মুখ লুকিয়ে পালাচ্ছেন পিওন (বাঁ দিকে), অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটের ঠিকানায় ‘কাগুজে সংস্থার’ হদিস (ডান দিকে) গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
কেঁচো খুড়তে কেউটে! অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পর তদন্তের জাল যত বিছানো হচ্ছে, ততই একের পর এক নতুন তথ্য উঠে আসছে। প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রাক্তন পদাধিকারী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার বেলঘরিয়ার যে ফ্ল্যাট থেকে ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ নগদ টাকা এবং প্রচুর সোনা পাওয়া গিয়েছে, সেই ঠিকানায় ‘জামিরা সানশাইন্স লিমিটেড’ নামে একটি রিয়্যাল এস্টেট সংস্থার নাম নথিভুক্ত করা রয়েছে। ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে যাঁর নাম রয়েছে, তিনি আদতে অন্য একটি সংস্থার পিওন!
এমনই নয়া এবং চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে। কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটের ঠিকানায় ওই রিয়্যাল এস্টেট সংস্থার হদিস পাওয়া গিয়েছে। ওই সংস্থার ডিরেক্টরের খোঁজে বেরিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন।
ডিরেক্টরের নাগাল পেতেই নতুন রহস্য উন্মোচিত! ওই রিয়্যাল এস্টেট সংস্থার ‘ডিরেক্টর’ পদে যে ব্যক্তির নাম রয়েছে, তিনি কলকাতার বাসিন্দা দেবাশিস দেবনাথ। আদতে তিনি অন্য একটি সংস্থায় ‘পিওন’ হিসাবে কর্মরত। ২০২০ সাল থেকে ওই রিয়্যাল এস্টেট সংস্থার ডিরেক্টর পদে আসীন দেবাশিস।
কিন্তু পিওন থেকে রিয়্যাল এস্টেট সংস্থার ডিরেক্টর কী ভাবে হলেন তিনি? প্রশ্ন করতেই আনন্দবাজার অনলাইনকে দেবাশিস বললেন, ‘‘আমি কিছু জানি না। যা জানেন স্যার জানেন।’’ কে এই স্যার? এই প্রশ্ন করতেই মেজাজ হারিয়ে তাঁর জবাব, ‘‘সেটা আপনাকে বলব কেন?’’ এর পরই মুখ লুকিয়ে দৌড় লাগান দেবাশিস নামে ওই ব্যক্তি। ‘স্যার’ বলতে কাকে বোঝাতে চাইলেন দেবাশিস? কেনই বা ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখে মুখ লুকিয়ে পালালেন তিনি? দেবাশিসের আচরণেও নতুন রহস্য দানা বাঁধছে।
দেবাশিসের প্রতিবেশীদের মধ্যে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেছে আনন্দবাজার অনলাইন। তাঁরা জানিয়েছেন, পাড়ায় সেভাবে কারও সঙ্গেই মেলামেশা নেই দেবাশিসের। গত কয়েক দিন ধরে দেবাশিস যে অফিস যাচ্ছেন না, সেটাও নজরে পড়েছে পড়শিদের।
প্রসঙ্গত, জানা যাচ্ছে, ওই রিয়্যাল এস্টেট সংস্থার যে ইমেল আইডি উল্লেখ করা হয়েছে, ইংরেজিতে তার প্রথম তিনটি শব্দ হল ‘এআরপি’। অর্পিতার নামে আরও যে দুই সংস্থার (সিমবায়োসিস মার্চেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড এবং সেন্ট্রি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড) হদিস পেয়েছেন তদন্তকারীরা, সেই দুই সংস্থার ইমেল আইডিও একই। সূত্রের খবর, বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে যে সংস্থার হদিস পাওয়া গিয়েছে, ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদেও একসময় আসীন ছিলেন অর্পিতা। কিন্তু পরে কোনও কারণে তিনি পদত্যাগ করেন।
এখন প্রশ্ন— কেন এত সংস্থা খুলে রাখা হয়েছিল? তদন্তকারীদের একাংশের সন্দেহ, বিদেশে টাকা পাচারের জন্য ওই সংস্থাগুলি তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে।
লক্ষণীয়, অর্পিতার ‘ইচ্ছে এন্টারটেনমেন্ট’ নামে সংস্থার ঠিকানাও ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী। গত বুধবার কসবার রাজডাঙা এলাকায় ওই সংস্থার অফিসে তল্লাশি চালায় ইডির দল। তখনই এক ব্যক্তি তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেন, ওই ঠিকানায় যে অফিসঘরটি রয়েছে, সেটি আদতে তাঁদের। ওই সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে যাঁর নাম নথিভুক্ত করা রয়েছে তিনি কল্যাণ ধর। খাতায়-কলমে তাঁর নাম ‘ডিরেক্টর’ হিসাবে থাকলেও আদতে তিনি ওই সংস্থার গাড়িচালক বলে জানা যায়। শুধু তা-ই নয়, সম্পর্কে তিনি অর্পিতার জামাইবাবু হন।
ওই ঘটনার পর বেলঘরিয়ায় অর্পিতার ফ্ল্যাটের ঠিকানায় যে সংস্থার হদিস পাওয়া গেল এবং তার ডিরেক্টর পদে থাকা ব্যক্তির ‘পিওন’ পরিচয় প্রকাশ্যে এল, তাতে এই রহস্যের জাল কতটা বিস্তৃত, তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। বস্তুত, বেলঘরিয়ায় অর্পিতার ফ্ল্যাটের ঠিকানায় রিয়্যাল এস্টেট সংস্থার কোনও অফিসই নেই! ইডি সূত্রের দাবি, আদতে সেটি ‘কাগুজে সংস্থা’। কিন্তু কেন এমন সংস্থা খোলা হল? কালো টাকা সাদা করতেই কি এই ধরনের ‘কাগুজে সংস্থা’ চালানো হচ্ছিল? তা নিয়েও তদন্ত শুরু করেছেন ইডি আধিকারিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy