Advertisement
১৯ মে ২০২৪
অন্ধকারে স্বাস্থ্য ভবন

দু’বছর আগে কলকাতাতেই ডেঙ্গ ২!

হুগলির শ্রীরামপুরে এ বার ডেঙ্গির ডেঙ্গ ২ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটায় অবাক হয়েছিলেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা। কী ভাবে ওই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটল তা নিয়ে গবেষণাও শুরু করে দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১৪
Share: Save:

হুগলির শ্রীরামপুরে এ বার ডেঙ্গির ডেঙ্গ ২ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটায় অবাক হয়েছিলেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা। কী ভাবে ওই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটল তা নিয়ে গবেষণাও শুরু করে দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। কিন্তু স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন জানাল, কলকাতাতেই ২০১৪ সালে ডেঙ্গ ২ সংক্রমণ শুরু হয়েছে। শুধু ডেঙ্গ ২ নয়, দু’বছর আগে কলকাতাতেই মিলেছিল ডেঙ্গি ভাইরাসের আর একটি প্রজাতি ডেঙ্গ ৪-ও। গত বছরও কলকাতায় ডেঙ্গ ২ প্রজাতির ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে বলে ট্রপিক্যাল জানিয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের অভাবেই দু’বছর আগে উত্তরবঙ্গে এনসেফালাইটিস প্রায় মহামারির চেহারা নিয়েছিল। তা থেকেও যে স্বাস্থ্য দফতর শিক্ষা নেয়নি ডেঙ্গ ২ সংক্রমণ নিয়ে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং স্বাস্থ্য ভবনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই তা প্রমাণ করে দিল। এ রাজ্যে ডেঙ্গি ভাইরাসের কোনটা কোন প্রজাতির, তা পরীক্ষা করার দু’টি কেন্দ্র রয়েছে। দু’টিই কলকাতায়। একটি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস (নাইসেড) এবং অন্যটি রাজ্য সরকারের স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন। দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যভবনের কাছে নাইসেডের পাঠানো রিপোর্ট থাকলেও, তারা ট্রপিক্যালের পাঠানো দু’বছরের রিপোর্ট সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে।

ট্রপিক্যালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫ সালে শহরে যত লোকের ডেঙ্গি-সংক্রমণ হয়েছে তার সংখ্যাগরিষ্ঠের দেহেই ডেঙ্গ ২ মিলেছিল। সেই রিপোর্ট যথাসময় স্বাস্থ্য দফতরের ‘মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ’ বিভাগে পৌঁছেছিল। কিন্তু তার পরেও কেন স্বাস্থ্যভবন পুরো অন্ধকারে? মঙ্গলবারেও স্বাস্থ্যভবন জানিয়েছে, আগে যে কলকাতায় ডেঙ্গ ২ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল এমন কোনও খবর তাদের কাছে আসেনি।

স্বাস্থ্য দফতরের মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ দফতরের কর্তারাই জানাচ্ছেন, যখন কোনও এলাকায় ভাইরাসের নতুন কোনও প্রজাতি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, তখন স্বাস্থ্য দফতরের প্রথম কাজ হল, ওই এলাকার চিকিৎসা পরিষেবাকে ঢেলে সাজা। কারণ, নতুন ভাইরাসে রোগের জটিলতা বাড়বে, আক্রান্তের নতুন সমস্যা দেখা দেবে। কোন অঞ্চল থেকে ভাইরাসের নতুন প্রজাতিতে আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে, তা চিহ্নিত করে সেখান থেকে মশার নমুনা সংগ্রহ করা ও পরীক্ষা করাটাও আবশ্যিক। কিন্তু ট্রপিক্যাল ২০১৪ সাল থেকে কলকাতায় ডেঙ্গ ২ পাওয়া সত্ত্বেও এত দিন কিছুই করেনি স্বাস্থ্যভবন।

মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ বিভাগের কর্তারা ট্রপিক্যালের রিপোর্ট সম্পর্কে যতই অজ্ঞতা প্রকাশ করুন না কেন, কম্পিউটারের রেকর্ডই তথ্য পাঠানোর প্রমাণ দিচ্ছে। এ ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ফোন নামিয়ে রাখেন। উল্লেখ্য এই বিশ্বরঞ্জনবাবুই গত শুক্রবার জানিয়েছিলেন, শ্রীরামপুরে ২২ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের রক্ত পরীক্ষা করে ১৬ জনের দেহে ডেঙ্গ ২ ভাইরাস মিলেছে। দাবি করেছিলেন, এ রাজ্যে আগে কখনও এত বেশি মাত্রায় ডেঙ্গি ভাইরাসের সব চেয়ে খতরনাক এই প্রজাতি মেলেনি।

কী বলছে ট্রপিক্যালের রিপোর্ট? ২০১৪ সালে কলকাতার ২৭ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের জীবাণু পরীক্ষা করে ২০ জনের রক্তে ডেঙ্গ ২ মিলেছিল। গত বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে কলকাতার ৪০ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের জীবাণু পরীক্ষা করে ১৭ জনের রক্তে ডেঙ্গ ২ মিলেছে। শুধু তাই নয়, ২০১৪ সাল থেকে কলকাতায় এমন একাধিক রোগী মিলেছে যাদের দেহে ডেঙ্গ ২-এর সঙ্গে ডেঙ্গ ১ বা ডেঙ্গ ৩-এর ভাইরাস একসঙ্গে ছিল।

ট্রপিক্যালের ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২০১৫-য় কলকাতার যে ১৭ জনের দেহে ডেঙ্গ ২ মিলেছিল, প্রত্যেকের রোগের ফলো আপ শেষ পর্যন্ত তাঁরা করেছিলেন। কেউ মারা যাননি। তাই ডেঙ্গ ২ হলেই যে রোগী বাঁচার আশা কম, এমন মোটেই নয়। হয়তো সুস্থ হয়ে উঠতে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। ট্রপিক্যালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১২-য় কলকাতায় ২ জনের দেহে ডেঙ্গ ৪ ভাইরাসও মিলেছিল। তবু এন্টোমোলজিক্যাল স্টাডি হয়নি।

যাদের উপর কলকাতার ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের ভার সেই কলকাতা পুরসভাও কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের সুরে সুর মিলিয়ে জানিয়েছে, শহরে ডেঙ্গ ২-এর বাড়বাড়ন্ত নিয়ে তাদের কাছেও কোনও রিপোর্ট নেই। পুরসভার পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের কথায়, ‘‘শুনেছি অনেকে বলছেন, কলকাতায় নাকি এখন ডেঙ্গ-২ ভাইরাস অনেক পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের হাতে এমন কোনও রিপোর্ট আসেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Serampore Deng-2 Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE