প্রতীকী ছবি।
পারিবারিক অশান্তির জেরে ছেলে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আত্মঘাতী হলেন অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মী। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটে সোদপুরের নীলগঞ্জ রোডে। মৃত ওই ব্যক্তির নাম বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় (৬০)। গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁর স্ত্রী তন্দ্রা বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৬) এবং ছেলে সুমনকে (৩৫) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
ঠিক কী হয়েছিল?
পুলিশ জানিয়েছে, বিপ্লববাবুর আসল বাড়ি ছিল সোদপুরের ইন্দ্রলোকে। বছর খানের আগে সেই বাড়ি বিক্রি করে নীলগঞ্জ রোডের একটি আবাসনে তিন তলায় ফ্ল্যাট কেনেন। সেখানে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন বিপ্লববাবু। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, এ দিন ভোর পৌনে পাঁচটা নাগাদ ওই ফ্ল্যাট থেকে বাঁচাও…বাঁচাও বলে চিত্কার শুনতে পান তাঁরা। সেখানে গিয়ে দেখেন ফ্ল্যাটের কোলাপসিবল গেটে তালা দেওয়া এবং মূল দরজা আলতো করে ভেজানো। তাঁরা কোলাপলিবল গেটের মধ্য দিয়ে হাত বাড়িয়ে দরজাটা খুলতেই রক্তাক্ত অবস্থায় সুমনকে পড়ে থাকতে দেখেন। গেট খুলতে না পারায় প্রতিবেশীদেরই এক জন খড়দহ থানায় ফোন করে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে গেট ভেঙে ঘরে ঢোকে। ড্রয়িং রুমে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন সুমন। পাশের ঘরে বিছানার উপর উপুড় হয়ে পড়েছিলেন তন্দ্রাদেবী। তাঁর বুকে, পেটে, হাতে ধারাল অস্ত্রের কোপ। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল বিছানা। এর পর অন্য একটি ঘর থেকে বিপ্লববাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ তন্দ্রাদেবী ও সুমনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
যে ঘর থেকে বিপ্লববাবুর দেহ উদ্ধার হয় সেখানেই টেবিল থেকে একটি সুইসাইড নোট পায় পুলিশ। সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, মানিসক ভাবে তিনি বিধ্বস্ত, নিজেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। পরিবারকে টানতে গিয়ে বাজারে অনেক ধার-দেনা হয়ে গিয়েছে। তাই তিনি আত্মহত্যা করছেন। তবে সুইসাইড নোটে কোথাও লেখা ছিল না স্ত্রী ও ছেলেকে কোপানোর কথা।
সুইসাইড নোটের পাশাপাশি একটি লাল ডায়েরিও উদ্ধার করে পুলিশ। তা খতিয়ে দেখার পর জানা যায়, বাইরে ৭০ হাজার টাকার মতো দেনা ছিল বিপ্লববাবুর। পুলিশের অনুমান, শুধু দেনা নয়, মানসিক অবসাদে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বিপ্লববাবু।
কেন এমন হল?
পুলিশ জানিয়েছে, ছেলে সুমনের কেরিয়ার নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করতেন বিপ্লববাবু। সুমন নিজে টিউশন করতেন। তা থেকে সামান্য আয় হত। পাশাপাশি বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার জন্য চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হয়েছেন বার বার। এ দিকে ছেলের পড়াশোনা এবং সংসার চালাতে গিয়ে নিজের জমানো টাকাও প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে বাজারে বেশ কিছু টাকা ধার হয়ে গিয়েছিল তাঁর। নিজে সরকারি কর্মী ছিলেন অথচ ছেলের কোনও চাকরি না হওয়ায় কিছুটা মানসিক অবসাদেও ভুগছিলেন বিপ্লববাবু। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই অশান্তি চলত।
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট-এর পরীক্ষায় বসেছিলেন সুমন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মৌখিক পরীক্ষায় ব্যর্থ হন। এটা কোনও ভাবে মেনে নিতে পারেননি বিপ্লববাবু। এ দিন অশান্তি চরমে ওঠে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, এই কারণেই এমনটা ঘটিয়েছেন ওই ব্যক্তি।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে মানসিক অবসাদ ও দেনার কারণে বিপ্লববাবু আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর স্ত্রী ও ছেলে সুস্থ হলে পুরো ঘটনাটা পরিষ্কার হবে।”
আরও খবর...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy