E-Paper

‘দাদারা বলেছিল, ঘটনা নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা যাবে না, যা বলছি শুধু সেটাই শুনে যেতে হবে’

সেই রাতের কথা বলতে গিয়ে মেন হস্টেলের আবাসিক পঞ্চম বর্ষের ছাত্রের কথাবার্তায় ধরা পড়ল প্রচুর অসঙ্গতি। হাত কাঁপছিল তাঁর। বলেন, ‘‘এখানে তো র‌্যাগিং হয় না।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৪৩
Graphical representation

—প্রতীকী ছবি।

যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে ১০ দিন।

সেই রাতের কথা বলতে গিয়ে মেন হস্টেলের আবাসিক পঞ্চম বর্ষের ছাত্রের কথাবার্তায় ধরা পড়ল প্রচুর অসঙ্গতি। হাত কাঁপছিল তাঁর। বলেন, ‘‘এখানে তো র‌্যাগিং হয় না।’’

তা হলে এত কিছু যে হল, তা কেন হল? ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে ওই পড়ুয়া বলেন, ‘‘এখানে নতুন ছাত্রের সঙ্গে ইন্ট্রোর সময় অনেক কিছুই হতে পারে।’’ চার-পাঁচটি প্রশ্নের পরে বলেন, ‘‘র‌্যাগিং করতে গিয়ে কেউ উপর থেকে কাউকে ঠেলে ফেলে দেবে, এ রকম হতে পারে না।’’ একটু পরে আবার তিনি নিজেই বললেন, ‘‘কারও প্রতি কোনও কারণে রাগ থাকলে ঠেলে ফেলেও দিতে পারে।’’

ক্লাস আছে বলে যাদবপুর মেন হস্টেল থেকে শুক্রবার দুপুরে বেরোচ্ছিলেন পঞ্চম বর্ষের ওই ছাত্র। সেই রাতে কী হয়েছিল, সে কথা জানতে চাইলে ওই ছাত্র প্রথমে কিছুই বলতে চাননি। শেষে জানান, ৯ অগস্টের রাতে হস্টেলের মাঠে যে দু’টি সাধারণ সভা (জিবি) হয়েছিল, তার দু’টিতেই তিনি উপস্থিত ছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘দাদারা বলেছিল, ঘটনা নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা যাবে না। যা বলছি শুধু সেটাই শুনতে হবে।’’

ওই ছাত্র জানান, হস্টেলের মাঠে প্রথম জিবি শুরু হয়েছিল রাত ২টো নাগাদ। তাঁরা প্রশ্ন করেছিলেন, ওই ছাত্রকে নগ্ন অবস্থায় কেন পাওয়া গেল? ওই ছাত্রের দাবি, তার উত্তর স্পষ্ট করে কিছু দেননি জিবি-তে উপস্থিত সৌরভ চৌধুরীরা। ছাত্রের কথায়, ‘‘সৌরভদাদা ভীষণ টেনশন করছিল। এক বার বলেছিল ও (মৃত ছাত্র) খুব ভয় পেয়ে অসংলগ্ন আচরণ করছিল। এর মধ্যে আবার দীপশেখর দত্ত বলে ওঠে, ওই ছাত্র বার বার ও গে (সমকামী) নয় বলছিল এবং এক মহিলা বন্ধুর নামও বলেছিল। তখন জিবিতে প্রশ্ন ওঠে, ওই ছাত্র সমকামী কি না সেই প্রসঙ্গ উঠল কেন? দাদারা অবশ্য এর কোনও উত্তর দিতে পারেনি। শুধু তারা বলেছিল, এত সব প্রশ্ন করা যাবে না।’’ ওই ছাত্র অবশ্য বলেন, ‘‘নগ্ন করে র‌্যাগিং করার কথা আমি আগে শুনিনি। আমাদের ও রকম করে র‌্যাগিং হয়নি। তবে আমাদের এখানে ইন্ট্রোর নামে অনেক কিছুই হতে পারে, যা আমরা জানি না। দাদারাই বলতে পারবে।’’

ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, হস্টেলে থাকার জন্য লাগে মাসে ২৫ টাকা। এবং মেসে খাবারের খরচা মাসে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু যাঁরা নবাগত, যাঁরা হস্টেলে গেস্ট বা অতিথি হিসেবে থাকতে শুরু করেন, তাঁদের অতিরিক্ত ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো দিতে হয়।

কেন এই অতিরিক্ত টাকা?

এ প্রসঙ্গে এক ছাত্র দাবি করেছেন, হস্টেলের ইলেকট্রিকের খরচ-সহ আরও বেশ কিছু খরচের জন্য এই অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। কিন্তু তার জন্য ছাত্রপিছু ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা? অভিযোগ উঠেছে, নবাগত ছাত্রদের থেকে এই অতিরিক্ত যে টাকা তোলা হত, তাতেই বসত মদ-গাঁজার আসর। অতিরিক্ত সেই টাকা রাজনৈতিক দলের তহবিলেও যায়।

(পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী রবিবার তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টে যাদবপুরের মৃত ছাত্রের নাম না-লিখতে অনুরোধ করেছেন। এই মৃত্যুমামলা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর যৌন নির্যাতন বিরোধী ‘পকসো’ আইনে হওয়া উচিত বলেও তাঁর অভিমত। কমিশনের উপদেষ্টার অনুরোধ মেনে এর পর আনন্দবাজার অনলাইন মৃত ছাত্রের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে।)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jadavpur University Student

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy