জেলবন্দি শ্রমিকেরা।
ফোনটা এসেছিল দুপুরে। দুবাই বিমানবন্দর থেকে প্লেনে ওঠার আগে ফোন করেছে মানুষটা। বলছে, “নিপা আমি বাড়ি ফিরছি। শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরছি!”
আনন্দে পা কাঁপছিল ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা নিপা বিশ্বাসের। গলা বুজে এসেছিল। শুধু বলতে পেরেছিলেন, “সবাই অপেক্ষায় আছে।”
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর হাতে হাজার দুয়েক টাকা গত ২৬ অক্টোবর তানজানিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন হাঁসখালির হরিণডাঙার বিদ্যুৎ বিশ্বাস। বলে গিয়েছিলেন, বেতন পেলে টাকা পাঠাবেন। কিন্তু টাকা পাঠানো তো দূরের কথা, জাল ভিসা সমেত ধরা পড়ে চালান হন জেলে।
শুক্রবার সকালেই বগুলা থেকে ট্রেনে কলকাতায় রওনা হয়েছেন তানজানিয়ায় আটকে যাওয়া সকলের বাড়ির লোকজন। যেতে পারেননি শুধু নিপা। ডাক্তারের বারণ। কিন্তু মনটা যে মানে না। সারা দিন অস্থির ভাবে ঘর-বার করেছেন। বারবার ফোন করেছেন অন্যদের। জানতে চেয়েছেন, “আর কত দেরি দিদি?”
বাকিরা তখন দমদম বিমানবন্দরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায়। গোবিন্দ সরকারের স্ত্রী অঞ্জলি বলেন, “ক’দিন ধরেই দেশে ফেরা নিয়ে টানাপড়েন চলছিল। ৪ ডিসেম্বর আমরা জানতে পারি, ওরা শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারছে। সেই থেকেই সবাই ছটফট করছি, কখন মানুষগুলোকে দেখতে পাব।” একই অবস্থা সুজিত মণ্ডলের স্ত্রী অসীমারও। তিনি বলেন, “বেশি টাকা চাই না। ডালে-ভাতে থাকতে পারলেই খুশি। আর বিদেশে কাজে যেতে দেব না।”
ওই গ্রামেরই শ্রীমন্ত বিশ্বাসের হাত ধরে দালাল মারফত তানজানিয়ায় কাঠের কাজ করতে গিয়েছিলেন আট জন। সকলেই কাঠের মিস্ত্রি। একটু সুদিনের মুখ দেখবেন বলে মোটা সুদে লক্ষাধিক টাকা ধার করে বিদেশে পাড়ি দেন তাঁরা। কিন্তু জেল ঘুরে তাঁদের ফিরতে হল খালি হাতেই। মাথার উপরে মোটা টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে।
সে যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত যে ঘরের ছেলেরা নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারছে তাতেই খুশির হাওয়া গ্রাম জুড়ে। গ্রামের স্বপন সরকার বলছেন, “এখন থেকে বিদেশে যাওয়ার আগে সবাই দশ বার ভাববে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy