Advertisement
E-Paper

চোরা কুয়াশাতেই কি দুর্ঘটনা, প্রশ্ন

পাহাড়ে ‘ফগ পকেট’-কে ‘চোরা কুয়াশা’ বলে ডাকা হয়। সেই ‘ফগ পকেটে’-এর কবলে ঢুকেই সিকিমের ঋষিতে পর্যটকদের গাড়ি খাদে পড়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৫৩
দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ।

দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ।

পাহাড়ে ‘ফগ পকেট’-কে ‘চোরা কুয়াশা’ বলে ডাকা হয়। সেই ‘ফগ পকেটে’-এর কবলে ঢুকেই সিকিমের ঋষিতে পর্যটকদের গাড়ি খাদে পড়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিম শাখার অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেছেন, ‘‘যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই এলাকায় বছরের নানা সময়ে ‘ফগ পকেট’ তৈরি হয়ে থাকে। ছোট্ট একটা জায়গায় আচমকা কিছু ক্ষণের জন্য ঘন কুয়াশা তৈরি হয়। সে সময়ে দিগভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এখানে সেই সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।’’

সিকিম পুলিশের পশ্চিম মণ্ডলের এসপি তেনজিং লোডে লেপচা জানান, তাঁরা ‘ফগ পকেট’-এর বিষয়টি নিয়েও খোঁজ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘চালককে জেরা করলে অনেক কিছু স্পষ্ট হবে।’’ সিকিম পুলিশ সূত্রের খবর, আহত চালক অসীম রাইও জ্ঞান ফেরার পরে কয়েকবার কুয়াশার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

অথচ ঘটনার দিন মানে সোমবার সিকিমের কোথাও সারাদিনে একফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও যথেষ্ট কম ছিল। তা হলে সন্ধ্যায় সিকিমের ঋষিতে কুয়াশা তৈরি হবে কোথা থেকে! তা হতে গেলে বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ বেশি হতেই হবে। তা ছাড়া বর্ষাকালে ঘন কুয়াশা পাহাড়ে বেশি হয়। শীতের সময়ে সিকিমের পথেঘাটে তেমন ঘন কুয়াশা পাহাড়ে হয় না বলে আবহাওয়া মন্ত্রকের অধিকর্তার দাবি।

এর পরেই ‘ফগ পকেট’-এর বিষয়টি সামনে এসেছে। গোপীনাথ জানান, দার্জিলিং, সিকিমের বেশ কয়েকটি উপত্যকার মতো এলাকার রাস্তায় সারা বছরই অল্পবিস্তর চোরা কুয়াশার দেখা মেলে। কারণ, সমতলের গরম বাতাস পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে ওঠার সময়ে ধীরে ধীরে শীতল হয়। পাহাড়ি কিছু উপত্যকায় সেই বাতাস শীতল হয়ে কিছু ক্ষণের জন্য ঘন কুয়াশাও তৈরি করে। সেই ‘ফগ পকেট’কেই স্থানীয়রা চোরা কুয়াশা বলেন। সিকিমের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া মন্ত্রকের অধিকর্তা বলেন, ‘‘ওই ফগ পকেটের স্থায়িত্ব কিন্তু কম। জোরে বাতাস বইলেও সরে যায়। জোরে গাড়ি গেলেও স্থানচ্যূত হয়। ফলে, আগের গাড়ি ফগ পকেটে পড়েছে, পরের গাড়ি কুয়াশা দেখেনি, এমনও হতে পারে।’’

শিলিগুড়ি-দার্জিলিং তিন দশক ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন রাম গুপ্তা। তিনি বলেন, ‘‘বাতাসিয়া লুপ, তাকদা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে দার্জিলিঙের দিকে, সোনাদায় মানেভঞ্জনের রাস্তায় সারা বছর চোরা কুয়াশা থাকে। সিকিমের পেলিং, ঋষি, ছাঙ্গুর কাছে ১৪ মাইলেও ফগ পকেট আছে। ও সব জায়গায় বেশি সাবধানে আস্তে চালাতে হয়।’’ প্রসঙ্গত, বছর তিনেক আগে সোনাদায় রাষ্ট্রপতির কনভয়ের একটি গাড়ি কুয়াশার দিক ভুল করে খাদে নেমে গিয়েছিল।

এই অবস্থায় সিকিম তো বটেই, দার্জিলিঙেও যে সব এলাকায় ওই ধরনের কুয়াশা সৃষ্টি হয়, সেখানে একেবারেই ধীরগতিতে ‘ফগ-লাইট’ জ্বালিয়ে চালানোর পরামশ দিয়েছে পুলিশ। ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবাশিস মৈত্র বলেন, ‘‘ফগ পকেট ব্যাপারটা মারাত্মক। আমিও দু-একবার কালিম্পং থেকে তাকদা যেতে পড়েছি। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে দেখতে হবে।’’

Sikkim Car Accident Fog
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy