Advertisement
২০ মে ২০২৪

‘গুড বাই’ বলে সাগরের পথেই স্কুলের সৌমিত্র

ঝুপ করে আলো পড়ে আসা মেঘলা বিকেলে দেহটা যখন পাড়ার মোড়ে এসে পৌঁছল, ভেঙে পড়ল গোটা গ্রাম। মোটে তো ক্লাস টুয়েলভের ছেলে। ভাল ছবি আঁকত, পাড়ার পুজোয় সরস্বতী প্রতিমা গড়ত। সেই ছেলেটাই ডায়েরিতে ‘সাগরদার কাছে চললাম’ লিখে আগাছা মারা বিষ খেয়েছিল।

সৌমিত্র ঢালি

সৌমিত্র ঢালি

সুপ্রকাশ মণ্ডল
হরিণঘাটা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ০৩:৫২
Share: Save:

ঝুপ করে আলো পড়ে আসা মেঘলা বিকেলে দেহটা যখন পাড়ার মোড়ে এসে পৌঁছল, ভেঙে পড়ল গোটা গ্রাম।

মোটে তো ক্লাস টুয়েলভের ছেলে। ভাল ছবি আঁকত, পাড়ার পুজোয় সরস্বতী প্রতিমা গড়ত। সেই ছেলেটাই ডায়েরিতে ‘সাগরদার কাছে চললাম’ লিখে আগাছা মারা বিষ খেয়েছিল।

বছর ষোলোর ছেলেটার নাম সৌমিত্র ঢালি। সোমবার রাতে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে মারা যায় সে। ময়নাতদন্তের পরে মঙ্গলবার বিকেলে তার দেহ পৌঁছল নদিয়ার হরিণঘাটায় ফতেপুর গ্রামের বাড়িতে। ফতেপুর সাগরেরও গ্রাম। সেই সাগর মণ্ডল, পয়লা মে যাঁর দেহ দড়ির ফাঁসে ঝুলতে দেখা গিয়েছিল হরিণঘাটারই মোহনপুরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (আইসার) ক্যাম্পাসে একটি অব্যবহৃত শৌচাগারে। তাঁর ছেড়ে আসা ফতেপুর হাইস্কুলে বছর দুয়েকের ছোট এক ছাত্রের মনে তাতে এত আঘাত লেগেছে, কেউ বোঝেনি। যখন বুঝল, দেরি হয়ে গিয়েছে।

সাগরের মতো সৌমিত্রও ছাপোষা ঘরের ছেলে। বাবা চালকলে কাজ করেন, রয়েছে চাষবাসও। বন্ধুদের মনে পড়ছে, ক’দিন ধরেই গুমরোচ্ছিল সৌমিত্র। তার মা রূপালি বলেন, ‘‘চুপ হয়ে গিয়েছিল। খেতে চাইত না। ভেবেছিলাম, হয়তো শরীর খারাপ।’’

আরও পড়ুন:ভাল সন্তান হবে গ্রহতারা গুনে! নিশানা বাংলা

ব্যাপারটা চোখে পড়েছিল কাছের বন্ধু টোটন দাস আর বিধান সাউয়েরও। টোটন বলে, ‘‘শনিবার ওর সঙ্গে মজা করছিলাম। ও একটাও কথা বলেনি।’’ রবিবার রাতে টিউশন থেকে ফেরার সময়ে গলা থেকে চেন খুলে বিধানকে দেয় সৌমিত্র। বিধানের কথায়, ‘‘আমি নিতে চাইনি। ও খুব জোর করল। তখন কিছুই বুঝিনি।’’

রবিবার রাতে মা বারবার খেতে ডাকলেও সৌমিত্র আসেনি। বলেছিল, পরে খেয়ে নেবে। নিজের ঘরে বসে লেখালিখি করছিল। রাত আড়াইটা নাগাদ তার চিৎকারে ঘুম ভাঙে বাবা-মায়ের। তাঁরা উঠে দেখেন, উঠোনে শুয়ে ছটফট করছে সৌমিত্র। সে-ই বলে, ‘আমার মাথায় জল ঢালো!’ মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছিল। সঙ্গে-সঙ্গে তাকে হরিণঘাটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে জেএনএমে যাওয়ার পথেই সৌমিত্র জানায়, সে বিষ খেয়েছে।

সোমবার সৌমিত্রর বিছানায় মেলে তার ডায়েরি। তিন পাতা জোড়া চিঠি। সৌমিত্র লিখেছিল, ‘‘সাগরদার কথা খুব মনে পড়ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই সাগরদার কাছে চললাম...।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sagar Mondal Suicide IISER Soumitra Dhali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE