অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসা করাতে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে এসেছিলেন এক ব্যবসায়ী। যে ‘বন্ধু’র আশ্রয়ের ভরসায় এসে উঠেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায়, সে-ই ছক কষে অপহরণ করিয়েছিল মহম্মদ মহসিন কবীর (৩৫) নামের ওই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে। তবে দুষ্কর্মের শেষ রক্ষা হয়নি। দেড় দিনের চেষ্টায় ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচ জনকে।
উদ্ধার হওয়া কবীরের বাড়ি বাংলাদেশের যশোহর জেলার শার্শায়। তাঁর বাবা ৫৯ বছরের আলহাজ জাকির হোসেন বেশ কিছু দিন ধরে বেশ অসুস্থ। অনেক বছর ধরেই কবীরের আলাপ ছিল বর্তমানে হাবরার বাসিন্দা শিবব্রত চক্রবর্তীর সঙ্গে। শিবব্রত ২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশেই থাকত। তার পর চলে আসে এ দেশে। হাবরায় এসে হোসিয়ারির ব্যবসা খুলে বসে। শিবব্রতই কবীরকে বলে বাবাকে কলকাতায় এনে চিকিৎসা করাতে। হাবরায় তার নিজের বাড়িতেই সে থাকতে বলে কবীর এবং তাঁর বাবাকে। বন্ধুর মতো বিশ্বাস করে, আর ভরসা রেখেই, শেষ পর্যন্ত বিপদে পড়ে যেতে হল তাঁদের। ঘুণাক্ষরেও কবীর টের পাননি, ভাল মানুষের মুখোশ পরে শিবব্রতর মনে আসলে অন্য কিছু খেলা করছে!
আরও পড়ুন: শূন্য হাতে বাড়ি ফেরত, ধাক্কা গ্রামের ব্যবসায়ও
গত সোমবার বৈধ ভিসা এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে অসুস্থ বাবাকে সঙ্গে নিয়ে এ দেশে আসেন মহম্মদ মহসিন কবীর। কথা মতো ওঠেন হাবরার নতুনগ্রামে শিবব্রতর বাড়িতে। গত মঙ্গলবার হাসপাতালে দেখাতে যাওয়ার জন্য বাবাকে নিয়ে হাবরা স্টেশনের দিকে রওনা দিয়েছিলেন কবীর। অভিযোগ, শিবব্রতর বাড়ি থেকে কিছু দূর যেতেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ি থেকে কিছু লোক বেরিয়ে এসে কবীরের মুখ চেপে ধরে। কিছু ক্ষণ ধস্তাধস্তির পর তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে চম্পট দেয় অপহরণকারীরা। এর পরেই বৃদ্ধ জাকির হোসেনের কাছে ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ফোন আসে। সে দিনই তিনি অভিযোগ জানান হাবরা থানায়।
অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করে। শিবব্রতর কথায়বার্তায় জোরালো সন্দেহ হয় পুলিশের। গ্রেফতার করা হয় শিবব্রত চক্রবর্তীকে। পুলিশের জেরার মুখে সে জানায়, বাংলাদেশ থেকে তাঁদের এ দেশে এনে অপহরণের পরিকল্পনা তারই ছিল। চিকিৎসার জন্য বেশি করে টাকাও নিয়ে আসতে বলেছিল সে। পুলিশ জানায়, আনিসুর মহম্মদ গাজি এবং আনোয়ার হোসেন নামে স্থানীয় দুই দাগি দুষ্কৃতী-সহ আরও চার জনকে বাদুড়িয়ার আটুলিয়া গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। ওই গ্রামেরই একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল কবীরকে। আজ সকালে সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।