Advertisement
E-Paper

দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাইকে পিছনে ফেলে দূষণ দৌড়ে এগিয়ে কলকাতা!

দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাইকেও টপকে গেল কলকাতা! তবে শিল্প, বাণিজ্য বা উন্নয়নে নয়, বায়ুদূষণে। এই চার শহরেই বায়ুদূষণ পরিমাপ করে মার্কিন দূতাবাস। সেই সমীক্ষাতেই ধরা পড়েছে এই তথ্য।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫৬
অবাধ: এ ভাবেই কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে শহর। বাড়ছে দূষণ। ধর্মতলায়। —নিজস্ব চিত্র।

অবাধ: এ ভাবেই কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে শহর। বাড়ছে দূষণ। ধর্মতলায়। —নিজস্ব চিত্র।

দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাইকেও টপকে গেল কলকাতা! তবে শিল্প, বাণিজ্য বা উন্নয়নে নয়, বায়ুদূষণে। এই চার শহরেই বায়ুদূষণ পরিমাপ করে মার্কিন দূতাবাস। সেই সমীক্ষাতেই ধরা পড়েছে এই তথ্য। মার্কিন দূতাবাসের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার বিকেল তিনটে নাগাদ কলকাতার বায়ুদূষণের সূচক ছিল ১৯৪। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। বাকি তিন মহানগরীর সূচকও অস্বাস্থ্যকর। তবে কলকাতার তুলনায় তাদের দূষণের পরিমাণ কম।

বায়ুদূষণের নিরিখে দিল্লির অবস্থা বহুচর্চিত। প্রতি বছরই অক্টোবর-নভেম্বরে সেখানে দূষণের জেরে জনজীবন কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পরিবেশবিদদের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, কলকাতার পরিস্থিতিও এমন হয়ে উঠতে পারে। বস্তুত, কলকাতা যে বায়ুদূষণের নিরিখে দেশের রাজধানী শহরের থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই, তা কয়েক বছর আগেই জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। দূষণের এই বাড়বাড়ন্ত নাগরিক জীবনে নানা সমস্যা ডেকে আনতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

সোমবারই পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই) একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছে, দেশে যত মানুষের অকালমৃত্যু (প্রিম্যাচিওর ডেথ) ঘটছে, তার ৩০ শতাংশই বায়ুদূষণের কারণে। ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, এ দেশে দু’কোটিরও বেশি সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) এবং প্রায় সাড়ে তিন কোটি হাঁপানির রোগী রয়েছেন। এর পিছনেও ওই মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি মাটির মানুষ, আগে চিনতে পারিনি, ভোলবদল মমতার

পরিবেশবিদদের মতে, এত দিন পর্যন্ত ডিজেল গাড়ির ধোঁয়াকেই মূলত বায়ুদূষণের জন্য দায়ী করা হত। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, ডিজেলের ধোঁয়া তো আছেই, পাশাপাশি চুপিসারে বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্মাণ সংক্রান্ত দূষণ। শহর এবং লাগোয়া এলাকায় প্রচুর নতুন নির্মাণ হচ্ছে। নির্মাণস্থলে যে পরিবেশবিধি মানা প্রয়োজন, তা কার্যকর না হওয়ার ফলে সূক্ষ্ম বালি, সিমেন্ট ও কংক্রিটের ধুলো বাতাসে মিশে দূষণ বাড়াচ্ছে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার মতে, শহরতলিতে ভাঙাচোরা রাস্তা ঠিকমতো সারানো হচ্ছে না। রাস্তায় বালি, পাথরকুচি ডাঁই করে রাখা হচ্ছে। শীতের শুকনো আবহাওয়ায় সেই ধুলো ক্রমাগত বাতাসে মিশছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন ভাগাড়ে যে ভাবে আগুন লাগছে, তার ধোঁয়াও বাতাসকে দূষিত করে তুলছে। পরিবেশ দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, এ শহর সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়। ফলে বছরের কয়েক মাস বাতাসের দূষণ কম থাকে। তা না হলে কলকাতার অবস্থা আরও খারাপ হত।

এই বিপদ সামলাতে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো কি আছে? পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর মতে, ‘‘শহরে বায়ুদূষণ মাপার পরিকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। বাতাসে ঠিক কোন কোন ধরনের বিষাক্ত কণা রয়েছে, তার বিশ্লেষণ প্রয়োজন। তার ফলে বোঝা যাবে, কোন জিনিস থেকে কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে।’’ কিন্তু সেই তথ্য পরিবেশ দফতর বা পর্ষদের হাতে নেই। তার ফলে ঠিক কোন পথে এগোলে দূষণ ঠেকানো যাবে, বোঝা যাচ্ছে না। এই তথ্যের ঘাটতির কথা মেনে নিচ্ছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানান, এই ধরনের সমীক্ষার জন্য নিরি-কে বলা হয়েছে। তাঁর দাবি, কলকাতার বায়ুদূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনেই তাঁরা চলবেন। এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপও করা হচ্ছে।

প্রশ্ন উঠেছে, কবে এই কাজ পুরোপুরি করে উঠবে পর্ষদ? বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, পর্ষদ নির্দেশ দিলেও প্রশাসন তা বাস্তবায়িত করে না। সে ক্ষেত্রে পর্ষদ শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবেই রয়ে যায়। বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে তেমনটা হলে সুরাহা হবে না। তা হলে কি বিষবায়ুই বাঙালির ভবিতব্য?

প্রশ্নটা রয়েই যাচ্ছে।

Air Pollution Kolkata Survey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy