Advertisement
E-Paper

MA Pass: ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’, সমাজকে বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে এমএ পাশ মেয়ের চায়ের দোকান

টুকটুকি বুঝতে পারছিলেন, এ রকম বেশি দিন চলতে থাকলে হতাশা বাসা বাঁধবে। চাকরির মুখ চেয়ে বসে থাকলে চলবে না বলে মনস্থ করেন এক সময়ে।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৩৬
চায়ের দোকান চালাচ্ছেন স্নাতকোত্তর টুকটুকি দাস।

চায়ের দোকান চালাচ্ছেন স্নাতকোত্তর টুকটুকি দাস। ছবি: সুজিত দুয়ারি

তাঁর স্বপ্ন, নিজের দোকানকে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবেন। ‘ব্র্যান্ড’ তৈরি হবে এই নামেই।

কিন্তু দোকানের সেই নামই যেন সমাজকে বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’— নামে সোমবার থেকে এই চায়ের দোকান চালু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। মালকিন বছর ছাব্বিশের স্থানীয় যুবতী টুকটুকি দাস। রবীন্দ্রভারতী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষায় ইংরেজিতে ৬১ শতাংশ নম্বর নিয়ে স্নাতকোত্তর হয়েছেন বছরখানেক আগে। চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন একাধিক। কিন্তু হাতে থেকেছে শুধুই পেনসিল।

টুকটুকি বুঝতে পারছিলেন, এ রকম বেশি দিন চলতে থাকলে হতাশা বাসা বাঁধবে। চাকরির মুখ চেয়ে বসে থাকলে চলবে না বলে মনস্থ করেন এক সময়ে। শুরু হয় টুকটুকির অন্বেষণ। তাঁর বাবা প্রশান্ত বাড়িতেই মুদির দোকান চালান। সংসার টানতে মাঝে মধ্যে ভ্যানরিকশাও চালাতে হয়। তখন দোকানে বসেন টুকটুকির মা। দাদা থাকেন মধ্যমগ্রামে। পারিবারিক পুঁজি নেই যে বড় ব্যবসা দাঁড় করাবেন টুকটুকি।

ইউটিউব ঘাঁটতে ঘাঁটতে তিনি এক দিন খোঁজ পান মুম্বইয়ের এক চায়ের দোকানের। সেটিও তৈরি করেছেন উচ্চশিক্ষিত এক যুবক। দোকানের নাম দিয়েছেন নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে জুড়ে দিয়ে। সেই নামই ক্রমশ ‘ব্র্যান্ড’ হয়ে উঠছে ইদানীং। পথটা মনে ধরে টুকটুকির। কিন্তু কথাটা হজম করতে পারছিলেন না বাবা-মা, প্রশান্ত-দেবিকারা। হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজ থেকে ইংরেজি নিয়ে পাস করে, এমএ উত্তীর্ণ মেয়ে খুলবে চায়ের দোকান! তা-ও নিজের এলাকায়। পাঁচ জন কী বলবে?

জেদ ধরে বসেন টুকটুকি। তাঁদের বোঝান, চাকরি না পাওয়ার হতাশায় ডুবে যাওয়ার পথ তাঁর জন্য নয়। বরং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখবেন সম্মানজনক উপায়ে। ইউটিউব থেকে এ ধরনের আরও চায়ের দোকান খুঁজে বাবা-মাকে দেখান তিনি, যা তৈরি হয়েছে শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের উদ্যোগে।

এক সময়ে মত দেন বাবা-মা। সেই মতো মাসে আঠারোশো টাকায় চার ফুট বাই চার ফুটের দোকান ভাড়া নিয়ে ফেলেছেন টুকটুকি। সোমবার থেকে চালু হয়েছে চা বিক্রি। ৫ থেকে ৩৫ টাকা দামের নানা রকম চা মিলছে। একা হাতেই সব সামলাচ্ছেন টুকটুকি। দোকানের শুভ মহরতে অনেককে বিনা পয়সায় চা খাইয়েছেন বলে জানালেন।

লোকজন কী বলছেন? একগাল হাসলেন মেয়ে। বললেন, ‘‘প্রথম দিন অনেকে খুব উৎসাহ দিয়ে গেলেন।’’ কিন্তু শুরুর লড়াইটা ছিল ঘরে-বাইরে। চায়ের দোকান দেবে একটা মেয়ে, এ কথা শুনে অনেকে দোকান ভাড়াই দিতে চাইছিলেন না। অনেকে বলেছেন, ‘এ সব তোমার দ্বারা হবে না।’ সে কথা শুনে চোয়াল আরও শক্তই হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মনে করি, কোনও কাজই ছোট নয়। ইচ্ছে আছে, চায়ের দোকানটাকে দাঁড় করিয়ে নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করব। নিজের পরিচিতি গড়ে তুলব।’’

কিন্তু দোকানের নাম এমন ধারা কেন? শিক্ষিত হয়েও চাকরি না পাওয়ার যন্ত্রণা? শিক্ষাব্যবস্থাকে কটাক্ষ?

‘‘না না, ও সব কিছু নয়’’— বলছেন টুকটুকি। তাঁর কথায়, ‘‘দোকানের নামে নতুনত্ব রাখতে চেয়েছি। শিক্ষিত হয়েও যে কোনও কাজে এগিয়ে আসা যায়, সেই বার্তাও হয়তো আছে এই নামে।’’

কিন্তু এমএ পাস মেয়ের চায়ের দোকানের এ হেন নাম কি রাজ্যের শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। সে কথা মনে করছেন না অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার। তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওঁকে অভিনন্দন জানাব। হেরে যাননি। বরং শ্রমের সম্মান বজায় রেখে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন। যুদ্ধ করছেন।’’ কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, সমাজের কিছু নির্দিষ্ট ধারণা থেকেই প্রচলিত চাহিদা হল, সরকারি চাকরি। দেশের সামাজিক কাঠামো অনুযায়ী কে কী ধরনের কাজ করবেন, তা যেন গতে বাঁধা। তাঁর কথায়, ‘‘এটি কর্মসংস্থান নয়, সমাজের সমস্যা। বাঁধা গতে না চললে বলা হয়, কিছুই যেন হল না জীবনে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy