Advertisement
E-Paper

দোয়া করুন, বোনের দেহ নিয়ে যেন সীমান্তটা পেরিয়ে যেতে পারি! সঙ্গে ছাড়পত্র, তবু চিন্তায় ঢাকার নোমান

নোমানের বাড়ি ঢাকার কাছেই। তাঁর বোন নাবিলা দীর্ঘ দিন ধরেই নানা সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁকে ভারতের ভেলোরে এনে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন দাদা নোমান।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ১৭:০৪
এই অ্যাম্বুল্যান্সেই বোনের দেহ এবং মাকে নিয়ে সীমান্ত পেরোনোর কথা নোমান হোসেনের।

এই অ্যাম্বুল্যান্সেই বোনের দেহ এবং মাকে নিয়ে সীমান্ত পেরোনোর কথা নোমান হোসেনের। — নিজস্ব চিত্র।

মাসখানেক আগে মা এবং অসুস্থ বোনকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন নোমান হোসেন। তখনও ওপার বাংলা শান্ত। আন্দোলনের আগুন জ্বলেনি। নির্বিঘ্নেই সীমান্ত পেরিয়ে তিন জনে পৌঁছেছিলেন চেন্নাইয়ের ভেলোরে। চিকিৎসার জন্য। এক মাস পরে তাঁরা আবার ফিরছেন। তবে তিন নয়, দু’জন। ভেলোর থেকে ফেরার পথে মারা গিয়েছেন নোমানের বোন। যদিও সন্তাপের সময় পায়নি পরিবার। বোনের দেহ নিয়ে দেশে ফিরছেন নোমান। ঢাকার পথে ফেরার যাত্রা শুরুর আগে তাঁদের চিন্তা একটাই— নিরাপদে সীমান্তটা পেরিয়ে যাওয়া! কারণ, গত এক মাসে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। তাঁদের জীবনের মতোই আমূল বদলেছে তাঁদের দেশও।

নোমানের বাড়ি ঢাকার কাছেই। তাঁর বোনের নাম নাবিলা আখতার। বয়স ২০। দীর্ঘ দিন ধরেই নানা সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছিলেন নাবিলা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছিল। দেশে চিকিৎসা করেও সুরাহা না হওয়ায় ভারতে এসে বোনের চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন দাদা নোমান। বছর তিরিশের ওই যুবক নিজের বেসরকারি চাকরি ছেড়ে, জমিজিরেত বিক্রি করে, অসুস্থ বাবাকে একলা বাড়িতে রেখে মা আর বোনকে নিয়ে এসে পৌঁছন ভারতে। কিন্তু বিধি বাম। তার পরেও বোনকে বাঁচাতে পারেননি নোমান। ভেলোর থেকে ফেরার পথেই মৃত্যু হয় বোনের।

তার পরে শুরু হয় এক অন্য যুদ্ধ। সোমবার বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে এসেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষমতা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশের সেনা। জটিল হয়ে উঠেছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পরিস্থিতি। ৪০৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সড়ক, রেল এবং আকাশপথে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ভারত-বাংলাদেশ। মঙ্গলবার সীমান্ত বাণিজ্যের কারণে খোলা হয়েছে শুধু পেট্রাপোল সীমান্ত। বয়স্ক মা এবং মৃত বোনের দেহ নিয়ে দেশে ফিরতে গিয়ে আতান্তরে পড়েছিলেন নোমান। সীমান্ত পেরোনোর অনুমতি পেতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল। দরজায় দরজায় নথিপত্রের বোঝা নিয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন তিনি। অবশেষে কলকাতার বাংলাদেশ উপ হাই কমিশন থেকে ‘বিশেষ ছাড়পত্র’ মিলেছে। তাঁদের জানানো হয়েছে, অ্যাম্বুল্যান্সে নাবিলার দেহ নিয়ে সীমান্ত পেরোতে পারবেন তাঁরা।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি এখনও। বরং ঘটনাপ্রবাহ বলছে, মঙ্গলবার বাংলাদেশের পরিস্থিতির আরও অবনতিই হয়েছে। বহু জায়গায় হামলা চালিয়েছে জনতা। সোমবারেই মৃত্যু হয়েছে ১০৯ জনের। যদিও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে নোমান চিন্তিত নন। মঙ্গলবার সকালে পেট্রাপোল সীমান্ত খুলে দিয়েছে বিএসএফ। সীমান্ত পেরোনোর অনুমতিপত্র হাতে নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনকে নোমান বলেছেন, ‘‘দোয়া করুন, বোনের দেহ নিয়ে যেন সীমান্তটা নির্বিঘ্নে পেরিয়ে যেতে পারি।’’

Bangladesh Crisis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy