E-Paper

রক্ষা পেল কাটা হাত, দেড় মাস পরে বাড়ি ফিরছেন যুবক

বর্ধমানের চাঁচাইয়ের বাসিন্দা, কৌশিক ঘোষ নামে ওই যুবক পেশায় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সারানোর মিস্ত্রি। গত ২১ মার্চ সকালে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি তেলের কারখানায় যন্ত্র (ঘানি) মেরামত করতে গিয়েছিলেন তিনি।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৫ ০৮:১০
কৌশিক ঘোষ।

কৌশিক ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

কনুইয়ের কিছুটা নীচ থেকে আড়াআড়ি ভাবে কেটে পড়ে গিয়েছিল হাত। কাটা হাত জোড়া লাগানো যায়, শুধু এটুকুই জানতেন বছর একচল্লিশের যুবক। তাই নিজের কাটা হাতটি ব্যাগে ভরে অন্যের বাইকে চেপে পৌঁছে গিয়েছিলেন স্থানীয় হাসপাতালে। সেখান থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে এসে প্রায় দেড় মাস চিকিৎসাধীন থেকে তিনটি অস্ত্রোপচারের পরে বাঁচল সেই হাত। মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে বাড়ি ফিরলেন ওই যুবক।

বর্ধমানের চাঁচাইয়ের বাসিন্দা, কৌশিক ঘোষ নামে ওই যুবক পেশায় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সারানোর মিস্ত্রি। গত ২১ মার্চ সকালে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি তেলের কারখানায় যন্ত্র (ঘানি) মেরামত করতে গিয়েছিলেন তিনি। কাজ করার সময়ে আচমকাই কৌশিকের ডান হাতে থাকা স্টিলের বালাটি কব্জির কাছে নেমে আসে। আর সেটি ওই যন্ত্রের একটি নাটবল্টুর সঙ্গে আটকে যাওয়ায় হাতটি যন্ত্রের ভিতরে ঢুকে যায়। তাতেই কনুইয়ের কিছুটা নীচ থেকে পুরো আড়াআড়ি ভাবে কেটে মাটিতে পড়ে যায় ডান হাতের বাকি অংশ।

এ দিন কৌশিক বলেন, ‘‘শুনেছিলাম, কাটা হাত জোড়া লাগানো যায়। তাই আর দেরি না
করে কাটা হাতটি ব্যাগে ভরে, কনুইয়ের নীচে কাপড় জড়িয়ে ওই কারখানার মালিকের বাইকে চেপে স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাই।’’ ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে
তড়িঘড়ি কৌশিককে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কৌশিকের ভাই শৌভিক জানান, বর্ধমান থেকে প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, সেখান থেকে বিকেল ৫টা নাগাদ এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে পৌঁছন তাঁরা। শৌভিকের কথায়, ‘‘কাটা হাত জোড়া লাগানো যায়, শুধু এটুকুই আমরা জানতাম। কিন্তু, কাটা হাতটি কী ভাবে সংরক্ষণ করে আনতে হয়, তা জানা ছিল না। তাই অস্ত্রোপচারে কিছুটা ঝুঁকি ছিল।’’

এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত ঘটনার ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে কাটা অঙ্গটির পুনঃস্থাপন করতে হয়। কিন্তু কৌশিক হাসপাতালে পৌঁছনই প্রায় ছ’ঘণ্টা পরে। হাতের কাটা অংশটিও যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করে আনা হয়নি। তাই পুনঃস্থাপনের আগে রোগীর পরিজনদের ঝুঁকির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২১ মার্চ রাত সাড়ে ৮টা থেকে ট্রমা কেয়ারে কৌশিকের কাটা হাত জোড়া লাগানোর অস্ত্রোপচার শুরু হয়। প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক তীবর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কল্যাণ দাস, শুভম কেজরিওয়াল, রাজীব কুমার, করণ খাণ্ডেলওয়াল, সুশোভন সাহা, অ্যানাস্থেশিয়ার চিকিৎসক সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁদের দল প্রায় ন’ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে হাতটি জোড়া লাগান। কল্যাণের কথায়, ‘‘অস্ত্রোপচারে ধমনী, শিরা, স্নায়ু, হাড় সব কিছু জোড়া লাগানো হয়। এর পরে সাত দিন আইটিইউ-তে চিকিৎসাধীন থাকার সময়ে আচমকাই মারাত্মক সংক্রমণে হাতের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। তবে, কড়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।’’ সংক্রমণ কমার পরে কৌশিককে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়। কনুইয়ের নীচের যে অংশ থেকে হাতটি কেটে পড়ে গিয়েছিল, সেখানে বেশ খানিকটা জায়গায় টিসু ও মাংসপেশি বাদ চলে গিয়েছিল। ১৪ এপ্রিল বাঁ পায়ের ঊরু থেকে টিসু, মাংস, চামড়া নিয়ে প্রায় ছ’ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়। এর পরে বেশ কিছু দিন আইসিইউ-তে থাকতে হয়েছিল কৌশিককে।

কল্যাণ বলেন, ‘‘হাতটিতে ধীরে ধীরে অনুভূতি, কার্যক্ষমতা ফিরবে। তার জন্য আগামী দিনে ছোটখাটো কয়েকটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে। তবে, জোড়া লাগানোর পরে রক্ত সঞ্চালন শুরু হয়ে গিয়েছে, অর্থাৎ হাতটি বেঁচে গিয়েছে বলা যায়।’’ সেই জন্য প্রায় দেড় মাস পরে এ দিন বাড়ি যাওয়ার সময়ে কৌশিক বলেন, ‘‘ডাক্তারেরা সব সময় মনে জোর দিতেন। আমারও বিশ্বাস ছিল, হাত আবার জোড়া লাগবে। দেরি হলেও এই হাতেই আবারও মেশিন সারাব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSKM Accident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy