Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মমতার কথাতেও নড়েনি টনক, দার্জিলিঙে বহুতল ধসে মৃত ৭

যত বার দার্জিলিং গিয়েছেন, প্রতি বারই পাহাড়ে যথেচ্ছ বহুতল তৈরি নিয়ে উদ্বেগের কথা বলেছেন। ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তাতে কাজ না হওয়ায় বছর দেড়েক আগে রাজভবনের পাশে একটি বহুতল নির্মাণের কাজ নিজেই বন্ধ করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেও বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরি বন্ধ হয়নি।

উদ্ধার করা হচ্ছে এক শিশুকে। রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।

উদ্ধার করা হচ্ছে এক শিশুকে। রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ০৩:১০
Share: Save:

যত বার দার্জিলিং গিয়েছেন, প্রতি বারই পাহাড়ে যথেচ্ছ বহুতল তৈরি নিয়ে উদ্বেগের কথা বলেছেন। ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তাতে কাজ না হওয়ায় বছর দেড়েক আগে রাজভবনের পাশে একটি বহুতল নির্মাণের কাজ নিজেই বন্ধ করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেও বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরি বন্ধ হয়নি। কোথাও দোতলার উপরে আর এক তলা বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। কোথাও অনুমতির তোয়াক্কা না করে তিন তলার উপরেও উঠছে ঘর। তাই বিপদের আশঙ্কা ছিলই। আর তাই যেন সত্যি হল শুক্রবার। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ দার্জিলিঙের জাকির হোসেন বস্তিতে একটি চার তলা বাড়ি ধসে পড়ে মৃত্যু হয় সাত জনের। ষাটের দশকে তৈরি বাড়িটিকে পুরসভা আগেই ‘বিপজ্জনক’ বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু বাড়িটি খালি করা হয়নি।

বাড়ি ধসে পড়ায় চাপা পড়ে যান শিশু-বৃদ্ধ সহ ১৬ জন। বাড়িটির তিন তলার বাসিন্দা এক দম্পতি রাজেশ পারিয়ার (৪৫) ও অনিতাদেবী (৩৮) এবং তাঁদের বৃদ্ধা মা অমৃতাদেবীর (৬০) মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় উদ্ধার হয়েছে আর একটি পরিবারের নাসিমা বানু (৩৫), জামিলা বানু (৬৫) এবং কাশ্মীরি আলি (৪০)-র দেহ। বিকেলে উমে হাবিবার (২৮) দেহও উদ্ধার করেছে সেনা জওয়ানেরা। রাজেশ-অনিতার ৯ বছরের মেয়ে অঞ্জলিকে উদ্ধার করা হয়েছে। দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে সে। উদ্ধার হয়েছে এক সন্তানসম্ভবা মহিলা ও দুই শিশু-সহ আট জনকে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শনিবার বিকেলে পাহাড়ে পৌঁছন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি জানান, রাজ্য সরকারের তরফে মৃতদের ২ লক্ষ এবং আহতদের ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। জিটিএ-ও মৃতদের ২ লক্ষ এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ দেবে। দার্জিলিং পুরসভা জখমদের ৫০ হাজার টাকা করে দেবে বলে জানিয়েছে।

পাহাড়ের বাসিন্দাদের বক্তব্য, এই ঘটনার পরে এ বার অন্তত প্রশাসনের টনক নড়ুক। দার্জিলিং পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছরের গোড়ায় ১৮টি বিপজ্জনক উচ্চতার ভবন চিহ্নিত করা হয়। অন্তত ৪০টি পুরানো বাড়িতে ইচ্ছে মতো পিলার বাড়িয়ে ছাদ তৈরি করে ফেলা হয়েছে। তা-ও পুরসভার নজরে পড়ে। যেমন, দার্জিলিং বাজারের সি-বিল্ডিং নামে একটি চারতলা বাড়িকে অতি বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করেছে পুরসভা। চারতলা বাড়িটিতে চল্লিশ জন বাসিন্দা রয়েছেন। ভবনের প্রথম দু’তলায় রয়েছে ত্রিশটি দোকান। বাড়িটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে সকলকে অন্যত্র সরে যাওয়ার নোটিস দিয়েছে পুরসভা। কিন্তু তার পরে আর কোনও কড়া পদক্ষেপ হয়নি।

তবে রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘দার্জিলিঙের পুরোনো জরাজীর্ণ বহুতলগুলি নিয়ে জিটিএ এবং প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নিলে রাজ্যের তরফে যাবতীয় সাহায্য করা হবে।’’ সরকারি সূত্রের খবর, বহুবার বলা সত্ত্বেও জিটিএ-পুরসভা কথা না শোনায় ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে বার্তা দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া মনোভাবের আঁচ পেয়েই আসরে নামতে বাধ্য হয়েছেন জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গও। এ দিন তিনি জানান, দার্জিলিঙের বহুতলগুলি নিয়ে জিটিএ-র জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। পুরসভার সঙ্গেও বৈঠক হবে। তাঁর কথায়, ‘‘যে ভাবেই হোক এমন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হবে। আমরা কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

darjeeling landslide dead mamata bandopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE