Advertisement
০১ মে ২০২৪

বাসের জানলায় বসে কানে ফোন, হাত গেল তরুণীর

বাসের জানলায় কনুই। ওই হাতেই ফোন ধরা ছিল কানে। কিছুক্ষণের অসতর্কতা। এক ধাক্কায় কনুই থেকেই ছিটকে বেরিয়ে গেল হাত! ভিড় রাস্তায়, বাসের রেষারেষিতে জানলায় ঝোলানো হাত খোওয়া যাওয়া আগে দেখেছে কলকাতা। এ বার সাক্ষী হল বর্ধমানও। বৃহস্পতিবার বর্ধমান-আরামবাগ রুটের বাসে বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজে যাচ্ছিলেন বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শ্রাবণী নায়েক।

কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে শ্রাবণী নায়েককে। — নিজস্ব চিত্র।

কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে শ্রাবণী নায়েককে। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০৩:৪৩
Share: Save:

বাসের জানলায় কনুই। ওই হাতেই ফোন ধরা ছিল কানে। কিছুক্ষণের অসতর্কতা। এক ধাক্কায় কনুই থেকেই ছিটকে বেরিয়ে গেল হাত!

ভিড় রাস্তায়, বাসের রেষারেষিতে জানলায় ঝোলানো হাত খোওয়া যাওয়া আগে দেখেছে কলকাতা। এ বার সাক্ষী হল বর্ধমানও। বৃহস্পতিবার বর্ধমান-আরামবাগ রুটের বাসে বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজে যাচ্ছিলেন বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শ্রাবণী নায়েক। বাসের জানলা দিয়ে বাইরে ডান হাতের কনুই বের করে ফোনে গল্পও করছিলেন। বর্ধমান শহরের সেহারাবাজারের কাছে উল্টো দিক আসা ট্রাকের ধাক্কায় কনুইয়ের নীচ থেকে কেটে যায় তাঁর হাত। আর্তনাদ শুনে পিছনে বসা এক যুবক মেয়েটির মাথা ধরে বাসের ভিতরে ঠেলে দেন। বাঁচলেও ডান হাত বাদ যায় মেয়েটির।

বছর কুড়ির শ্রাবণী প্রতিদিনই মাধবডিহি থানার একলক্ষ্মী-নরোত্তমপুরের বাড়ি থেকে বাসে কলেজে যান। বাসের অন্য যাত্রীরা জানান, ছাত্রীটির কাটা হাত ট্রাকের সঙ্গে আটকে কিছুটা দূরে গিয়ে পড়ে। বাস থামিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই কিছু যুবক ও কয়েক জন শ্রাবণীকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কাটা হাতটিও নিয়ে যাওয়া হয়। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই কলকাতার এসএসকেএমে রেফার করা হয় তাঁকে। মেয়েকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার ফাঁকে শ্রাবণীর বাবা, পেশায় আলু ব্যবসায়ী সত্যনারায়ণ নায়েক বলেন, ‘‘রোজই তো এ ভাবে আসে। এ বার কী হবে জানি না।’’

শ্রাবণীকে বাসের ভিতরে ঠেলে দিয়েছিলেন যিনি, সেই ইমানুল ইসলামও জরুরি বিভাগে ভর্তি। কোনও রকমে বললেন, ‘‘আমার আগের সিটে বসে মোবাইলে কথা বলছিলেন ওই তরুণী। হাতের কিছুটা বাসের বাইরে ছিল। হঠাৎ চিৎকারে কিছু বোঝার আগেই দেখি ওর ডান হাতের একাংশ শরীর থেকে ছিঁড়ে ট্রাকে আটকে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বাসের জানলার বাইরে থাকা মাথাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকিয়ে দিই। আমারও হাত ভেঙেছে তাতে।’’

সেহারাবাজারের ওই সরু রাস্তায় যে কোনও দিনই এমন ঘটনা ঘটতে পারত বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। মনোজ দত্ত, আলতাফ হোসেনরা বলেন, ‘‘বর্ধমান–আরামবাগ রুটের এই অংশ খুবই সঙ্কীর্ণ। বাস-ট্রাক গা ঘেঁষেই যাতায়াত করে। তবে হাত বের না করে রাখলে হয়তো এমন হতো না।’’ বিবেকানন্দ কলেজের অধ্যক্ষ শিবপ্রসাদ রুদ্রের কথায়, ‘‘খারাপ লাগছে। কিন্তু এটাও ঠিক, মোবাইল কানে ছেলেমেয়েরা যে ভাবে রাস্তা-ঘাটে, বাসে-ট্রেনে কথা বলে, তাতে যে কোনও দিন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’ এবং ঘটছেও। কানে গোঁজা বিনোদনের জন্য প্রায় দিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। কখনও রেললাইন পেরোতে গিয়ে, কখনও রাস্তা পার হওয়ার সময় মোবাইলে মশগুল থাকার মাসুল প্রাণের বিনিময়ে দিতে হচ্ছে বহু তরুণ-তরুণীকে।

২০১০-এ কলকাতার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে ট্রাকের ধাক্কায় ডান হাত কাটা পড়ে বাসের যাত্রী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের। ২০০৯ সালের অগস্টে ডাফরিন রো়ডে দু’টি বাসের রেষারেষিতে এক মহিলা-সহ তিন বাস-যাত্রীর ডান হাত কাটা পড়েছিল। এ দিনের ঘটনার পরে বিপদ বুঝেছেন শ্রাবণীর সহপাঠীরাও। সৌরদীপ ঘোষ, পম্পা খাতুন, মৈনাক ঘোষেরা তাই বলেন, ‘‘আমরাও এ রকম ভুল আকছার করি। এ বার সচেতন হতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mobile hand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE