হয়েছে ২০১৪ সালের ৮ অগস্ট থেকে।
নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পরেই বৃহস্পতিবার সার্কলে চাকরিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন পাণ্ডুয়ার দীনবন্ধু ভট্টাচার্য। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সেই সময় বামফ্রন্ট সরকার ছিল। আমরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলাম। কিন্তু চাকরি পাইনি। পরে প্যানেল বাতিল হয়ে যায়। এত দিন পর শিক্ষা সংসদ নিয়োগপত্র পাঠাল। কী করে এটা হয়, বুঝতে পারছি না।’’ নিয়োগপত্র পাওয়া অচিন্ত্য আদক জানান, চাকরি না মেলায় তাঁরা ১৯৮৩ সালে মামলা করেছিলেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এখন কী করে সেই চাকরি দেওয়া হয়, ভেবেই পাচ্ছেন না ৭১ বছরের বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ‘‘ষাট বছরে তো অবসর হয়। এই বয়সে কী করে চাকরি করব?’’
এ বিষয়ে এবিপিটিএ-র কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহন পণ্ডিত বলেন, ‘‘এমন ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। অবসরের বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হচ্ছে! অনেকেই আমাদের ফোন করছেন। বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে তাঁরা এফেক্ট পাবেন। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরেই চাকরি চলে যাবে। এবং বলা হয়েছে, পঞ্চাশ লাখ টাকা করে পাবে। এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। আমরা তদন্ত চাই। চাই সত্য উদ্ঘাটিত হোক।’’ এ ব্যাপারে হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন শিল্পা নন্দীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘এখনই কিছু বলতে পারব না। যা বলার পরে বলব।’’
এ নিয়ে রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন পাল বলেন, ‘‘মারা গিয়েছে, এমন লোককেও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাকিদের কারও চাকরির বয়সই নেই। এমন একটা অকর্মণ্য সরকার চলছে, যাদের কাছে কোনও খবরই নেই যে কে বেঁচে আর কে মারা গিয়েছেন! হাই কোর্টে শিক্ষা সংসদের আইনজীবী ছিলেন। সেখানে কেন তথ্য আপডেট করা হয়নি। জনগণের টাকা এ ভাবে অপচয় করা হচ্ছে!’’ পাল্টা হুগলি জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালতের রায় তো কার্যকর করতেই হবে। সংশ্লিষ্ট দফতর সেই কাজই করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy