Advertisement
E-Paper

নাগরিক পঞ্জি নিয়ে উৎকণ্ঠা, মৃত্যু কি ভিটে ছাড়ার ভয়ে!

মুর্শিদাবাদের শিবনগর গ্রামে মিলন মণ্ডলের (২৭) পরিবারের দাবি, নাগরিক পঞ্জি নিয়ে উৎকণ্ঠায় ভুগে ভুগে ‘ভয়’ ধরে গিয়েছিল তাঁর। তার জেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস 

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৩২
মিলন মণ্ডল

মিলন মণ্ডল

চালু হয়নি এখনও, তবে নাগরিক পঞ্জির ছায়ায় বেশ কিছু দিন ধরেই কুঁকড়ে রয়েছে সীমান্তের গ্রামগুলি। পূর্বপুরুষের নথি কিংবা ভিটেমাটির দলিল জোগাড় করতে স্থানীয় ব্লক অফিস আর ভূমিরাজস্ব দফতরে কয়েক দিন ধরেই আতঙ্কিত মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সতেরো দিন ধরে সেখানেই মাথা কুটে সেই সব নথির হদিস না-পেয়ে বাড়ি ফিরে আত্মঘাতী হয়েছেন এক যুবক।

মুর্শিদাবাদের শিবনগর গ্রামে মিলন মণ্ডলের (২৭) পরিবারের দাবি, নাগরিক পঞ্জি নিয়ে উৎকণ্ঠায় ভুগে ভুগে ‘ভয়’ ধরে গিয়েছিল তাঁর। তার জেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। নাগরিক পঞ্জি নিয়ে উদ্বেগের জেরে রাজ্যে কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন, এমন শোনা যায়নি আগে।

মিলনের বাবা দিস্তার মণ্ডল বলছেন, ‘‘কেরলে কাজ করত ছেলে। কোনও সমস্যা ছিল না। তাজা ছেলে ঘরে ফিরেই ভোটার কার্ড আর আধার কার্ডে নামের ভুল বানান আর ঠিকানার গন্ডগোল দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিল। তার পরে সপ্তাহ দুয়েক ধরে সারা দিন বিডিও অফিসে তদ্বির করে বেড়াত। বলত, ‘এগুলো সংশোধন করাতে না-পারলে ভিটে ছাড়তে হবে আব্বা!’’ তাঁর দাবি, টানা সতেরো দিন ধরে বিভিন্ন সরকারি দফতরে ছোটাছুটি করেও সে-সব ভুল সংশোধন করাতে না-পেরে শেষ দিকে কেমন ‘পাগলের মতো’ হয়ে উঠেছিল। গত দু’দিন ধরে নাওয়া-খাওয়া ভুলে বন্ধ ঘরে বসে থাকত।

রবিবার রাতে বাড়ির সবাই শুয়ে পড়লে ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে শাড়ির ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়েন মিলন। স্ত্রী রেণুকা বলছেন, ‘‘সারাটা বিকেল চুপচাপ শুয়ে ছিল বিছানায়। খেল না। খালি বিড়বিড় করছিল, ‘ভিটেমাটি-পরিবার সব উচ্ছেদ হবে গো!’’ রাতে তাঁর মা আদরা বিবি শৌচাগারে যাওয়ার সময় ছেলের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান।

ভগীরথপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আতিকুর রহমান বলছেন, ‘‘নাগরিক পঞ্জি নিয়ে মানুষের মনে ভয়াবহ আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ওই যুবকও হয়তো তীব্র অ্যাংজ়াইটি ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন। তারই পরিণতিতে হয়তো এমন কাণ্ড করেছেন।’’

অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরেও মিলনের দেহ অবশ্য ময়না-তদন্ত করা হয়নি। গ্রামের মাতব্বরেরা সালিশি করে সিদ্ধান্ত নেন, ‘পুলিশি ঝামেলা’য় না-গিয়ে কবর দেওয়া হবে।

স্থানীয় ওই পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের জুলেখা বিবির দাবি, ‘‘শুধু মিলন নয়, গ্রামের অধিকাংশ মানুষই নাগরিক পঞ্জির আতঙ্কে ভুগছেন। তবে আত্মঘাতী হলেও ময়না-তদন্ত করা হয়নি মিলনের। গ্রামের মাতব্বরেরাই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দেহটি কবর দেওয়া হয়েছে।’’

NRC Assam Domkal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy