Advertisement
E-Paper

যন্ত্রের হাতে জিয়নকাঠি, অপেক্ষায় বাগডোগরা

সে এসে গিয়েছে। বসেও গিয়েছে কাজের জায়গায়। বিমান এসে পরীক্ষা করে গিয়েছে তার কার্যকারিতা। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র না-মেলায় কাজে নামতে পারছে না সে। অথচ এখন বাগডোগরা বিমানবন্দরকে বাঁচাতে পারে একমাত্র সে-ই।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৭ ০৪:৩২

সে এসে গিয়েছে। বসেও গিয়েছে কাজের জায়গায়। বিমান এসে পরীক্ষা করে গিয়েছে তার কার্যকারিতা। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র না-মেলায় কাজে নামতে পারছে না সে। অথচ এখন বাগডোগরা বিমানবন্দরকে বাঁচাতে পারে একমাত্র সে-ই।

সে একটি যন্ত্র। ‘ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম’ বা আইএলএস যন্ত্র। সেটি চালু করার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে চূড়ান্ত সার্টিফিকেট বা শংসাপত্রের। সেটা পেয়ে গেলেই ওই যন্ত্রকে কাজে নামিয়ে দেওয়া যাবে এবং তার কল্যাণে সকালের দিকে বাগডোগরায় বিমান ওঠানামায় আর কোনও সমস্যা হবে না। তখন আরও অনেক বেশি বিমানকে জায়গা দিতে পারবে ওই বিমানবন্দর।

আইএলএসের গুণ হল, ওই যন্ত্র সহায় হলে কুয়াশার মধ্যে দৃশ্যমানতা ৫০০ মিটার (পাইলট ৫৫০ মিটার উপর থেকে রানওয়ে দেখতে পেলেই) হলেই নামতে পারবে বিমান। কিন্তু সে না-থাকলে দৃশ্যমানতা ২১০০ মিটারের কম হয়ে গেলে বিমান নিয়ে আর নামতে পারবেন না পাইলট। বাগডোগরায় কুয়াশা বড় সমস্যা। সেখানকার বিমানবন্দরের অধিকর্তা রাকেশ সহায় জানান, বছরের বেশির ভাগ সময়েই সকালের দিকে বাগডোগরা কুয়াশায় ঢাকা থাকে। তাই বেশি উপর থেকে রানওয়ে পরিষ্কার দেখা যায় না। কুয়াশা চলাকালীন অনেক সময়েই বিমান সেখানে নামতে পারে না। এই প্রায় সারা বছরের প্রাকৃতিক ঝামেলায় অনেক ক্ষেত্রেই মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে হয়েছে বিমানকে।

আইএলএস (ক্যাটিগরি২) চালু হয়ে গেলে ৫৫০ মিটার উপর থেকে রানওয়ে দেখতে পেলেই নামতে পারবে বিমান। তখন বিভিন্ন বিমান সংস্থাকে রাজি করিয়ে সকালের দিকেও বেশ কিছু উড়ানকে বাগডোগরায় নিয়ে আসা যাবে বলে জানান বিমানবন্দর-অধিকর্তা। উড়ান বাড়লে কপাল খুলবে বাগডোগরার।

ব্যস্ততার নিরিখে বাগডোগরা এখন দেশের ২৭তম বিমানবন্দর। ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরের চেয়ে ২০১৬-’১৭ বছরে ৪০ শতাংশ যাত্রী বেড়েছে সেখানে। উড়ানের হার বেড়েছে ৩১ শতাংশ। গত এক বছরে এতটা বৃদ্ধি ভারতের আর কোনও বিমানবন্দরে হয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের অফিসারেরাই। কিন্তু সমস্যা হল, বাগডোগরায় বেশির ভাগ বিমানকেই ওঠানামা করতে হচ্ছে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এই সময়ের মধ্যে নতুন কোনও বিমান বাগডোগরায় আসতে চাইলে তাকে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয় বলে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর। নতুন করে কেউ বাগডোগরায় উড়ান চালু করতে চাইলে বা এখন যারা বিমান চালাচ্ছে, তারা উড়ান বাড়াতে চাইলে তাদের হয় বেলা সাড়ে ১১টার আগে অথবা সন্ধ্যা ৬টার পরে ওঠানামা করতে হবে।

বাগডোগরায় রাতে বিমান ওঠানামার পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই সন্ধ্যা ৬টার পরে বিমানের উঠতে বা নামতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বিমান সংস্থাগুলি রাতে বাগডোগরা থেকে উড়ান চালাতে চায় না। তাদের বক্তব্য, সন্ধ্যার পরে পর্যটকেরা বাগডোগরা যেতে চান না। কারণ, সন্ধ্যার পরে সরাসরি পাহাড়ে যাওয়া যায় না। সন্ধ্যার উড়ানে বাগডোগরায় পৌঁছলে পাহাড়ে যাওয়ার জন্য পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। অর্থাৎ একটা রাত শিলিগুড়িতে কাটাতেই হবে। পর্যটকেরা সেই অতিরিক্ত খরচ বহন করতে রাজি নন। সে-ক্ষেত্রে সকালের উড়ান অনেক বেশি বাস্তবসম্মত এবং তা থেকে আয় হতে পারে বলে মনে করছেন বিমান সংস্থার কর্তারা।

সমস্যা সমাধানের আরও একটি রাস্তা আছে। সেটি অতিরিক্ত জমি। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই জমি অধিগ্রহণ করে বিমানবন্দরকে দেবে, নাকি বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ সরাসরি তা কিনে নেবেন, তা নিয়ে এখনও টানাপড়েন চলছে। বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ আইনত সরাসরি জমি কিনতে পারেন না বলেই জানাচ্ছেন সেখানকার এক অফিসার।

Bagdogra Airport Instrument landing system Certificate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy