গত পাঁচ বছরে ‘আপ’ কি ‘আম আদমি’র পার্টি ছিল!
জনমত যাচাইয়ের পর্বে এই সংশয়ই তৈরি হয়েছিল দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টি বা আপ-এর নির্বাচনী উপদেষ্টা সংস্থার। তাদের মূল্যায়নে ‘নেতা-মন্ত্রীদের ‘শিসমহল’ই ক্ষমতাচ্যুত করেছে এক সময়ে দুর্নীতি-বিরোধিতার প্রতীক অরবিন্দকে’।
এ রাজ্যে যে সংস্থা তৃণমূল কংগ্রেসের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে, গত ডিসেম্বরে আপের জন্য কাজ করতে গিয়ে এমনই উপলব্ধি হয়েছিল তাদের। এই অবস্থায় চিকিৎসা ও ভাতার দু’টি বড় সুবিধা ঘোষণার পরামর্শ দিয়েও পরিস্থিতি ঘোরাতে পারেনি তারা। উপদেষ্টা সংস্থার এক শীর্ষস্থানীয় কর্তার কথায়, ‘‘আমরা তিন মাস পুরোপুরি কাজ করেছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কখনওই পরিস্থিতি ইতিবাচক বলে মনে হয়নি।’’ কেন? সংস্থার দাবি, জনস্বার্থ সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয়ে ভোটারের কাছে সরাসরি সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আপের ভাবমূর্তি সম্পর্কে জনমানসে চূড়ান্ত নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েই ছিল।
বাংলায় ২০১৯ সালের পর তৃণমূলের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছে সংস্থাটি। তিন মাসে একাধিক সমীক্ষায় আপের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত প্রতিষ্ঠান- বিরোধিতা পেয়েছে তারা। সংস্থার দাবি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বাসভবন ‘শিসমহল’ একটা বড় অংশকে প্রভাবিত করেছিল ঠিকই। সেই সঙ্গে তাঁর পারিষদদের সম্পর্কেও মানুষের ধারণায় বড় বদল ধরা পড়েছে তাদের সমীক্ষায়। তাঁদের জীবনযাত্রার এই ‘বদল’ নিয়ে বিজেপি ছাড়াও চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক ছিল কংগ্রেসও। উপদেষ্টা সংস্থার এক প্রতিনিধির কথায়, ‘‘এই পরিবেশ সম্পর্কে আমরা বারবারই আপের শীর্ষ নেতৃত্বকে অবহিত করেছি। তবে যে হেতু প্রচার বা অন্যান্য কৌশল নির্ধারণে আমাদের তেমন কোনও ভূমিকা ছিল না, তাই সেই সম্পর্কে আমাদের কিছু বলা উচিত নয়।’’ কংগ্রেসের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে কতটা ক্ষতি হতে পারে, কেজরীওয়ালকে তা-ও আগেই জানিয়েছিলেন তারা।
দিল্লির মতো আঞ্চলিক দল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গেও এই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে তৃণমূল? এখনই এই প্রশ্নের উত্তর না দিলেও সংস্থার ব্যাখ্যা, এখানেও ২০২৪ সালে তীব্র প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা ছিল। কিন্তু শাসকের মুখ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে তা কাটিয়েছেন, দিল্লিতে আপ তা পারেনি। সংস্থার ওই কর্তার সংযোজন, ‘‘বিজেপির মতো শক্তির সামনে দাঁড়ানোর জন্য ওখানে এক জন মমতা ছিলেন না।’’ তাঁর মতে, আপ পুরোপুরি একটা প্রশাসক-পরিচালক দল হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক কোনও কর্মসূচি ছিল না দলের। এবং বিজেপির মতো দলের সামনে সংগঠনহীন ও জনসংযোগহীন দলের যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে।
সূত্রের খবর, দিল্লির ভোটের প্রতি পর্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে উপদেষ্টা সংস্থার কর্তাদের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)