জামাই-বাহিনীই বটে! প্রায় একখানা আস্ত ফুটবল-টিম। শাশুড়ি মায়ের নিজের হাতে বোনা আসনে পর পর বসবে বড়, মেজ থেকে শুরু করে সবার ছোট আনকোরা কোলের জামাইটি। মর্যাদা অনুসারে মধ্যবর্তী চরিত্রগুলো হলেন, সেজ, ন, নতুন, রাঙা ও পুঁটে...।
শান্তিপুরী শাড়ির পাড়ের সুতোয় শাশুড়ি মা আদর করে এক একটি নকশা আঁকবেন, এক্সক্লুসিভ এক এক জনের জন্য। হয়তো বড় জামাইয়ের আসনে বোনা হল প্রজাপতি। আবার কোনটায় গোলাপ, কোনটায় পাখি ফুলের মধু খাচ্ছে। আসনে আবার লেখাও থাকে, ‘সুখে থাকো’, ভাল থাকো’ ইত্যাদি। কোলের জামাইটির আসনের লেখাটিই সব থেকে ভারিক্কি— ‘পতি পরম গুরু’! সব্বাইকে বসিয়ে খাওয়া তদারকি করতে উল্টো দিকে মেহগনি কাঠের পালিশ করা পিঁড়িতে বসবেন শাশুড়ি মা। হাতে তালপাতার পাখা। পুত্রপ্রতিম জামাইদের সামনেও তিনি ঘোমটা খুলবেন না।
সপ্তগ্রামের সুবর্ণবণিক, রাজেন মল্লিকদের পরিবার, কলকাতার মার্বেল প্যালেস এখনও এ ধারা বয়ে বেড়াচ্ছে! গৃহকর্তা হীরেন মল্লিকের এক কথা, সাবেক নিয়মের নড়চড় নেই। তবে এখন পরিবার ঢের ছোট। তাই জামাইয়ের সংখ্যাও কমেছে। সাধারণত, জষ্ঠি মাসে মঙ্গলচণ্ডীর পুজোর পরে ষষ্ঠীর দিনটাই জামাই দিবস। ষষ্ঠী বলে মেয়েদের কপালে নিরামিষই জুটত। তাই মাস না-ফুরোতেই আর একটা দিন, ভুরিভোজের জন্য সক্কলকে ফের ডাকা হত মল্লিকবাড়িতে। মল্লিকবাড়িতে অবশ্য মাংসের প্রবেশ নিষেধ। তবে তপসে ভাজা, পাকা পোনা, চিংড়ির মালাইকারি-পর্ব পেরিয়ে আম, লিচু, ছাড়ানো তালশাঁস ও সরের ক্ষীরের মাধুর্যে কিছুই ফাঁকি পড়ত না। তা ছাড়া, জামাইদের বসতে জরির কাজ করা লাল কার্পেট, পাত পেড়ে খেতে ইতালিয়ান মার্বেলের বাসন, হাত ধুতে পেতলের গাডু-গামলা বা লবঙ্গ-বেঁধা পান মুখে পুরতে রুপোর কৌটোর ডিটেলিংও নিখুঁত।